শনিবার, ১১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

যুক্তরাষ্ট্রে বেকার ভাতা সম্প্রসারিত হবে ডিসেম্বর পর্যন্ত

লাবলু আনসার, যুক্তরাষ্ট্র

‘করোনাভাইরাসে ক্ষত-বিক্ষত আমেরিকানদের আর্থিকভাবে জাগিয়ে তোলার লক্ষ্যে শিগগিরই দ্বিতীয় করোনা-স্টিমুলাস চেক ইস্যুর প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে চান প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে তা কোনোভাবেই গ্রহীতার প্রকৃত আয়ের বেশি যাতে না হয় সে ধরনের কৌশল অবলম্বন করতে হবে’-এ কথা বলেছেন ট্রাম্পের ট্রেজারি সেক্রেটারি তথা অর্থমন্ত্রী স্টিভেন মুনুচিন। যারা করোনার কারণে বেকার হয়ে পড়েছেন, তাদের জন্য করোনা-স্টিমুলাস চেক ইস্যুর একটি বিল গত মার্চে ‘কেয়ারস’ পাস হয় কংগ্রেসে। বরাদ্দ ছিল ২.২ ট্রিলিয়ন ডলার। সে অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিক ১২ শত ডলার করে (অপ্রাপ্ত বয়স্করা ৫০০ ডলার) পেয়েছেন। এ ছাড়া প্রতি সপ্তাহে বেকার ভাতা হিসেবে ফেডারেল থেকে ৬০০ ডলার করে পাচ্ছেন। সঙ্গে রয়েছে নিজ নিজ স্টেটের বরাদ্দ। এর ফলে গড়ে মাথাপিছু ৮০০ ডলারের অধিক পাচ্ছেন প্রায় সবাই। রিপাবলিকান সিনেটর এবং কংগ্রেসম্যানসহ  প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ধারণা, অনেকের সাপ্তাহিক বেতন ৬০০ ডলারের নিচে ছিল। তারা এতবেশি অর্থ পাওয়ায় কখনই কাজে ফিরতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাই দ্বিতীয় করোনা স্টিমুলাস বিল পাসের সময় এ বিষয়টি বিশেষভাবে নজরে রাখতে হবে। উল্লেখ্য, গত ১৫ মে ডেমোক্র্যাটদের ভোটে ৩ ট্রিলিয়ন ডলারের দ্বিতীয় করোনা স্টিমুলাস (হিরোজ অ্যাক্ট) বিল হাউসে পাস হয়েছে। সেখানে বর্তমানের মতোই আবারো এককালীন ১২০০ ডলার প্রদানের সঙ্গে ফেডারেল থেকে সপ্তাহে ৬০০ ডলার করে বেকার ভাতা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত রাখার প্রসঙ্গ রয়েছে। কিন্তু রিপাবলিকান শাসিত ইউএস সিনেট সেই বিল আমলে নেননি এখন পর্যন্ত। যদিও ৩১ ডিসেম্বর শেষ হয়ে যাবে প্রথম করোনা স্টিমুলাসের মেয়াদ। এমনি অবস্থায় ৩৬ স্টেটে করোনা সংক্রমণের হার চরমে ওঠায় সেসব স্টেটে পুনরায় লকডাউনের ন্যায় নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হচ্ছে। তাই, আরেকটি স্টিমুলাস বিলের বিকল্প নেই বলে ভাবছেন সবাই। তারই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী নিজেও স্বীকার করেছেন যে, আমেরিকার নাজুক অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার স্বার্থেই আরেকটি স্টিমুলাস জরুরি হয়ে পড়েছে। এই স্টিমুলাসে আরেকটি প্রসঙ্গ সংযোজনের পরামর্শ দিয়েছেন ট্রাম্পের নীতি-নির্ধারকরা। সেটি হচ্ছে, যারা কাজে ফিরবেন তাদের প্রণোদনার ব্যবস্থা। যাতে কেউই বেকার হয়ে থাকতে না চান। গত ৯ জুলাই বৃহস্পতিবার সিএনবিসি টিভিতে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অর্থমন্ত্রী সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন, করোনা প্রকোপের আগে চাকরিতে যত অর্থ পেয়েছেন তার সমপরিমাণের বরাদ্দ থাকতে হবে করোনা স্টিমুলাসে। কোনোভাবেই যাতে বেশি না হয় সেটি খেয়াল রাখতে হবে ট্যাক্স প্রদানের রেকর্ড দেখে। অপরদিকে, ডেমোক্র্যাটরা জোরালো যুক্তি দেখিয়ে বলেছেন, করোনায় লকডাউনে থাকায় আমেরিকায় ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। এহেন অবস্থার অবসান ঘটাতে প্রচুর অর্থ মার্কেটে ছাড়তে হবে। ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য স্বল্প অথবা নামমাত্র সুদে ঋণের পাশাপাশি নাগরিকরাও যাতে কেনাকাটায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন, সে জন্যই স্টিমুলাস চেকের পরিমাণ বাড়ানো দরকার। সিনেটে ফাইন্যান্স কমিটির প্রভাবশালী মেম্বার ওরেগনের সিনেটর (ডেমোক্র্যাট) রন ওয়াইডেন বৃহস্পতিবার গণমাধ্যমে বলেছেন, এখনো বেকারের হার ১১% এর বেশি এবং চলতি সপ্তাহে ২৩ লক্ষাধিক আমেরিকান বেকার ভাতার জন্য আবেদন করেছে। এমনই পরস্পর বিরোধী অবস্থানের মধ্যদিয়ে করোনায় ল-ভ- জনজীবন এক ধরনের হতাশার মধ্যে নিপতিত হয়েছে। ক্যাপিটল হিলের সূত্রগুলো অবশ্য আশা প্রকাশ করেছে যে, ৩১ জুলাই প্রথম স্টিমুলাসের বেকার ভাতার মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই দ্বিতীয় স্টিমুলাস বিল পাস হবে। এ নিয়ে ভিতরে ভিতরে সমঝোতা চলছে উভয় পার্টিতে। কারণ, নভেম্বরের নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দিতে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকান পার্টি-উভয়কেই ভোটারের এই করুণ দশায় পাশে দাঁড়াতে হবে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দর-কষাকষি করছেন নিজের ভোট ব্যাংক ভারী করার অভিপ্রায়ে-এমন মন্তব্য করেছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। সেই ভোটের বাজারে নিজেদের অবস্থানকে আরও সুসংহত করার অভিপ্রায়েই ডেমোক্র্যাটরা হাউসে হিরোজ অ্যাক্ট বিল পাসে কালক্ষেপণ করেননি। সেই বিলে একজন রিপাবলিকানও সমর্থন দেননি। তাই, ওই বিলের পরিপূরক কিছু সিনেটে পাস হলে পুরো ক্রেডিট যাবে ডেমোক্র্যাটদের পকেটে-সেটি চান না রিপাবলিকান ট্রাম্প এবং তার দলের নেতারা।

সর্বশেষ খবর