শিরোনাম
রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

সবুজ গালিচার বেলাভূমি কাট্টলী সৈকত

ফারুক তাহের, চট্টগ্রাম

সবুজ গালিচার বেলাভূমি কাট্টলী সৈকত

দেশের সমুদ্রসৈকত বলতে প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটার চিত্র। কিন্তু এর বাইরে আরও যে বেশ কয়েকটি সমুদ্রসৈকত দেশের ভিতরে রয়েছে তা অনেকেরই অজানা। এমন একটি দৃষ্টিনন্দন আর নিরিবিলি সমুদ্রসৈকত হলো কাট্টলী সমুদ্রসৈকত। চট্টগ্রাম শহরতলির ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দক্ষিণ পাশে আকর্ষণীয় এই সমুদ্রসৈকতের অবস্থান। পলি-মৃত্তিকাময় বিস্তীর্ণ বেলাভূমির এই সৈকত আয়তনের দিক থেকে পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকতের চেয়েও বিশাল। সৈকতের উপকূলের অধিকাংশই সবুজ ঘাসে আচ্ছাদিত। দূর থেকে মনে হয়, যেন সবুজ গালিচা বিছানো কোনো নান্দনিক স্বপ্নরাজ্য। আর কিছু অংশ জুড়ে রয়েছে ঝাউয়ের বীথি ও কেওড়া বন, জোয়ারের সময় যেখানে খেলা করে ফেনিল ঢেউয়ের জলরাশি। প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম ভ্রমণ স্পটটি ধীরে ধীরে চট্টগ্রামসহ দেশের পর্যটকদের কাছে বেড়ানোর প্রিয় জায়গা হয়ে উঠেছে। কারও কারও কাছে এই সৈকতটির নাম কাট্টলী জেলেপাড়া সৈকত নামেও পরিচিত। তাই শীত মৌসুমে কাট্টলী সৈকত দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের কাছে প্রিয় হলেও বর্ষা মৌসুমে এখানে শোনা যাবে জেলেদের হাঁকডাক আর দেখা যাবে রুপালি ইলিশের ছড়াছড়ি। তাই চলমান করোনা পরিস্থিতির কারণে গত প্রায় তিন মাস পর্যটকদের তেমন আনাগোনা না থাকলেও চলতি বর্ষা মৌসুমে জেগে উঠেছে কাট্টলী সমুদ্রসৈকত। এতদঞ্চলে কাট্টলীর ইলিশ ও লইট্যা মাছের রয়েছে আলাদা স্বাদ ও কদর। জেলেদের ইলিশ শিকারের মৌসুমে স্বাদের ইলিশ কিনতে এই সৈকতে জড়ো হয়ে থাকেন চট্টগ্রামসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলার মানুষ।

কাট্টলী সমুদ্রসৈকতের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সহজেই বিমোহিত করে প্রকৃতিপ্রেমীদের। একদিকে সমুদ্রসৈকত আর একদিকে গ্রামীণ পরিবেশ। এই সৈকতের পাশেই রয়েছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ভেন্যু জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম। যারা স্টেডিয়ামে খেলা দেখতে যান, তাদের জন্য সৈকতে বেড়ানোটা একটি বাড়তি পাওনা হয়ে থাকে। এখানে বসেই সুনসান নীরবতায় অবলোকন করা যায় সূর্যাস্তের মুগ্ধকর দৃশ্য। আবার বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে কাট্টলী সমুদ্রসৈকতের রানী রাসমণি বারুণী ঘাটে অসংখ্য পুণ্যার্থীর ঢল নামে। প্রতি বছর চৈত্র মাসের মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে সনাতনী সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থীরা রানী রাসমণি বারুণী ¯œানঘাটে পাপমুক্তির প্রত্যাশায় বঙ্গোপসাগরে ¯œান করে থাকেন।

এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সহজেই পর্যটকদের মুগ্ধ করে। কেওড়া বনে দেখা যায় নানা প্রজাতির পাখি। সামুদ্রিক পাখি ছাড়াও সৈকতে বিচরণ করে ঘুঘু, কাঠশালিক, দোয়েল, ভাটশালিক, খঞ্জনা। উড়ি ঘাসের সবুজ সৈকত, ম্যানগ্রোভ বন, আঁকাবাঁকা খাল, পাখির ঝাঁক, ডিঙি নৌকা, জালটানা জেলে- সব মিলিয়ে এ যেন কল্পনার বুকে আঁকা এক নিখুঁত ছবি। এখানে সন্ধ্যা হলে তারার মতো জ্বলে ওঠে সাগরের বহির্নোঙরে থাকা জাহাজগুলোর বাতি।

কাট্টলী সমুদ্রসৈকতের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এর শান্ত সৌম্য সৌন্দর্য। কিন্তু বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাবে নৈসর্গিক সৌন্দর্যের এ জায়গাটি ঘিরে পর্যটনশিল্পের বিকাশ হতে পারে অনায়াসে।

সর্বশেষ খবর