শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

আছড়ে পড়ছে বন্যার দ্বিতীয় ঢেউ

নিজস্ব প্রতিবেদক

আছড়ে পড়ছে বন্যার দ্বিতীয় ঢেউ

পানিতে তলিয়ে গেছে বসতবাড়িসহ লালমনিরহাটের বিস্তীর্ণ এলাকা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যার ক্ষত না শুকাতেই ফের বন্যায় প্লাবিত হতে শুরু করেছে দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলো। বৃষ্টিপাত ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা, দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা-ধরলা এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি বাড়তে শুরু করেছে। ইতিমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে সুনামগঞ্জের বিস্তর এলাকা। প্লাবিত হতে শুরু করেছে সিলেটের নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলো। করোনার মধ্যেই একের পর এক বন্যায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকালে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা, যদুকাটা ও গুড় নদীর পানি ৪টি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। এ ছাড়া তিস্তার পানি শুক্রবার সকালে বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচে থাকলেও বিকাল নাগাদ ডালিয়া পয়েন্টে তা বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপরে উঠে যায়। গতকাল সকালে ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ৫৭টিতে পানি বৃদ্ধি পায়।

এদিকে সরকারের নির্দেশে বন্যা মোকাবিলায় কাজ শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুতের কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বন্যাকবলিত জেলাগুলোর সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ রেখে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে একাধিক জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে। বন্যা মোকাবিলায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের যুক্ত হতে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে আগামী সপ্তাহে ২৩ জেলায় বন্যা দেখা দেওয়ার শঙ্কায় সংশ্লিষ্ট এলাকার সব স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতর। পাশাপাশি স্থানীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটিকে সার্বিক সহযোগিতা নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সব সরকারি-বেসরকারি স্কুল-কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীদের। সদ্য বন্যা পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ লাভ করেছে দেশের ১৪টি জেলা। তবে এখনো পুরোপুরি পানি নেমে না যাওয়ায় ও কাদার কারণে অনেক মানুষ বেড়িবাঁধ ও উঁচু সড়কে আশ্রয় নিয়ে আছে। নষ্ট হয়েছে জমির ফসল, ভেসে গেছে পুকুর ও ঘেরের মাছ, রাস্তা-কালভার্ট ভেঙে বেহাল অবস্থা যোগাযোগ ব্যবস্থার। এরই মধ্যে ফের বন্যা পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাচ্ছে। এদিকে গত দুই দিনে আবারও অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের দুই হাজার ৮৬৬টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। জেলার সুনামগঞ্জ সদর, তাহিরপুর, বিশ্বম্ভরপুর, দোয়ারাবাজার, ছাতক এবং জামালগঞ্জের নদী তীরবর্তী এলাকা তলিয়ে গেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলাসহ জামালপুর, ফরিদপুর ও সিলেটসহ ১২ জেলায় ইতিমধ্যে বন্যা এসে গেছে। সাধারণত ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি বাড়লে দেশের ২০ থেকে ২৪টি জেলায় বন্যা দেখা দেয়। তবে এবার আশঙ্কা করা হচ্ছে, ওই ২০-২৪টি জেলার পাশাপাশি আরও ২৩টি জেলা নতুনভাবে বন্যাকবলিত হবে এবং তা স্থায়ী হবে এক মাসের বেশি। এদিকে কোরবানির আগে বন্যার পানিতে খামার তলিয়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত হাজার হাজার ছোট-বড় খামারি। আমাদের বিভিন্ন জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতি। নীলফামারী : উজানের পাহাড়ি ঢল ও ভারি বর্ষণের ফলে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্যানুযায়ী পানিবন্দী হয়ে পড়েছে উপজেলার ৬ হাজার পরিবারের প্রায় ২০ হাজার মানুষ। শুক্রবার সকালে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ১২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও বিকালে ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিস্তা ব্যারাজের সবকটি জলকপাট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। অসংখ্য পরিবার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ৯ সে.মি পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ায় আবার নতুন করে বসতবাড়িতে পানি উঠতে শুরু করেছে।  কুড়িগ্রাম : তিন দিন ধরে সবকটি নদ-নদীর পানি কমতে থাকলেও বৃহস্পতিবার থেকে ব্রহ্মপুত্র ও ধরলাসহ সবকটি নদ-নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৩ দিন পর্যন্ত অবিরাম বৃষ্টিপাত ও উজানের পানিতে নদ-নদীর পানি আরও বেড়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করবে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। লালমনিরহাট : অবিরাম বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি আবারো বাড়ছে। শুক্রবার সকালে তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টে  পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়।

 বিকাল ৫টায় তা বেড়ে ১৫ সেন্টিমিটারে এসে দাঁড়ায়। লালমনিরহাটের আদিতমারী, কালীগঞ্জ, হাতীবান্ধা ও সদর উপজেলার তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকতে শুরু করছে। তবে ধরলার পানি  এখনো বিপৎসীমার নিচে অবস্থান করছে।

 

 

সর্বশেষ খবর