শনিবার, ৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি-রপ্তানি ও জাহাজ আগমন বেড়েছে

প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৯ শতাংশ

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

করোনার কারণে দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে ধাক্কা লাগলেও চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আগমন, কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে। করোনার ধাক্কা সামলিয়ে বন্দর পুনরায় সচল হতে শুরু করায় জাহাজ আগমনের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমলেও করোনা সংকটের মধ্যেই পণ্য হ্যান্ডলিং ও জাহাজের সংখ্যা বাড়ায় সন্তুষ্ট বন্দর কর্তৃপক্ষ।

তবে অর্থবছরের শেষ তিন মাসে আমদানি-রপ্তানি কমার কারণে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধি কাক্সিক্ষত মাত্রায় পৌঁছেনি। সদ্যসমাপ্ত অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দরে প্রবৃদ্ধির হার ২ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ হার ছিল ৩ দশমিক ৮ শতাংশ। এ হিসাবে প্রবৃদ্ধির হার প্রায় ১ শতাংশ কমেছে। ২০১৮-২৯ অর্থবছরের তুলনায় বিদায়ী অর্থবছরে ৬৫টি জাহাজ বেশি এসেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৬৯৯টি জাহাজের বিপরীতে বিদায়ী অর্থবছরে এসেছে ৩ হাজার ৭৬৪টি। চট্টগ্রাম বন্দরসূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী অর্থবছরের এপ্রিলে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি লাগে আমদানি-রপ্তানি খাতে। তবে ধীরে ধীরে আমদানি-রপ্তানি দুটোই বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। চট্টগ্রাম বন্দরে গত এপ্রিলে বাল্ক ও ইনল্যান্ড কার্গো পণ্য আমদানি হয়েছে ৫৭ লাখ ৬৫ হাজার ৮০৯ মেট্রিক টন। রপ্তানি হয়েছে মাত্র ১০ হাজার ৮৪০ মেট্রিক টন পণ্য। কার্গোয় আমদানি-রপ্তানির এ হার এর আগের মাসের চেয়ে অর্থাৎ মার্চের চেয়ে ২৭ দশমিক ৬০ শতাংশ কম ছিল। এপ্রিলে কনটেইনারে আমদানি হয়েছে ৯ লাখ ৩১ হাজার ৯১০ মেট্রিক টন পণ্য আর রপ্তানি হয়েছে ২ লাখ ৯১ হাজার ৮৫৪ মেট্রিক টন; যা আগের মাসের চেয়ে ৩১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। একইভাবে গত মে মাসে বাল্ক কার্গো জাহাজে আমদানি হয়েছে ৩৫ লাখ ৫১ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন, রপ্তানি হয়েছে ২৪৮ মেট্রিক টন পণ্য। একই মাসে কনটেইনার জাহাজে পণ্য আমদানি হয়েছে ১৩ লাখ ৮০ হাজার ৩০৯ মেট্রিক টন। সদ্য বিগত অর্থবছরের শেষ মাস জুনে বাল্ক জাহাজে আমদানি হয়েছে ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন পণ্য এবং রপ্তানি হয়েছে ২৩ হাজার ৬৪৭ মেট্রিক টন পণ্য; যা মে মাসের চেয়ে ২৬ শতাংশ বেশি। জুনে কনটেইনার জাহাজে আমদানি হয়েছে ১৪ লাখ ১৯ হাজার ৪৯৬ মেট্রিক টন আর রপ্তানি হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৯১ মেট্রিক টন পণ্য; যা মে মাসের চেয়ে ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি।

করোনা সংকটের মধ্যেও জাহাজ ও পণ্য হ্যান্ডলিং বাড়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রাম বন্দর চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এস এম আবুল কালাম আজাদ। তিনি বলেন, ‘করোনা সংকটের কারণে চট্টগ্রাম বন্দর ১ ঘণ্টার জন্যও বন্ধ হয়নি। বৈশ্বিক এ মহামারীর কারণে বিশ্বের প্রায় সব দেশের আমদানি-রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এর মধ্যে বন্দরের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখাটাই বড় সাফল্য। এ ক্ষেত্রে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সজাগ দৃষ্টি ছিল উল্লেখ করার মতো। তিনি নির্দেশ দিয়েছেন দেশের খাদ্য ও অন্যান্য পণ্যের সাপ্লাই চেইন যেন বন্ধ না হয়। পাশাপাশি এনবিআর, কাস্টম, শিপিং এজেন্ট, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সহযোগী সব প্রতিষ্ঠান প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছে বিধায় আমরা এখনো সাফল্যের সঙ্গে টিকে আছি। চলতি জুলাইয়ের মাঝামাঝি বন্দরের উৎপাদন আরও সন্তোষজনক অবস্থানে যাবে বলে আশা করছি।’ দেশের আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী কার্গো ও কনটেইনার জাহাজের ৯৮ শতাংশ আসা-যাওয়া করে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। রপ্তানি পণ্যের প্রায় পুরোটাই কনটেইনার জাহাজে পরিবহন করা হয়। গত অর্থবছরের ১০ মাসে কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছিল। কিন্তু করোনার কারণে এপ্রিল ও মে মাসে কমে যায়। ফলে সামগ্রিকভাবে প্রবৃদ্ধি খুব বেশি বাড়েনি। এদিকে বন্দরে জাহাজ আগমনের সংখ্যা ও আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বাড়লেও জাহাজের ভাড়া আগের মতোই রয়েছে জানিয়ে বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান আহসানুল হক চৌধুরী বলেন, ‘করোনার ধাক্কা সামলিয়ে আমদানি-রপ্তানি ধীরে ধীরে চাঙ্গা হতে শুরু করেছে। বেড়েছে জাহাজের আনাগোনা। তবে এখনো জাহাজে পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনের ভাড়া আগেরটাই রয়েছে। অবশ্যই জাহাজের ভাড়া কমানো-বাড়ানোর এখতিয়ার আমাদের মধ্যে নেই। এটি মালিকপক্ষের হাতে। আর জাহাজের ভাড়া বৃদ্ধি হলেও আমরা জানতে পারব পরে। কারণ জাহাজের ভাড়া পণ্য বা কনটেইনার বুকিং দেওয়ার সময় কেটে রাখা হয়। তবে এখন পর্যন্ত জাহাজ ভাড়া বাড়েনি।’

সর্বশেষ খবর