মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সংকটে জাহাজশিল্প

অ্যাডভান্স ট্যাক্স ও ব্যাংক সুদ মওকুফ চান ব্যবসায়ীরা

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

ভালো নেই সীতাকুন্ডের দেশের একমাত্র জাহাজ ভাঙা শিল্প এলাকার ব্যবসায়ীরা। করোনাকালে একদিকে কাঁচা লোহার বাজার নিম্নমুখী। অন্যদিকে স্বাভাবিক সময়ের মতো সরকারের অ্যাডভান্স ট্যাক্স ও নানা খাতের রাজস্ব আদায়। তার ওপর গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে ব্যাংক সুদ। সব মিলিয়ে জাঁতাকলে এ শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। ফলে গভীর সংকটে পড়তে যাচ্ছে দেশের ইস্পাত শিল্পের অন্যতম জোগান দেওয়া এ শিল্পটি।

জাহাজ আমদানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ শিপব্রেকার্স অ্যান্ড রি-সাইক্লার্স অ্যাসোসিয়েশনের নেতা মোহাম্মদ লোকমান বলেন, বর্তমানে জাহাজ ভাঙা শিল্পের অবস্থা খুবই নাজুক। করুণ এ সময়ে গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যাডভান্স ট্যাক্স ও ব্যাংক সুদ। এ ধারা অব্যাহত থাকলে গভীর সংকটে পড়বে জাহাজ ভাঙা শিল্প। শিপব্রেকিং ইয়ার্ড মালিকরা প্রতি বছর সরকারকে দেড় হাজার কোটি টাকা রাজস্ব দেন। অথচ সব সেক্টর সরকারি প্রণোদনা পেলেও ভিন্ন চিত্র এ খাতে। এ সংকটময় সময়ে উল্টো অ্যাডভান্স ট্যাক্স ও নানা খাতের টাকা আদায়ের নামে ধ্বংস করার প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে দেশের একমাত্র জাহাজা ভাঙা শিল্প এলাকা সীতাকুন্ডের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলোতে নানামুখী সংকট চলে আসছে। একসময় এ এলাকায় প্রায় ২০০ শিপব্রেকিং ইয়ার্ড থাকলেও বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৬০টিতে। কিন্তু করোনা প্রাদুর্ভাবের মধ্যে জাহাজ ভাঙা বন্ধ থাকায় এবং বেচাবিক্রি না হওয়ায় আরও সংকটে পড়েন শিপব্রেকিং ব্যবসায়ীরা। করোনাকালের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কমতে থাকে লোহার দাম। করোনা প্রাদুর্ভাব পরিস্থিতির শুরুতে স্ক্র্যাপ লোহা টনপ্রতি বিক্রি হতো ৪৩ থেকে ৪৪ হাজার টাকা। বর্তমানে তা নেমে এসেছে ২৬ থেকে ২৭ হাজার টাকা টন। অন্যান্য ধরনের লোহারও দাম কমেছে টনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। লালবাগ শিপব্রেকার্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল হাসেম আবদুল্লাহ বলেন, করোনাকালে আমাদের ব্যবসা বন্ধ থাকার সঙ্গে সঙ্গে লোহার দাম প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে অ্যাডভান্স ট্যাক্স ও ব্যাংক সুদ। যদি অ্যাডভ্যান্স ট্যাক্স ও ব্যাংক সুদ মওকুফ করা না হয় তাহলে পথে বসতে হবে শিপব্রেকিং ইয়ার্ড ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণ ছুটির সময় শিপব্রেকিং ইয়ার্ডের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন, থাকা-খাওয়া খরচ করতে হয়েছে ইয়ার্ড মালিকদের। ব্যাংক সুদ ও অন্যান্য খাতের খরচ বহন করতে হয়েছে ঠিক আগের মতোই। এছাড়া একই সময় লোহার দাম ছিল নিম্নমুখী। তাই প্রায় মালিকেরই ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকা। করোনাকালে ব্যবসায়ীদের কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। দেশের লোহা শিল্পের কাঁচা মালের জোগান আসে সীতাকুন্ডের শিপব্রেকিং ইয়ার্ডগুলো থেকে। একসময় এ শিল্প এলাকায় প্রায় ২০০ ইয়ার্ড চালু ছিল। নানা প্রতিকূল পরিবেশের কারণে বর্তমানে তা নেমে এসেছে ৬০টিতে। দেশের ইস্পাত শিল্পের জোগান আসে সীতাকুে র জাহাজ ভাঙা শিল্প এলাকা থেকে। এ ছাড়া আবাসনসহ কয়েকটি বড় খাত নির্ভরশীল এ শিল্পের ওপর। তাই জাহাজ ভাঙা শিল্পের ক্ষতিকর প্রভাব পড়তে পারে অন্যান্য খাতেও।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর