মঙ্গলবার, ৭ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনার পর আর্থিক কারণে বহু আমেরিকান বিষণ্নতায় ভুগছেন

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

শুধু করোনাভাইরাসের তান্ডবে নয়, আর্থিক পরিস্থিতি ও বর্ণবিদ্বেষমূলক আচরণের কারণেও বহু আমেরিকান বিষণ্নতায় ভুগছেন। এমন পরিস্থিতি পুরো সমাজ ব্যবস্থায় বিরূপ প্রভাব ফেলছে। বেশ কয়েক মাস লকডাউনে থাকায় প্রতিটি মানুষই অস্বাভাবিক পরিবেশে দিনাতিপাত করতে বাধ্য হয়েছেন। আর এ অবস্থায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে অনেকেই নানা সমস্যা অনুভব করছেন। যা আগে কখনো এমন পরিস্থিতি হয়নি। ২৩ এপ্রিল থেকে ৫ মে পর্যন্ত ন্যাশনাল সেন্টার ফর হেলথ স্ট্যাটিসটিক্স এবং ইউএস সেনসাস  ব্যুরো যৌথভাবে পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ২৩.৫ ভাগ আমেরিকানই এক ধরনের মানসিক যন্ত্রণায় নিপতিত হয়েছেন। এই সংস্থার জুনের ১১ থেকে ১৬ তারিখের মধ্যে পরিচালিত আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, মানসিক যন্ত্রণায় আক্রান্তের হার বেড়ে ২৫.১ ভাগ হয়েছে। গত বছরের জানুয়ারি থেকে জুনের মধ্যে পরিচালিত একই ধরনের জরিপে মাত্র ৬.৬ ভাগ আমেরিকান মানসিক যন্ত্রণায় ছিলেন। আটলান্টার ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ তথা সিডিসির একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানী এ প্রসঙ্গে বলেছেন, আমার মনে হয় এ নিয়ে কারোরই দ্বিধা নেই যে, বহুকাল পরে বড় ধরনের একটি মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে পড়েছেন আমেরিকানরা। ব্রঙ্কসের মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ ড. ডোনা ডিমেত্রি ফ্রাইডম্যান বলেন, বর্তমানে নানা ধরনের ভীতি গ্রাস করেছে সবাইকে। এটি হতে পারে করোনাভাইরাস অথবা আর্থিক পরিস্থিতি কিংবা শারীরিক বা আবেগজনিত ব্যাপার। তবে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে বর্বরোচিত আচরণের ব্যাপারটি। পুলিশ অথবা অন্য কোনো বর্ণের মানুষেরা কৃষ্ণাঙ্গদের সঙ্গে যে আচরণ করছে তা সভ্য সমাজের পরিপন্থী বলে অনেকেই হতাশ। গত ২৩ এপ্রিল থেকে ৫ মের মধ্যে উপরোক্ত জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২৫.৬ ভাগ কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকান বলেছেন, তারা খুবই অস্থিরতায় ভুগছেন। সব সময় ভীতি তাড়া করছে। এরপর জুনের ১১ থেকে ১৬ তারিখে একই প্রশ্নের জবাবে এই কৃষ্ণাঙ্গদের ২৮.৩ ভাগ বলেছেন, তারা রাতে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেন না। সব সময় মনে হয়, এই বুঝি কেউ হামলা করল।

পুলিশ দেখলেই দূরদূর বুকে পথ চলেন। স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না একাকী চলতেও। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নিউইয়র্কে ইমোশনাল সাপোর্ট হটলাইন (৮৪৪-৮৬৩-৯৩১৪ ) চালু করা হয়েছে মানসিক বিপর্যয়ে পড়াদের কাউন্সেলিংয়ের জন্য। এটি করা হচ্ছে বিনামূল্যে। ‘মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা যেভাবে পরামর্শ দেবেন, তা নিজে থেকে কেউই পারবেন না। এজন্য সবারই উচিত এই হটলাইনে যোগাযোগ করা অথবা নিজ নিজ চিকিৎসকের মাধ্যমে মানসিক চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া’-এ কথা বলেছেন কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির সাইকিয়াট্রিস্ট ড. ফারনান্দো ট্যাভারেস। জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর যারা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারাই অধিক হারে মানসিক যন্ত্রণা বোধ করছেন। ৪৯ ভাগ বলেছেন যে, তারা পুনরায় আক্রান্ত হওয়ার ভীতিতে রয়েছেন। ২৫ ভাগ বলেছেন যে, তারা কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারছেন না। ২০ ভাগ বলেছেন যে, এক ধরনের মনোকষ্ট সব সময় তাড়া করছে। ৮ ভাগ বলেছেন, নিজেকে একাকী লাগে। একই ধরনের আরেকটি পর্যবেক্ষণ জরিপ সিঙ্গাপুরের হেলথ কেয়ার কর্মীর মধ্যে পরিচালনা করা হয়েছিল। সেখানকার মাত্র ১৫ ভাগ বলেছেন যে, তারা মনোকষ্টে ভুগছেন। ৯ ভাগ মানুষকে বিষণœতার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। অস্বস্তিতে রয়েছেন ৮ ভাগ মানুষ।

সর্বশেষ খবর