রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সিদ্ধান্ত হয়নি চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের

করোনাকালে ১৪ জুলাই বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে ভোট

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা ভাইরাস মহামারীর মধ্যে বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের স্থগিত উপনির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ১৪ জুলাই এ দুই আসনে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন কমিশন বলছে, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ ভোট গ্রহণ হবে। গতকাল নির্বাচন কমিশনের আনুষ্ঠানিক সভায় এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটির স্থগিত ভোটের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। গতকাল বিকাল ৩টায় নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদার সভাপতিত্বে কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইসির কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে সংসদের পাঁচটি আসন শূন্য। এর মধ্যে বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে উপনির্বাচন ১৪ জুলাই। তবে ঢাকা-৫, পাবনা-৪ ও সিরাজগঞ্জ-১ আসনের উপনির্বাচনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেবে কমিশন।

এ বিষয়ে ইসির সিনিয়র সচিব মো. আলমগীর গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে ভোট করতে হচ্ছে। কারণ সংবিধানে ‘শ্যাল’ (বাধ্যবাধকতা বোঝায়) বলা আছে। কমিশন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। যেহেতু সংবিধানে বিধানটি স্পষ্ট তাই এখানে সুপ্রিম কোর্ট থেকে ব্যাখ্যা চাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে মত এসেছে। ১৪ জুলাই বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনে ভোট গ্রহণ করা হবে। বাকি উপনির্বাচনের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে।

ইসি সচিব বলেন, প্রার্থীরা প্রচার শুরু করতে পারবেন। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে করতে হবে। ভোট গ্রহণের সময়ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা হবে। চট্টগ্রাম সিটি ভোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, চট্টগ্রামের ভোটের বিষয়ে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা নেই। এটা স্থানীয় সরকারের বিষয়ে। এটা নিয়ে পরে আলোচনা হবে। গত ১৮ জানুয়ারি আবদুল মান্নানের মৃত্যুতে বগুড়া-১ আসনটি শূন্য হয়। সাবেক জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেকের মৃত্যুতে যশোর-৬ আসনটি ২১ জানুয়ারি শূন্য হয়। এরপর ২৯ জানুয়ারি ভোটের তারিখ দিয়ে এ আসনে উপনির্বাচনের তফসিল হয়েছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস প্রকোপের কারণে শেষ মুহূর্তে ভোট স্থগিত করা হয়। সংবিধান অনুযায়ী জাতীয় সংসদের কোনো আসন শূন্য হলে শূন্য ঘোষণার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হয়। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার যদি মনে করেন কোনো দ্বৈবদুর্বিপাকের কারণে এই সময়ে ভোট করা সম্ভব নয় তাহলে এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হবে। অর্থাৎ আসন শূন্য হওয়ার ১৮০ দিনের মধ্যে ভোট করতে হবে। বগুড়া-১ আসন শূন্য হওয়ার ১৮০ দিন পূর্ণ হবে ১৫ জুলাই। আর যশোর-৬ আসনের ১৮০ দিন মেয়াদ পূর্ণ হবে ১৮ জুলাই। ইসির কর্মকর্তারা জানান, সর্বশেষ ১৭ জুন শূন্য ঘোষণা করা হয় সিরাজগঞ্জ-১ আসন। ঢাকা-৫ আসন শূন্য হয় ৭ মে। আর পাবনা-৪ শূন্য হয় ১২ এপ্রিল। এর আগে করোনা প্রকোপের সময় ২১ মার্চ ঢাকা-১০, গাইবান্ধা-৩ ও বাগেরহাট-৪ উপনির্বাচন করে সমালোচনার মুখে পড়ে নির্বাচন কমিশন। নজিরবিহীন কম ভোটার উপস্থিতি ছিল ভোটে। ওই সময় ঢাকা-১০ আসনে ইভিএমে ভোট হলেও বাকি দুই আসনে ব্যালট পেপারে ভোট গ্রহণ করে কমিশন। আর ঢাকা-১০ আসনের উপনির্বাচনে ভোট পড়েছিল মাত্র ৫.২৮ ভাগ।

সিদ্ধান্ত হয়নি চট্টগ্রাম ভোটের : চট্টগ্রাম সিটিসহ স্থগিত বিভিন্ন স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের কী হবে? তা নিয়ে ভাবনায় পড়েছে নির্বাচন কমিশন। দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম সিটির মেয়াদও শেষ হওয়ার পথে। শূন্য রয়েছে বিভিন্ন সরকার প্রতিষ্ঠানের পদও। যদিও কবে নাগাদ এসব নির্বাচন হবে, তা নিয়ে কমিশন তেমন কিছু বলছে না। গতকাল ইসির বৈঠকে চট্টগ্রাম সিটির স্থগিত ভোটের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। দেশে করোনা প্রকোপ বাড়তে থাকায় ২১ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন, নয় পৌরসভার মেয়রসহ বিভিন্ন পদ, জেলা পরিষদের পাঁচ পদ এবং ৯৩ ইউনিয়ন পরিষদের বিভিন্ন পদের নির্বাচনও স্থগিত করা হয়। ২৯ মার্চ এসব নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, মেয়াদ শেষ হওয়ার ১৮০ দিন আগে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে এসব নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। তবে ৫ আগস্ট চট্টগ্রাম সিটির মেয়াদও শেষ হবে। তবে ৫ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন না হলে, সে বিষয়ে স্থানীয় সরকারের কাছে ব্যাখ্যা নেবে কমিশন।

ঢাকা-৫ আসনে ভোট ১ নভেম্বরের মধ্যে : শূন্য ঘোষিত ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচন করোনা মহামারীর কারণে (৯০ দিনের মধ্যে) যথাসময়ে হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী ৯০ দিন অর্থাৎ ১ নভেম্বরের মধ্যে এ আসনের ভোট করার কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আওয়ামী লীগ নেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান মোল্লা এ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ৬ মে বার্ধক্যের কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ফলে আসনটি শূন্য ঘোষণা করে সংসদ সচিবালয়। সংবিধান অনুযায়ী কোনো আসন শূন্য হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে ওই আসনের ভোট গ্রহণ করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে হিসেবে আগামী ৩ আগস্টের মধ্যে ভোট গ্রহণ করার কথা। কিন্তু করোনার কারণে এ নির্বাচন যথাসময়ে হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে দৈবদুর্বিপাকের কারণে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের হাতে সংরক্ষিত পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করবে সংস্থাটি। এ ক্ষেত্রে ৩ আগস্ট থেকে পরবর্তী ৯০ দিন যোগ করলে সময়সীমা দাঁড়ায় ১ নভেম্বর। এদিকে ২ এপ্রিল শূন্য ঘোষিত পাবনা-৪ আসনের উপনির্বাচনও করোনা মহামারীর কারণে (৯০ দিনের মধ্যে) যথাসময়ে হচ্ছে না। প্রথম ৯০ দিন শেষ হয়েছে ৩০ জুন। এ ক্ষেত্রে পরবর্তী ৯০ দিন অর্থাৎ ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ আসনের ভোট করার কথা জানিয়েছে ইসি।

সর্বশেষ খবর