সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
করোনা হারিয়েছে মানবিকতা

রাজশাহীতে লাশ ফেলে পালালেন ভাই-ভাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীতে লাশ ফেলে পালালেন ভাই-ভাবি

রাজশাহীতে করোনায় মারা যাওয়া এক ব্যক্তির লাশ ফেলে পালিয়েছেন তার ভাই এবং ভাবি। আজাদ আলী (৩০) নামের ওই ব্যক্তি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার রাত দেড়টার দিকে মারা যান। আজাদ আলীর বাড়ি নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার জামগ্রামে। তার করোনা পজিটিভ ছিল। শারীরিক অবস্থা সংকটাপন্ন থাকায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছিল। হাসপাতালে ছিলেন তার বড় ভাই এবং ভাবি। তবে মৃত্যুর পর তারা দুজনই মোবাইল ফোন বন্ধ করে পালিয়ে যান। তারা লাশ নিতে চাননি। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট মেহেদী জানিয়েছেন, আজাদ আলীর মৃত্যুর পরই তার লাশ স্বাস্থ্যবিধি মেনে দাফনের জন্য কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে অবহিত করা হয়। এরপর কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের স্বেচ্ছাসেবকরা আজাদ আলীর ভাই এবং ভাবির সঙ্গে কথা বলেন। তারা স্বেচ্ছাসেবকদের জানান, গ্রামে এই লাশ দাফন করতে দেওয়া হবে না। কোয়ান্টাম যেন রাজশাহীতেই লাশটি দাফনের ব্যবস্থা করে। সে অনুযায়ী, কোয়ান্টামের স্বেচ্ছাসেবকরা ভোর ৫টায় রাজশাহীতে কবর খনন শুরু করেন। এরপর ভোর ৬টায় আইসিইউর সামনে গিয়ে দেখেন মৃত ব্যক্তির ভাই এবং ভাবি সেখানে নেই। অন্য রোগীর স্বজনরা জানান, ফজরের আজানের পর তারা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে গেছেন। এরপর থেকে তাদের ফোন বন্ধ। কোয়ান্টাম আরও জানায়, সকাল ১০টা পর্যন্ত তাদের মোবাইল নম্বর দুটি বন্ধই পাওয়া যায়। এরপর একটি নম্বরে কল ঢোকে। তখন তাদের জানানো হয়, তারা লাশ নেবেন না। রাজশাহীতেই যেন দাফন করে দেওয়া হয়। এরপর থেকে নম্বর দুটি আবারও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস বলেন, ‘স্বজনরা লাশ নেবেন না। আমরা বেওয়ারিশ হিসেবে পুলিশকে লাশ বুঝিয়ে দেব। পুলিশ কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনকে বুঝিয়ে দেবে। এরপর লাশ দাফন হবে।’

লাশ ফেলে পালিয়ে গেলেন স্বজনরা : করোনা আতঙ্কে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আরও একজনের লাশ ফেলে স্বজনরা পালিয়ে গেছেন। স্বজনরা না আসায় গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত লাশটি রামেক হাসপাতালেই পড়ে ছিল। মৃত ব্যক্তি হলেন রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার হাবিবুর রহমান। নমুনা পরীক্ষায় হাবিবুরের করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছিল। রামেক হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার স্বজনরা ছিলেন। তবে মৃত্যুর পর তারা লাশ ফেলে চলে গেছেন।

হাসপাতালে ভর্তির সময় রোগীর স্বজন হিসেবে যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছিল সেটি বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে হাবিবুরের করোনা নেগেটিভ ছিল।

তিনি জানান, পুলিশের মাধ্যমে লাশের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা চলছে। তাদের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। কিন্তু স্বজনরা যদি কোনোভাবেই না আসেন তাহলে লাশের দায়িত্ব পুলিশকে দেওয়া হবে। পুলিশ তখন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে বেওয়ারিশ হিসেবে লাশটি দাফনের ব্যবস্থা করবে।

সর্বশেষ খবর