বৃহস্পতিবার, ৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ট্রাম্পের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হার্ভার্ড এমআইটির মামলা

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

করোনাভাইরাসের আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটিগুলোর সব ক্লাসই যদি অনলাইনে নেওয়া হয়, তাহলে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের অবিলম্বে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগের নির্দেশ পালন না করলে গ্রেফতারের পর বহিষ্কারের যে  ঘোষণা দেওয়া হয়েছে তাকে চ্যালেঞ্জ করেছে বিশ্বখ্যাত বস্টনের দুই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমআইটি (ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি) এবং হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি। গতকাল সকালেই বস্টনে ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টে দায়েরকৃত এ মামলায় ট্রাম্প প্রশাসনের ৬ জুলাইয়ের নির্দেশকে স্থগিতের আবেদন জানানো হয়েছে। ভিসা কেড়ে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার এবং যারা সেপ্টেম্বরে শুরু নয়া শিক্ষাবর্ষের ক্লাস করতে আসতে অপেক্ষমাণ, তাদের না আসতে দেওয়ার যে নির্দেশনা জারি করা হয়েছে তা একেবারেই ‘বেআইনি’ বলে অভিহিত করা হয়েছে মামলার আবেদনে। এটির বিবাদী হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্ট। এই ডিপার্টমেন্টের অধীনেই অভিবাসন দফতর। ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে ওই বিধি কার্যকর করার কথা আইস (ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট) এর। দায়েরকৃত মামলায় ১৪ দিনের অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার আবেদন জানানো হয়েছে। এই মামলার সঙ্গে নীতিগত সমর্থন রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের। খুব শিগগিরই আরও কয়েকটি মামলা হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

অন্যদিকে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের ব্যাপারে জারিকৃত ওই নির্দেশনা নিয়ে তুমুল বাকবিতন্ডার মধ্যেই মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের আহ্বানে এক ‘জাতীয় সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো আসছে সেপ্টেম্বরে খোলার ব্যাপারে সব স্টেট গভর্নরের প্রতি ট্রাম্প আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না খুললে ছেলেমেয়েরা প্রাণচাঞ্চল্যে ফিরতে সক্ষম হবে না। এক ধরনের হতাশা গ্রাস করবে তাদের। এমন আহ্বানের মধ্যেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একই দিন সন্ধ্যায় ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টস আর ওয়েলকাম ইন দ্য ইউএস’ (আন্তর্জাতিক ছাত্ররা যুক্তরাষ্ট্রে স্বাগত) শিরোনামে একটি বিবৃতি দিয়েছে। সেখানে ২৪ ঘণ্টা আগে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের ‘ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট’ (আইস) দেওয়া ঘোষণার এক ধরনের ব্যাখ্যা দিয়ে ‘ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট’দের অস্বস্তি দূর করার চেষ্টা করা হয়েছে।  সেখানে বলা হয়েছে, আন্তর্জাতিক পর্যায়ের মেধাবী ছাত্রছাত্রীদের পছন্দের প্রথমে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র এবং আসছে সেপ্টেম্বরে যারা যুক্তরাষ্ট্রে আসার পরিকল্পনা নিয়েছেন, তারা সে সুযোগ এখনো হারাননি। যারা করোনার কারণে আসতে পারবেন না বা ভিসা পাবেন না, তারা নিজ দেশ থেকেই অনলাইনে ক্লাস/কোর্স নিতে পারবেন। আর এভাবেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা লাভে সক্ষম হবেন। যারা আসতে সক্ষম হবেন তাদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্যাম্পাসে অবস্থান এবং ক্লাসে যোগদান করতে হবে। এ ব্যাপারে যথাযথ নির্দেশনা জানতে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের নিজ নিজ দেশে মার্কিন দূতাবাসে যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে। ৬ জুলাই আইস এক ঘোষণায় উল্লেখ করে, ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টরা স্বেচ্ছায় নিজ নিজ দেশে ফিরে না গেলে গ্রেফতারের সম্মুখীন হবেন এবং তাদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কার করা হবে। এ ছাড়া সামনের শিক্ষাবর্ষে যারা ভর্তি হয়েছেন বা হতে চান তাদের নিজ নিজ দেশ থেকেই অনলাইনে কোর্স নিতে হবে। এ ধরনের নির্দেশ জারির পর শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছে। ৭ হাজার ৮০০ বাংলাদেশিসহ বিশ্বের ১১ লক্ষাধিক শিক্ষার্থী রয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চীন এবং পরে ভারতের বলে জানা গেছে। এদিকে হোয়াইট হাউসে জাতীয় সংলাপে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির প্রতি আঙ্গুল উঁচিয়ে বলেছেন, ক্লাস যদি চালু না হয় তাহলে প্রতি বছর যারা ৪১ বিলিয়ন ডলার করে ‘এনডাউমেন্ট’ ফান্ডে দিচ্ছেন, তারাও তো নিজেদের গুটিয়ে নিতে পারেন। হোয়াইট হাউস সে জন্যই চাচ্ছে সেপ্টেম্বর থেকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে। হোয়াইট হাউসের ইস্টরুমের এই সংলাপে ছিলেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, রাজনীতিক এবং প্রশাসনের নীতি-নির্ধারকরা।

সর্বশেষ খবর