শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বহুমুখী সংকটে কওমি মাদ্রাসা

ভবনের ভাড়া দিতে হিমশিম খাচ্ছেন, অনিয়মিত বেতনে কষ্টে শিক্ষকরা, ঈদের আগে খুলে দেওয়ার দাবি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

করোনাভাইরাস মহামারীতে সংকটে দেশের প্রায় ২২ হাজার কওমি মাদ্রাসা। অনেকে নিয়মিত ভবন ভাড়া দিতে পারছে না। অনিয়মিত বেতনে অর্থকষ্টে আছেন শিক্ষকরা। শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া প্রতি বছর কোরবানির পশু জবাইয়ে কওমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা নিয়োজিত থাকেন। এ বছর মাদ্রাসাগুলো বন্ধ থাকায় কোরবানিতে তাদের অংশগ্রহণও অনিশ্চিত। এ পরিস্থিতিতে ঈদের আগেই কওমি মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশ-বেফাকের সহসভাপতি মুফতি ফয়জুল্লাহ বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে কওমি মাদ্রাসাগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। নিয়মিত চর্চা না হওয়ায় হাফেজি শিক্ষার্থীদের অনেককে নতুন করে মুখস্থ পর্ব শুরু করতে হবে। অবস্থা উত্তরণে দ্রুত মাদ্রাসাগুলো খুলে দেওয়া দরকার।’

বেফাকের যুগ্মমহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন, ‘দেশের অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতো কওমি মাদ্রাসাগুলোও করোনাকালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাদ্রাসার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক, স্টাফ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কোরবানি ঈদে মাদ্রাসাছাত্ররা খেদমত করে থাকেন।  আশা করি সরকার সবকিছু বিবেচনা করে ঈদের আগেই মাদ্রাসাগুলো খুলে দেবে।’ কওমি মাদ্রাসাগুলো বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় বিভিন্ন অনুদানে পরিচালিত হয়। এসব মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া ফ্রি। অনেক মাদ্রাসার পোশাকও দেওয়া হয়। প্রতিবার রমজানে বড় অঙ্কের অনুদান এলেও এবার তা আসেনি। রমজানে অনুদান না পাওয়ায় শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন দূরের কথা, বকেয়া ঋণও শোধ করতে পারেনি। ভবন ভাড়া নেওয়া মাদ্রাসার সমস্যা আরও প্রকট। মাদ্রাসা বন্ধ থাকলে আসন্ন ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহ থেকেও বঞ্চিত হবে এসব মাদ্রাসা। ফলে বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকটের মুখে পড়বে প্রতিষ্ঠানগুলো। করোনা পরিস্থিতি ও রমজান উপলক্ষে দেশের ৬ হাজার ৯৫৯টি কওমি মাদ্রাসার জন্য ৮ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের সংশ্লিষ্ট একটি দফতরের দেওয়া তালিকার ভিত্তিতে ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয় ওই টাকা। এ অনুদানপ্রাপ্তরা সন্তোষ প্রকাশ করলেও তালিকার বাইরে থাকায় সামান্য এ বরাদ্দও পাননি অধিকাংশ শিক্ষক। তা ছাড়া দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুযায়ী সরকারি এ অনুদান গ্রহণ থেকে বিরত থাকার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় কওমি মাদ্রাসা বোর্ড-বেফাক। সম্প্রতি কওমি মাদ্রাসার বিরাজমান সংকট নিয়ে বৈঠক করেন বেফাক নেতারা। বোর্ডের সহসভাপতি মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে বেফাক মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সভা থেকে সামর্থ্যবান মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষকে শিক্ষকদের বেতন প্রদান এবং সংশ্লিষ্ট বাড়ির ভাড়া কমানোর আহ্বান জানানো হয়। বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে আর্থিক কষ্টে থাকা শিক্ষকসমাজের প্রতি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ যেন দয়ার্দ্র আচরণ করেন এবং তাদের চাহিদা ও সমস্যার প্রতি সদয় দৃষ্টি রাখেন। যেসব মাদ্রাসার সামর্থ্য রয়েছে, তারা যেন শিক্ষকদের বেতন আদায়ে বিশেষ যত্নবান হয়। অন্যদিকে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত মাদ্রাসার শিক্ষকদেরও ধৈর্যধারণ করে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে রূঢ় আচরণ না করার আহ্বান জানানো হয়। সভায় ভাড়া বাড়িতে মাদ্রাসার কার্যক্রম পরিচালিত বাড়ির মালিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বেফাক নেতারা বলেন, তারা তাদের বাড়িতে মাদ্রাসা স্থাপনের অনুমতি দিয়ে যে দীনি কাজে সহায়তা করেছেন, সে মহৎ কাজের অংশ হিসেবে বাড়ি ভাড়া ৫০ শতাংশ কমিয়ে বিলম্বে ভাড়া প্রদানের অনুমতি ও বাড়িতে মাদ্রাসা বহাল রাখার মাধ্যমে দীনি ইলমের খেদমতে শামিল থাকবেন বলে আশা প্রকাশ করা হয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, পবিত্র রমজান ও শবেবরাতের আগেই কওমি মাদ্রাসাগুলোয় বার্ষিক পরীক্ষা শেষ করে ছুটি শুরু হয়। রোজার ঈদের পরই নতুন শিক্ষাবর্ষের কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের কারণে রমজানের দেড় মাস আগেই মাদ্রাসাগুলো বন্ধ হয়ে যায়। ঠিকমতো পরীক্ষাও শেষ করা যায়নি। আর ঈদের পর ভর্তি কার্যক্রমে সরকার অনুমতি দিলেও যাতায়াত ও আবাসন সমস্যার কারণে অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারেনি।

 

সর্বশেষ খবর