সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

কুকুর বিড়ালের নামে চাঁদাবাজি!

নিজস্ব প্রতিবেদক

পশু আশ্রমে ভালো নেই বেওয়ারিশ কুকুর-বিড়াল। অনাহারে, বিনা চিকিৎসায় ধুঁকছে অবলা প্রাণীগুলো। অথচ পথপ্রাণীগুলোর আবাস, খাবার ও চিকিৎসার জন্য নিয়মিত দেশ-বিদেশের পশুপ্রেমী সংগঠন ও মানুষের কাছ থেকে নেওয়া হচ্ছে অনুদান। আর পশুপ্রেমীর ছদ্মবেশে পশু আশ্রম খুলে এমন অভিনব চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে ‘আদি গুরু’ হিসেবে পরিচিত নাঈম ইবনে ইসলাম নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, প্রাণীসেবার নামে অনুদান সংগ্রহ করে নিজের বিত্তবৈভব গড়ে তুলছেন ওই ব্যক্তি। পক্ষান্তরে রাস্তা থেকে কুকুর-বিড়াল ধরে নিয়ে আটকে রেখে সেগুলোকে অনাহারে-বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। এদিকে ‘আদি গুরুর’ এই কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে সরব হয়েছে কয়েকটি পশুপ্রেমী সংগঠন। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংগঠনগুলো আইনের দ্বারস্থ হয়েছে। পথপ্রাণীদের নিয়ে কাজ করা সংগঠন ‘পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন’ ও ‘কেয়ার ফর পজ’ জানিয়েছে, তারা দীর্ঘদিন ধরে নাঈম ইবনে ইসলামের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করে প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণের অমানবিক চিত্র পেয়েছে। প্রতিষ্ঠান দুটির মতে, গত তিন বছর ধরে নাঈম ছদ্মনাম “আদি গুরু” ব্যবহার করে আশ্রমের নামে রাস্তার কুকুর-বিড়াল ধরে নিয়ে আটকে রাখছেন ও অনুদান তুলে পকেটে ঢুকাচ্ছেন। প্রাণীগুলোকে ঠিকমতো খাবারও দিচ্ছেন না। চিকিৎসা করাচ্ছেন না। অথচ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজেকে প্রাণী উদ্ধারকারী এবং প্রাণীপ্রেমী পরিচয় দিয়ে নিয়মিত অনুদান সংগ্রহ করছেন। প্রথমে জিগাতলার বাসায় এ কাজ করতেন। ২০১৮ সালে হাজারীবাগ থানায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন ইসরাত জাহান এবং কিছু প্রাণী অধিকারকর্মী। এরপর জিগাতলা ছেড়ে রায়েরবাজারে একটি জমি ভাড়া করে ছাপড়া তুলে এ অবৈধ কার্যক্রম শুরু করেন। সেখানে শতাধিক কুকুর-বিড়াল তুলে নিয়ে আটকে রেখে পচা-বাসি ছত্রাক পড়া রুটি-কেক খেতে দিচ্ছেন। আশ্রম মেরামতের জন্য টাকা তুলে পকেটে ঢুকিয়েছেন। সেখানে নেই কোনো পশু চিকিৎসক। পশু চিকিৎসক না হয়েও তিনি বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রাণীদের চিকিৎসা দিয়ে অর্থ আদায় করেন। নীলা হাবিবা নামের একজন প্রাণীপ্রেমীর কাছ থেকে কুকুর-বিড়ালের জন্য প্রতি মাসে অনুদান হিসেবে পাওয়া বিদেশি খাবার বিক্রি করে দেন। তার বিরুদ্ধে নারী স্বেচ্ছাসেবীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও হয়েছে। এ ছাড়া জায়গার মালিক তাসমিমা হোসেন তাকে জায়গা ছাড়ার নোটিস দিলে ১১ জুন রাতে দুই ব্যক্তির কাছে দায়িত্ব দিয়ে শতাধিক প্রাণী ফেলে তিনি পালিয়ে যান। ওই দুই ব্যক্তির অনুরোধে প্রাণীগুলোকে বাঁচাতে পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এবং কেয়ার ফর পজসহ বেশকিছু সংগঠন এগিয়ে গিয়ে দেখতে পায়, প্রতিটি কুকুর-বিড়াল মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। পরে ৪ জুলাই ফিরে আসেন। এসব কর্মকান্ডের পরিপ্রেক্ষিতে তার বিরুদ্ধে গত ১১ জুন হাজারীবাগ থানায় এবং ১৫ জুন রমনা মডেল থানায় দুটি সাধারণ ডায়েরি হয়। হাজারীবাগ থানায় প্রাণীর প্রতি নিষ্ঠুরতাসহ নারী স্বেচ্ছাসেবীকে যৌন হয়রানি এবং রমনা মডেল থানায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারী স্বেচ্ছাসেবীকে অশ্লীল ভয়েস রেকর্ড পাঠানো হয়েছে মর্মে সাধারণ ডায়েরি লেখা হয়। এ ব্যাপারে জানতে নাঈম ইবনে ইসলামকে ফোন দিলে তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যারা অভিযোগ করেছেন, তারা বহুদিন ধরে আমার পশু আশ্রমটি দখলের চেষ্টা করছেন। গুজব ছড়িয়ে আমার ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। নানা চাপে আমি কয়েকদিনের জন্য আশ্রম ছাড়তে বাধ্য হই। এরপর তারা এসে এটার দখল নেয়। এরপর চারদিক এলোমেলো করে ছবি ও ভিডিও তোলে। আমি যাওয়ার সময় কুকুর-বিড়ালগুলোর চেহারা এমন রুগ্ন ছিল না। এ ছাড়া আমি যাওয়ার পর এখান থেকে ৫৬টি বিড়াল ও ৪৫টি কুকুর উধাও হয়ে গেছে। আমি আইনি ব্যবস্থা নেব। ওই পোষ্যগুলো যারা এখানে রেখেছিল তারাও মামলা করবে। যে কোনো তদন্ত মোকাবিলায় আমি প্রস্তুত। এ ছাড়া রমনা থানায় আমার নামে যে নারী অভিযোগ করেছেন, তার সঙ্গে মেসেঞ্জারে আমার চ্যাট হিস্ট্রি দেখাতে পারব। তাতেই সব পরিষ্কার হয়ে যাবে। পিপল ফর অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান স্থপতি রাকিবুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রাণীদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ প্রাণীকল্যাণ আইন-২০১৯ মোতাবেক শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরকে আইন প্রয়োগে সুদৃঢ় অবস্থান নিতে হবে। একই সঙ্গে এ ধরনের অবৈধ কার্যক্রম প্রতিহত করতে সচেতন প্রাণীপ্রেমীদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য।

সর্বশেষ খবর