শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্যায় দুর্ভোগে উত্তরের লাখো মানুষ

প্রতিদিন ডেস্ক

বন্যায় দুর্ভোগে উত্তরের লাখো মানুষ

ধরলা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় কুড়িগ্রামে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন বানভাসী মানুষ। আর ঠাকুরগাঁওয়ে পানির স্রোতে ভেঙে গেছে রাস্তা। এ ছাড়া গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট, করতোয়া ও যমুনার পানি কমেছে। অপরদিকে, হঠাৎ বেড়েছে তিস্তার পানি। সিরাজগঞ্জ ও জামালপুরে বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। এর মধ্যে জামালপুরে বন্যার পানিতে ডুবে দুই শিশু ও বিদ্যুৎস্পৃষ্টে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজংয়ে পদ্মার তীব্র ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ ফেলায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনাকে ঘর পুড়ে যাওয়ার সময় আলু পোড়ার সেই প্রবাদ বাক্যের মিল খুঁজছেন এলাকাবাসী। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে এখনো ব্রহ্মপুত্র ও ধরলা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। দুই দিন ধরে নদ-নদীর পানি কিছুটা কমলেও গতকাল নতুন করে ধরলা নদীর পানি ২৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, দুই এক দিন পানি বাড়ার পর আবার কমতে থাকবে। সে কারণে বন্যা পরিস্থিতি অবনতি ঘটতে পারে। নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ধরলা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার এবং দুধকুমর নদীর পানি নুনখাওয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। আগামী ৮ জুলাই থেকে পানি অস্বাভাবিক বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান তিনি। দিন-রাত অবিরাম বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সবগুলো নদ-নদীর পানি অনেক বেড়েছে। অবিরাম বর্ষণের কারণে সড়ক ও বাঁধের ওপর আশ্রিত মানুষের দুর্ভোগ বেড়েছে।

জামালপুর : জামালপুরে পৃথক স্থানে বন্যার পানিতে ডুবে শিশুসহ দুজন এবং বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার সকালে মাদারগঞ্জে পাট কাটতে গিয়ে বন্যার পানিতে ডুবে কমল মিয়া (৫০) এবং বকশীগঞ্জ উপজেলায় বাড়ির পাশে খেলার সময় বন্যার পানিতে পড়ে জিসান (৩) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। অপরদিকে দুপুরে মাদারগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া সেচ পাম্পের বিদ্যুতের তার খুলতে গিয়ে এখলাছ (২৫) ও আরিফ (২৪) নামে দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মাদারগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আমিনুল ইসলাম জানান, শুক্রবার ভোরে মাদারগঞ্জের জোড়খালি ইউনিয়নের বেড়াবেতাগা গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে কমল মিয়া বাড়ির পাশে পাট কাটতে যান। এ সময় বন্যার পানির স্রোতে ভেসে গিয়ে কমল মিয়া নিখোঁজ হন। পরে সকাল ১০টার দিকে পাট খেতের পাশে তার মৃতদেহ ভেসে ওঠে। অন্যদিকে একইদিন দুপুরে উপজেলার আমতলী এলাকায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া সেচ পাম্পের বিদ্যুতের লাইন খুলতে গিয়ে ফকির আলীর ছেলে এখলাছ ও মৃত বদি মিয়ার ছেলে আরিফ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়। এ সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে মাদারগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। অপরদিকে বকশীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ স ম জামসেদ খন্দকার জানান, শুক্রবার সকালে বকশীগঞ্জের কাগমারীপাড়া এলাকার ইরান মিয়ার তিন বছর বয়সী শিশু জিসান বাড়ির পাশে খেলা করছিল। এক পর্যায়ে সে বন্যার পানিতে পড়ে যায়। পরে শিশু জিসানের মৃতদেহ পানিতে ভেসে ওঠে।

ঠাকুরগাঁও : কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিপাতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বড়গাঁও ইউনিয়নের জালালী মৌজায় পানির স্রোতে ভেঙে যায় পাকা রাস্তা। এতে চলাচল করতে চরম অসুবিধায় পড়েছেন জালালী ও আরাজী মৌজার পাঁচ হাজার মানুষ। সরেজমিন দেখা যায়, সেখানে একটি কালভাট ছিল কিন্তু গত দুই বছর আগে স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বাড়ি নির্মাণ করায় কালভাটটি বন্ধ হয়ে যায়। কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টিপাতে ওই এলাকায় বন্যার সৃষ্টি হয়। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পানি পাকা রাস্তার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বিপরীত পাশের চলাচলের রাস্তাটি পানির স্রোতে ভেঙে যায়। গাইবান্ধা : টানা চার দিন গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র, ঘাঘট ও করতোয়া নদীর পানি কমতে থাকে। কিন্তু গতকাল তিস্তার পানি আবার বাড়তে শুরু করেছে। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, ২৪ ঘণ্টায় ব্রহ্মপুত্রের পানি ৭ সেন্টিমিটার ও ঘাঘটের পানি ৬ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে ব্রহ্মপুত্র এখনো বিপৎসীমার ৬৬ সেন্টিমিটার ও ঘাঘট বিপৎসীমার ৩১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। অন্যদিকে করতোয়ার পানি ১০ সেন্টিমিটার কমেছে আর তিস্তার পানি স্থিতাবস্থা থেকে গতকাল হঠাৎ ১৮ সেন্টিমিটার কমেছে। তবে করতোয়া ও তিস্তা এখনো বিপৎসীমার অনেকটা নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়া : বগুড়ায় বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত পানি কমেছে ৭ সেন্টিমিটার। পানি কমলেও বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান জানান, শুক্রবার বিকালে পানি কমে বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি সামান্য কমলেও সিরাজগঞ্জ জেলায় বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। বন্যায় এখনো ২১৬টি গ্রামের দেড় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। মানবেতর জীবনযাপন করলেও এখনো এসব পরিবারের কাছে কোনো সহায়তাই পৌঁছেনি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, ধান, পাট, কাউন, বাদামসহ বিভিন্ন শাকসবজি নষ্ট হয়ে গেছে। মুন্সীগঞ্জ : উজানের পানির চাপে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী ও লৌহজং উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেই সঙ্গে পদ্মার ছোবলে পদ্মাতীরে দিঘিরপাড় কামার খাড়ায় পদ্মার তীব্র ভাঙন শুরু রয়েছে। লৌহজংয়ের মেদিনীমন্ডল ইউনিয়নের কান্দিপাড়া ও যশলদিয়া গ্রামের কয়েকশ বাড়ি ঘরে পানি উঠে পড়েছে। এতে পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার মানুষ। এ দিকে উজানের পানির তোড়ে প্রমত্ত পদ্মার ছোবলে কয়েকদিনের ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে শত শত বসতবাড়ি ও কৃষি জমি। ভাঙন ঠেকাতে জরুরি ভিত্তিতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। তবে ব্যাগে নিয়ম অনুযায়ী বালু ভরা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। এ ছাড়াও সরকারি কাজ হলেও স্থানীয়দের কাছ থেকে টাকা তোলার অভিযোগ উঠেছে এ কাজে নিয়োজিতদের বিরুদ্ধে। ভাঙন ঠেকাতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ ফেলা কর্মসূচিতে স্থানীয়দের কাছ থেকে দাবিকৃত টাকা না দেওয়ায় হাইয়ারপাড়ে ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে না এমন অভিযোগও পাওয়া গেছে। স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তরা বলছেন চোখের সামনে নদীতে চলে যাচ্ছে ফসলি জমি ও বসতভিটা। মাত্র কয়েক দিনে একে একে বসতবাড়ি ও কৃষি জমি পদ্মার করাল গ্রাসে চলে যাচ্ছে। টঙ্গিবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোসাম্মদ হাসিনা আক্তার বলেন, কেউ যদি ভাঙনকবলিতদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বশেষ খবর