রবিবার, ৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্র বের করে দিচ্ছে আরও ১৫০ বাংলাদেশিকে

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

করোনায় লন্ডভন্ড যুক্তরাষ্ট্রস্থ বাংলাদেশি কমিউনিটিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সর্বশেষ অমানবিক পদক্ষেপেরও ধাক্কা লেগেছে। ২৫ জুন ৮৫ বাংলাদেশিকে বিশেষ ফ্লাইটে ঢাকায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এখন বহিষ্কারের উদ্দেশ্যে শতাধিক প্রবাসীকে আরিজোনায় জড়ো করার খবর এসেছে। দালালকে মোটা টাকা দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে মেক্সিকো সীমান্ত পেরিয়ে এরা স্বপ্নের দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকেছেন। মার্কিন সীমান্তরক্ষীরা তাদের গ্রেফতার করলে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করেন। এলডিপির কয়েকজন বাদে অন্যরা সবাই নিজেকে বিএনপি অথবা যুবদল কিংবা ছাত্রদলের সংগঠক বলে পরিচয় দেন। তখন প্রচলিত রীতি অনুযায়ী অ্যাসাইলাম অফিসারের কাছে ইন্টারভিউ শেষে তাদের বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে বেশ কজন প্যারোলে মুক্তিলাভে সক্ষম হলেও অবশিষ্টরা ইমিগ্রেশনের ডিটেনশন সেন্টারেই রয়েছেন। অর্থাৎ মোটা অর্থে অ্যাটর্নি নিয়োগের পর ইমিগ্রেশন কোর্টের শর্তানুযায়ী তারা জামিনের বন্ড দিতে পারেননি। এমন অবস্থায় করোনাভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করায় ডিটেনশন সেন্টারের আরও অনেক অবৈধ অভিবাসীর সঙ্গে বাংলাদেশিরাও পড়েছেন মহাসংকটে। যারা অ্যাটর্নি নিয়োগে সক্ষম হয়েছিলেন তারা এ করোনার মধ্যেই প্যারোলে মুক্তি পেয়েছেন। করোনার প্রকোপ চরমে উঠলে এপ্রিলের শুরুতেই আমেরিকান সিভিল লিবার্টিজ ইউনিয়নের পক্ষ থেকে ওয়াশিংটন স্টেটের সিয়াটল ও ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফেডারেল কোর্টে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কয়েক শ অবৈধ ইমিগ্র্যান্টকে ডিটেনশন সেন্টার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। তাদের কোর্টে হাজিরার তারিখসহ নোটিস ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ওই সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়। এর মধ্যে কোনো বাংলাদেশি ছিলেন না। কারণ, বাংলাদেশির অধিকাংশকেই টেক্সাস অথবা আরিজোনা কিংবা আলাবামা স্টেটে রাখা হয়েছে। খুব কমসংখ্যক রয়েছেন নিউজার্সি ও ফ্লোরিডা ডিটেনশন সেন্টারে। মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকা ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়ার আবেদন প্রথম ইন্টারভিউতে বিবেচিত না হলেই দ্রুত নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দিতে হবে- এ মর্মে ইউএস নবম সার্কিট আপিলেট কোর্ট ২৫ জুন রুলিং দিয়েছে। এর ফলে সেন্ট্রাল আমেরিকার লোকজনের সঙ্গে কিছু বাংলাদেশিও বহিষ্কারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। তার একটি অংশ অর্থাৎ ৮৩ জনকে ইতোমধ্যেই বহিষ্কার করা হয়েছে। এখন আরও ১৫০ জনকে যে কোনো সময় বিমানে উঠিয়ে দেওয়া হবে। তবে এর আগে সংশ্লিষ্ট সবার জাতীয়তা নিশ্চিত হতে হবে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের দূতাবাস থেকে। অন্য এক সূত্রে জানা গেছে, আগের সপ্তাহে বহিষ্কৃতদের মতো এরাও নোয়াখালী, সিলেট, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ঢাকা ও রাজশাহী অঞ্চলের সন্তান। একেকজন ২৫ থেকে ২৮ লাখ টাকা করে দালালকে দিয়ে স্বপ্নের দেশ আমেরিকার পথে পাড়ি জমিয়েছেন। পথিমধ্যে অতিরিক্ত খরচও হয়েছে খাবার অথবা অন্য কোনো বিশেষ প্রয়োজনে। এদের প্রায় সবাই উচ্চমাধ্যমিক থেকে মাস্টার্স ডিগ্রিধারী। রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা বলে আশ্রয় (অ্যাসাইলাম) প্রার্থনা করলেও অধিকাংশই ছিলেন বেকার এবং পৈতৃক সহায়সম্পদ বিক্রি করে যুক্তরাষ্ট্রে রওনা দেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না অ্যাটর্নি নিয়োগসহ মামলা পরিচালনার অন্যান্য খরচের অর্থ সংগ্রহ করতে না পারায়। যাদের তেমন সামর্থ্য ছিল তারা অনেক আগেই প্যারোলে মুক্তি পেয়ে ওয়ার্ক পারমিট সংগ্রহ করে কাজে যোগ দিয়েছেন।

সর্বশেষ খবর