বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

কোলাহলশূন্য পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

কোলাহলশূন্য পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত

করোনা সংক্রমণরোধে বিধি-নিষেধের কারণে এখন অনেকটাই কোলাহলশূন্য দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত। যে সৈকত এক সময় সকাল-সন্ধ্যা হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু মানুষের পদভারে ছিল মুখরিত, সেখানে গত চার মাস ধরে নেমে এসেছে নির্জন-নৈঃশব্দিক পরিবেশ। তবে এখনো প্রাণহীন এই সৈকতে থেকে থেকে কিছু মোটরবাইক আরোহী ও মোটর গাড়ি ব্যবহারকারীরা বুকভরে নিঃশ্বাস নিতে ছুটে যান। মানুষের আনাগোনা তেমন না থাকলেও সৈকতজুড়ে রয়েছে সমুদ্র সফেন ঢেউয়ের শব্দ আর ঝাউয়ের সারি ভেদ করে কানে আসে পাখির কিচির-মিচির শব্দ। এরই ফাঁকে বিচিত্র রং ছড়িয়ে সাজতে শুরু করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) সৌন্দর্যবর্ধন প্রকল্পের আওতায় সদ্যনির্মিত রিংরোডে লাগানো বাহারি ফুল ও লতাগুল্মের চারাগুলো। স্থানীয় সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনা পরিস্থিতি শুরুর পর গত ২৫ মার্চ থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পুরোপুরি বন্ধ ছিল। এখানে মানুষের প্রবেশ ও জনসমাগমে নিষেধাজ্ঞা দেয় চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ। এর পর থেকে চট্টগ্রামের প্রধান পর্যটন এলাকা পতেঙ্গা হয়ে যায় জনমানবশূন্য এক বিরান সৈকত। তবে সরকারি সাধারণ ছুটি তুলে নেওয়ার পর গত কয়েক দিন ধরে বেড়েছে মানুষের আনাগোনা। সৈকতঘেঁষা দোকানিরাও খুলতে বসেছে তাদের পসরা। প্রশাসনের কড়াকড়ি না থাকায় ধীরে ধীরে বাড়তে শুরু করেছে ভ্রমণপিপাসুদের আনাগোনাও। তবে আগের অবস্থানে ফিরে আসতে আরও সময় লাগবে বলে মনে করছেন সৈকতের দোকানিরা।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পতেঙ্গা সৈকত এলাকার দোকানদার আবদুল খালেক জানান, তিনি পৈতৃক সূত্রে গত ৪০ বছর ধরে এখানে দোকানদারি করে আসছেন। কিন্তু সমুদ্র সৈকত এলাকা এমন জনমানবহীন এর আগে কখনো দেখেননি। করোনা পরিস্থিতির পর নিষেধাজ্ঞা থাকায় এত দিন কেউ এখানে আসেনি। তবে কয়েক দিন ধরে কিছুটা প্রাণ পেতে শুরু করেছে বলে জানালেন তিনি। পতেঙ্গা মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ উৎপল বড়ুয়া বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অধিকাংশ মানুষ আজ নিজেকে গৃহবন্দী করে এ ভয়াবহ সংকট মোকাবিলায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় গত ২৮ মার্চ থেকে পতেঙ্গা সমদ্র সৈকত এলাকা চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কমিশনারের নির্দেশে পুরোপুরি লকডাউন করে দেওয়া হয়। এত দিন কেউ আসতে চাইলেও পুলিশ তা নিয়ন্ত্রণ করেছে স্বাস্থ্য নিরাপত্তার স্বার্থে। তবে সাধারণ ছুটি আপাতত তুলে নেওয়ায় এখন লোকজন আসতে শুরু করেছে। এদিকে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে করোনার মাঝেই গত সপ্তাহ-দুয়েক ধরে বিলাসবহুল প্রাইভেটকার, মার্সিডিজ বেঞ্জ, পাজেরো গাড়িতে চড়ে অনেকে সপরিবারে ঘুরতে যাচ্ছেন নগরের পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে। একশ্রেণির বখাটে আবার পতেঙ্গা মেরিন ড্রাইভ সড়কে মোটরবাইক চালিয়ে বিপজ্জনক কসরত করছে বলে জানা গেছে। তাদের দমন করতে কয়েক দিন আগে জেলা প্রশাসন, নগর পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশের যৌথ অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. তৌহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, করোনা পরিস্থিতি শুরুর পরপরই নগর পুলিশ পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতসহ নগরের সব বিনোদন কেন্দ্রে জনসমাগম নিষিদ্ধ করে। সাধারণ ছুটি শেষ হলেও সেই নির্দেশনায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। কিন্তু এমন বিপজ্জনক সময়েও মানুষ সে নিয়ম মানছে না। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পতেঙ্গা-হালিশহর মেরিন ড্রাইভ সড়কের সমুদ্র তীরে প্রচুর মানুষের সমাগম শুরু হলে প্রশাসন অভিযানে নামে। প্রসঙ্গত, চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ করছে। এর ফলে চার স্তর থেকে উপভোগ করা যাচ্ছে সমুদ্রদর্শন। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং সড়ক থেকে সমুদ্রের দিকে নামতেই ৩০ ফুট প্রশস্তের হাঁটাপথ। এরপরেই সুসজ্জিত বাগানের রং-বেরঙের বর্ণিল ফুল। এখানে বসার জন্য দেওয়া হয়েছে হাজারো আসন। এ নান্দনিক উপভোগ্য ভ্রমণ স্পটে আগের চেয়ে অনেক বেশি মানুষের আগমন ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। তাই নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও মানুষ ছুটে যেতে চায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত পানে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এখনো কোলাহলপূর্ণ হয়ে ওঠেনি দেশের এ অন্যতম সমুদ্র সৈকত।

সর্বশেষ খবর