মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
সাক্ষাৎকারে তারিক আফজাল, ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এবি ব্যাংক

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবি ব্যাংক

আলী রিয়াজ

চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়িয়েছে এবি ব্যাংক

তারিক আফজাল

বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তারিক আফজাল বলেছেন, দেশের সামনে এখন মূল চ্যালেঞ্জ অর্থনীতি কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে। অর্থনীতি সচল করতে হলে ব্যাংক ব্যবস্থার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকের হাতে তারল্য থাকতে হবে। প্রণোদনা বাস্তবায়ন করতে হলে প্রচুর তারল্য প্রয়োজন। সেজন্য আমরা মন্দ ঋণ, শ্রেণিকৃত ঋণ আদায় করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি। এ সংকটের মধ্যেও এবি ব্যাংক ঘুরে দাঁড়িয়েছে। করোনা সংকটকালীন ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন এবি ব্যাংকের এমডি তারিক আফজাল।

দেশের বেসরকারি খাতের প্রথম ব্যাংক এবি ব্যাংক। ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত ব্যাংকটি কয়েক বছরে নানা সংকট মোকাবিলা করেছে। শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ দিতে পারেনি। এ সংকটের মধ্যেই ব্যাংকটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে দায়িত্ব নেন বিশিষ্ট ব্যাংকার তারিক আফজাল। তিনি দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকের নতুন প্রডাক্ট নিয়ে আসা, খেলাপি ঋণ আদায়, নতুন বিনিয়োগের জন্য নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেন। এর মধ্যে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরু হলে পুরো আর্থিক খাতে সংকট তৈরি হয়। তবে তারিক আফজাল তার যোগ্য নেতৃত্বে ব্যাংকটিকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে আসেন। ২০১৯ সালের হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় নিয়ে পাঁচ শতাংশ বোনাস শেয়ার লভ্যাংশ হিসেবে ঘোষণা করেছেন, যা ব্যাংকের ভিত্তিকে মজবুত করতে সহায়তা করবে। করোনা সংকটে ব্যাংকিং খাতের চ্যালেঞ্জ নিয়ে তারিক আফজাল বলেন, করোনাভাইরাসকে আমরা ঝুঁকি হিসেবে নিলেও ব্যাংকিং কার্যক্রমে তার কোনো প্রভাব পড়তে দিইনি। প্রতিদিন আমরা অফিস করছি। আমাদের সব কর্মকর্তা আমিসহ ডিএমডি, এডিএমডি, জিএম সবাই প্রতিদিন অফিস করছি। আমরা মনে করি, অফিসে থাকতে হবে। নো ওয়ার্ক ফ্রম হোম, ওয়ার্ক ফ্রম অফিসথ- এই নীতিতে আমরা কাজ করছি। বাসায় বসে ব্যাংকিং হয় না। গ্রাহকের সঙ্গে কথা বলতে হয়। প্রতিটি কাজ পর্যালোচনা করতে হয়। আমরা সবাইকে সেবা দিতে চাই। আমাদের প্রতিটি শাখার সামনে করোনা ডিসইনফেক্টেট মেশিন স্থাপন করেছি। একসঙ্গে দুজন গ্রাহকের বেশি ঢুকতে দিই না শাখায়। তিনি বলেন, সরকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা মেনে আমরা প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। প্রণোদনা বাস্তবায়ন করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের মুনাফা করতে হবে। অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতোই ব্যাংকিং। বছর শেষে আমি বলতে পারব না যে, কোনো মুনাফা হয়নি, কোনো সেবা দিতে পারব না। তা কেউ মানবে না। তাই ব্যাংকের প্রচুর তারল্য থাকতে হবে। এ জন্য মন্দ ঋণ আদায়ের লক্ষ্য নিয়ে পুরোমাত্রায় কাজ করছি। এর ফলে আমরা সফলও হয়েছি। এ সংকটের মধ্যেও এবি ব্যাংককে আমরা নতুন উচ্চতায় নিয়ে এসে ঘুরে দাঁড়িয়েছি। এবি ব্যাংক ২০১৯ সালে লক্ষ্যণীয় ব্যবসায়িক উন্নতি করেছে। ২০১৮ সালের ৩৩.০৭ শতাংশ শ্রেণিকৃত ঋণ ২০১৯ শেষে কমে দাঁড়িয়েছে ১৮.২৮ শতাংশে। বছর শেষে ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৬৪৫ কোটি টাকা, যা আগের বছরের (৩০৮ কোটি টাকা) তুলনায় শতভাগেরও বেশি। এবি ব্যাংকের এমডি বলেন, ২০১৯ এর সাময়িক বিরূপ পরিস্থিতিতেও আমানতকারীরা তাদের আস্থা রেখেছেন ব্যাংকটির ওপর। যার ধরুন ২০১৮ সালের ২৩,৫৪৪ কোটি টাকার আমানত বেড়ে ২০১৯ শেষে দাঁড়ায় ২৭,৯৪৬ কোটি টাকায়। ব্যাংকটি বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারিত ঋণ আমানত হার যথাযথভাবে পরিপালন করেছে। ঋণ আমানত হার ৮৫ শতাংশের নিচে রয়েছে আমাদের। এ ছাড়াও অন্যান্য তারল্য পরিমাপ- লিকুইডিটি কভারেজ রেশিও এবং নেট স্টাবল ফান্ডিং রেশিও সংরক্ষণেও এবি ব্যাংক সফল হয়েছে। আমাদের ব্যাংকের ক্রেডিট রেটিং ২০১৮ সালে ছিল এ-২ যা ২০১৯ সালে হয়েছে এ প্লাস। অর্থাৎ সব সূচকেই আমরা এগিয়ে গিয়েছি। তারিক আফজাল বলেন, এবি ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের স্বার্থ রক্ষায়ও বদ্ধপরিকর। সামাজিক দায়বদ্ধতার দিক থেকেও ব্যাংকটি পিছিয়ে নেই, সর্বদাই পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়িয়েছে। সরকার ঘোষিত আর্থিক নীতির ধারাবাহিকতায় এবি ব্যাংক তার কর্মকান্ড আরও বেগবান করেছে। এই করোনা দুর্যোগেও ব্যাংকের সকল স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচরীরা গ্রাহকদের নিয়মিত সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর