রবিবার, ১২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বায়রায় ফের অচলাবস্থা

একযোগে কমিটির ১৪ সদস্যের পদত্যাগ

জুলকার নাইন

রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর সংগঠন বায়রায় ফের অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। বর্তমান সভাপতির বিরুদ্ধে শ্রমবাজারে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের অভিযোগ তুলে একযোগে পদত্যাগ করেছেন বায়রার কার্যনির্বাহী কমিটির ১৪ জন সদস্য। কমিটির এতজন সদস্যের পদত্যাগের পরও বর্তমান কমিটি তার মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমলে নেওয়া হচ্ছে না আদালতের আদেশও। আদালত অবমাননা করেই কমিটির মেয়াদ এক বছর বৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে কমিটির একাংশ।

গত ২ জুলাই বায়রা সভাপতির কাছে পদত্যাগ পত্র জমা দেন কমিটির ১৪ সদস্য। সভাপতির নির্দেশে পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে বায়রা সচিব। পদত্যাগপত্রে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮-২০ মেয়াদের কার্যনির্বাহী কমিটি গঠিত হওয়ার পর থেকে কমিটির অধিকাংশ সদস্যের আপত্তি থাকা সত্ত্বেও আপনি বায়রা সভাপতি হিসেবে অদ্যবধি সংগঠনের স্বার্থবিরোধী এবং বায়রার সংঘবিধি পরিপন্থী কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন। যেমন গত বছরের ২৫ এপ্রিল বায়রার লেটারহেডে সৌদি দূতাবাসে দুই ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ভিসা সেন্টার অনুমতি প্রদানের জন্য আপনার স্বাক্ষরিত দুটি অনুরোধপত্র প্রেরণ করেন। যা বায়রার বিধি পরিপন্থী এবং সংগঠনের স্বার্থবিরোধী। পদত্যাগপত্রে বলা হয়েছে, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা অনুমতি ছাড়া আপনার ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানে বায়রার অফিশিয়াল লেটারহেডে বর্তমান মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান স্বাক্ষরিত শ্রমবাজার উন্মুক্তকরণ প্রক্রিয়ার বিভিন্ন মতামত দিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয় মালয়েশিয়া সরকারের কাছে। যা ছিল কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত, রাষ্ট্রবিরোধী এবং সরকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনস্বরূপ। এই চিঠির কারণে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত করার প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়েছে। পরবর্তীতে মালয়েশিয়া সরকার বরাবর চিঠিকে কেন্দ্র করে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বায়রার একটি বিরূপ সম্পর্ক তৈরি হয়। যার ফলস্বরূপ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রী বায়রার সভাপতি বরাবর তিরস্কার পত্রও দেন। এটি বায়রার ইতিহাসে সবচেয়ে লজ্জাজনক ঘটনা। এর কারণে বায়রা তার অপূরণীয় ইমেজ সংকটে পড়েছে। পদত্যাগ পত্রে আরও বলা হয়, বায়রার বর্তমান সভাপতি হিসেবে আপনার তত্ত্বাবধানেই রাজউকের অনুমতি ছাড়াই বায়রা টেকনিক্যাল ও ট্রেনিং সেন্টারটি নির্মাণ কাজ চলমান। এক্ষেত্রে বায়রা এজিএম বা ইজিএম এর অনুমোদন ছাড়াই এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে বায়রার ফান্ড থেকে ইচ্ছামাফিক টাকা ব্যয় করছেন। ইতিমধ্যেই ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। এটাও বায়রার বিধি পরিপন্থী। এ ছাড়াও আপনি কার্যনির্বাহী কমিটির অনুমোদন ছাড়াই বায়রার ফান্ড থেকে অনিয়মতান্ত্রিক অর্থ ব্যয় করে চলেছেন।  ফলে বায়রার ফান্ডে আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। গত ১৯ মে অনলাইন মিটিংয়ে আপনার বিতর্কিত ও সংগঠনবিরোধী কর্মকান্ডের সমালোচনা করায় সদস্যদের বহিষ্কার করতে চেয়েছে। এমন স্বৈরাচারী মানসিকতা বায়রার ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি। ইতিমধ্যেই আপনার অনৈতিক কর্মকান্ডের বিরোধিতা করায় কার্যনির্বাহী কমিটির তিন সদস্যকে আইন বহির্ভূতভাবে বহিষ্কার করেছেন। ব্যক্তিগত ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য বায়রার ফান্ড থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন। পদত্যাগপত্রে সদস্যরা লিখেছেন, পরপর দুই মেয়াদে অগণতান্ত্রিক পন্থায় বায়রা সভাপতির পদ দখল করার পরও বর্তমান করোনাভাইরাসের মহামারীর সুযোগ নিয়ে আবারও বায়রা সভাপতি পদ দখলের অপচেষ্টা করছেন। এতে বায়রার গণতান্ত্রিক নির্বাচনী ধারা ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। পদত্যাগ করা সদস্যরা হলেন- শফিকুল আলম ফিরোজ, মো. আবদুল হাই, মনসুর আহমেদ কালাম, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, সওকত হোসেন শিকদার, এস এম নাজমুল হক, মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকী খোকন, কফিলউদ্দিন মজুমদার, এএইচ মোসলেহ উদ্দিন, মো. মিজানুর রহমান মজুমদার, মোহাম্মদ রফিক হায়দার ভূইয়া, মোহাম্মাদ আলী, মো. গোলাম মাওলা রিপন, মোহাম্মদ শাহ আলম চৌধুরী। একই চিঠিতে দেওয়া পদত্যাগপত্র থেকে মনসুর আহমেদ কালাম, সওকত হোসেন শিকদার, এসএম নাজমুল হক ছাড়া বাকিদের পদত্যাগপত্র বায়রার সভাপতি হিসেবে গ্রহণ করা হলো উল্লেখ করে স্বাক্ষর করেছেন বায়রা সচিব মো. আবদুল জলিল। জানা যায়, বায়রার বর্তমান কমিটির মেয়াদ আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর শেষ হওয়ার কথা। বর্তমান সভাপতি কমিটির একাংশ নিয়ে করোনা পরিস্থিতিকে কারণ দেখিয়ে আগামী বছরের ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেয়াদ বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন।  ইতিমধ্যেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে আলোচনাও করেছেন বায়রা সভাপতি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে করোনা পরিস্থিতির কারণে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সব নির্বাচনী কার্যক্রম বন্ধ রাখার আদেশও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সুপ্রিম কোর্টের ২০১৬ এবং ২০১৮ সালের দুটি আদেশ অনুসারে বায়রার কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই। বরং এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে কমিটি বিলুপ্ত করে প্রশাসক বসিয়ে সুবিধামতো সময়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বাণিজ্য সংগঠনের অধীনে নির্বাচন আয়োজনের কথা বলা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আদেশ অমান্য করে কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধির চিন্তাকে আদালত অবমাননা মনে করছেন পদত্যাগী সদস্যরা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর