মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধে মাথায় হাত

ব্যবসায়ীসহ সংশ্লিষ্টরা কয়েক মাস ধরে কর্ম ও আয়হীন

জিন্নাতুন নূর

সামাজিক অনুষ্ঠান বন্ধে মাথায় হাত

দুবাইয়ে পাঁচ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে গত মার্চের প্রথম সপ্তাহে দেশে ফেরেন জাহিদুল ইসলাম। পরিবারের উদ্যোগে মার্চের ২৫ তারিখ জমকালো আয়োজনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার কথা ছিল জাহিদুলের। বিয়েতে জাহিদুলের ভাই-বোনেরাও ডিজে পার্টি ও গান-বাজনাসহ নানা আয়োজনের জন্য ফেব্রুয়ারি মাস থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের জন্য বিয়ে পিছিয়ে দিতে হয়। কথা ছিল পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হলে  নতুন করে বিয়ের তারিখ নির্ধারণ করবে দুই পরিবার। কিন্তু তিন মাস এরই মধ্যে চলে গেছে।

শুধু জাহিদুল নয়, করোনার কারণে তার মতো আরও অনেক তরুণ-তরুণীর বিয়ে পিছিয়ে গেছে। শুধু বিয়েই নয়, করোনা সংক্রমণের জন্য গণজমায়েত এড়াতে মার্চ থেকেই বন্ধ জন্মদিন, আকিকা, সুন্নতে খাতনা, বিয়ে বার্ষিকীসহ সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান। এতে এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বিপাকে পড়েছেন। টানা কয়েক মাস ধরে বেচা-বিক্রি না থাকায় প্রায় পথে বসতে চলেছেন অনেক ব্যবসায়ী। সংশ্লিষ্টরা জানান, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে ও গণজমায়েত বন্ধ থাকায় কয়েক মাসে বিয়ের অনুষ্ঠান বলা যায় একপ্রকার বন্ধই আছে। হাতে গোনা যে কয়টি বিয়ে হচ্ছে তাও ঘরোয়া পরিবেশে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সাদামাটা আয়োজনে দুপক্ষের কয়েকজনের উপস্থিতিতে ঘরেই রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। অথচ আগে বিয়ের অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য দুই মাস আগে থেকেই ঢাকার কমিউনিটি সেন্টারে বুকিং দিতে হতো। সেখানে বর্তমানে রাজধানীর বন্ধ কমিউনিটি সেন্টারগুলোতে জ্বলছে না লাল-নীল মরিচাবাতি ও বিয়ের সানাই।

কমিউনিটি সেন্টারের মালিকরা জানান, করোনার কারণে তাদের ব্যবসা দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মার্চে যেসব বুকিং ছিল তার প্রায় সবই বাতিল করা হয়েছে। এ অবস্থায় কর্মচারীদের বেতন দিতে হিমশিম খাচ্ছে অনেক কমিউনিটি সেন্টার। একই অবস্থা ডেকোরেটর ব্যবসায়ীদের। গায়ে হলুদ, জন্মদিন ও আকিকার অনুষ্ঠান না থাকায় বেশিরভাগ ডেকোরেটর সেন্টারেরই কোনো ব্যবসা নেই। এ ছাড়া করোনার কারণে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন নিকাহ রেজিস্ট্রার বা কাজীরা।  আইন মন্ত্রণালয়ের অধীনে সারা দেশে থাকা সাড়ে সাত হাজারের বেশি কাজী কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। রাজধানীর ভাটারা খিলবাড়িরটেক কাজী অফিসের কাজী মো. মুজিবুর রহমান বলেন, লকডাউনের পর ৩১ মে থেকে সীমিত আকারে কার্যক্রম শুরু হলেও সে অর্থে বিয়ে নিবন্ধন হচ্ছে না। আগে সপ্তাহে ৫-৭টি বিয়ে নিবন্ধন হতো। এখন ১৫ দিনে হয়তো একটি বিয়ে নিবন্ধন হচ্ছে। গত ২৩ দিনে এই অফিসে কোনো বিয়ে নিবন্ধন হয়নি। ব্যবসা নেই বিয়ের পোশাক বিক্রেতাদেরও। মিরপুরের বেনারসি পল্লী, এলিফ্যান্ট রোড ও নিউ মার্কেটের যে দোকানগুলোতে আগে বিয়ের উপহার সামগ্রীর বিভিন্ন উপকরণ, ডালা, বরের পোশাক, পাগড়ি  বিক্রি কিংবা ভাড়া দেওয়া হতো সেখানে এখন ক্রেতা নেই। আর ক্রেতার অভাবে অনেক দোকানও বন্ধ। মিরপুরের বিখ্যাত বেনারসি পল্লীর দোকানগুলো খুললেও ব্যবসায়ীরা ক্রেতা সংকটে ভুগছেন। তারা জানান, বিয়ের শাড়ি বিক্রিই তাদের প্রধান ব্যবসা। কিন্তু করোনার জন্য এখন সেই ক্রেতাও হাতছাড়া হয়ে গেছে। ভালো নেই স্বর্ণের অলঙ্কারের ব্যবসায়ীরাও। তারা জানান, করোনার কারণে বর্তমানে তাদের ব্যবসা খুব খারাপ যাচ্ছে। কিন্তু বেচাবিক্রি না থাকলেও কর্মচারীদের বেতনসহ দোকানের ভাড়া দিতে হচ্ছে। গুলশান এভিনিউর  সুবাস্তু ইমাম স্কয়ারের আপন জুয়েলার্স শাখার ম্যানেজার মো. সুমন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন,  দীর্ঘ লকডাউন শেষে ২৫ জুন দোকান খুলেছি। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো বিয়ের অলঙ্কার বিক্রি করতে পারিনি। বিয়ের কনে সাজানোর দায়িত্বে থাকা ঢাকার বিউটি পারলারগুলোও লকডাউনের কারণে দীর্ঘ সময় বন্ধ আছে। এরই মধ্যে নামকরা পারলারগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে তাদের কার্যক্রম আবার শুরু করতে যাচ্ছে। তবে আগের মতো হয়তো সেবা দিতে পারবে না। অ্যাপয়েন্টমেন্টের ভিত্তিতে, স্বল্প সংখ্যক গ্রাহককে সেবা দেবে ঢাকার বিউটি পারলারগুলো। সাধারণ সেবা দেওয়া হলেও বিয়ের অনুষ্ঠানের কনে সাজিয়েই উল্লেখযোগ্য আয় আসে এসব পারলারে। কিন্তু কাজ না থাকায় অনেক পারলারেই কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি সপ্তাহেই কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে পারসোনা। তবে তারা অ্যাপয়েন্টমেন্টের মাধ্যমে সীমিত আকারে গ্রাহকদের সেবা দেবেন। করোনার জন্য হাতে তেমন কাজ নেই ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলোরও। আগে শুধু বিয়েকে কেন্দ্র করেই প্রি ওয়েডিং শুট, গায়ে হলুদ, মেহেদি, বিয়ের শুটের কাজ পেত এই কোম্পানিগুলো। এর পাশাপাশি জন্মদিনের অনুষ্ঠানের ডেকোরেশন, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের র‌্যাগ ডে ছাড়াও আরও নানা অনুষ্ঠানে কাজ থাকলেও এখন অলস সময় কাটাতে হচ্ছে এসব কোম্পানির কর্মকর্তাদের।

 

সর্বশেষ খবর