বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

শনাক্তের চেয়ে সুস্থতা বেশি

নতুন শনাক্ত ৩১৬৩, সুস্থ ৪৯১০ জন, মৃত্যু ৩৩

নিজস্ব প্রতিবেদক

শনাক্তের চেয়ে সুস্থতা বেশি

নমুনা পরীক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে বিতর্কের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে সুস্থতার হার। দেশে এখন দৈনিক যে সংখ্যক করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে তার চেয়ে সুস্থ হচ্ছে আরও বেশি মানুষ। শেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৩ হাজার ১৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পক্ষান্তরে একই সময়ে সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৯১০ জন। মৃত ও সুস্থ হওয়া মানুষ বাদ দিলে দেশে এখন শনাক্তকৃত করোনা রোগী আছে ৮৪ হাজার ৪০৬ জন। সব মিলে গতকাল পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ লাখ ৩ হাজার ২২৭ জন।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে যোগ দিয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা দেশে করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার তুলনায় শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। এ পর্যন্ত নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় রোগী শনাক্তের হার ১৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। এখন পর্যন্ত শনাক্ত রোগী বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৪ দশমিক ৩১ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ২৮ শতাংশ। তবে সুস্থতার হার আশা জাগালেও নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমায় শঙ্কা প্রকাশ করেছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, পরীক্ষা কম হওয়ায় শনাক্ত কমেছে। তাই শনাক্তের চেয়ে সুস্থতার সংখ্যা বেড়ে গেছে। তিন মাসে ল্যাবের সংখ্যা বেড়ে দ্বিগুণ হলেও  উল্টো নমুনা পরীক্ষা কমে গেছে। জুনের শেষ দিকেও দৈনিক ১৮ হাজারের মতো নমুনা পরীক্ষা করে ৩৭ হাজারের মতো নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। তখন শনাক্তের হার ছিল ২০-২১ শতাংশ। এখন এই হার বেড়ে হয়েছে ২৩-২৪ শতাংশ। কিন্তু পরীক্ষা কমিয়ে দেওয়ায় রোগী শনাক্ত কম হচ্ছে। ফলে অনেক আক্রান্ত মানুষ স্বাভাবিকভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছে ও রোগ ছড়াচ্ছে। তরুণরা স্বাভাবিক চিকিৎসায় সহজে করোনা থেকে মুক্তি পেলেও প্রবীণ ও অন্যান্য রোগে আক্রান্তরা চরম ঝুঁকিতে আছে। বর্তমানে যারা মারা যাচ্ছেন তার ৮০ ভাগই পঞ্চাশোর্ধ্ব। ব্রিফিংয়ের তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৯টি ল্যাবে (পরীক্ষাগার) ১৩ হাজার ৪৫৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে ৩ হাজার ১৬৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার ৫৭ জন। এর আগের দিন ১২ হাজার ৪২৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছিল। অথচ গত ৩০ জুন সকাল ৮টা পর্যন্ত ১৮ হাজার ৪২৬টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। পরদিন করা হয় ১৭ হাজার ৮৭৫টি।

এদিকে দেশে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ২ হাজার ৪২৪ জন। নতুন করে মারা যাওয়া ৩৩ জনের মধ্যে ২৩ জন পুরুষ ও ১০ জন নারী। তাদের মধ্যে ত্রিশোর্ধ্ব দুজন, চল্লিশোর্ধ্ব চারজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ছয়জন, ষাটোর্ধ্ব নয়জন, সত্তরোর্ধ্ব ১১ জন এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী একজন ছিলেন। ১৩ জন ছিলেন ঢাকা বিভাগের, তিনজন চট্টগ্রাম বিভাগের, চারজন রাজশাহী বিভাগের, পাঁচজন সিলেট বিভাগের, পাঁচজন খুলনা বিভাগের, দুজন রংপুর বিভাগের এবং একজন বরিশাল বিভাগের। হাসপাতালে মারা গেছেন ২৯ জন এবং বাসায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের।

এদিকে করোনা রোগীর চিকিৎসার জন্য সরকার নানা উদ্যোগ নিলেও রোগীদের বেশির ভাগই হাসপাতালমুখী হচ্ছে না। ফলে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোর ৭০ শতাংশের বেশি শয্যা খালি রয়েছে। এমনকি আইসিইউ নিয়ে হাহাকারের মধ্যেও রোগী নেই প্রায় ৪৪ শতাংশ আইসিইউ শয্যায়। এতে প্রকৃতপক্ষে হাসপাতালগুলোর ওপরে তেমন চাপ নেই বললে চলে। রোগী না আসার ব্যাপারে চিকিৎসকরা বলছেন, ভাইরাসটি দুর্বল হয়ে পড়ায় মানুষ বাড়িতে চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হচ্ছেন। তাই হাসপাতালে আসতে চাইছেন না। তবে রোগীরা বলছেন, বাড়িতে যতটুকু যত্ন পাওয়া যায় হাসপাতালে গেলে তাও পাওয়া যায় না। এমনকি চিকিৎসকদের দেখাও পাওয়া যায় না।

গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। আর ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

আমাদের বিভিন্ন জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন সেখানকার সর্বশেষ করোনা পরিস্থিতি-

চাঁদপুর : নতুন করে ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় জেলায় রোগীর সংখ্যা হয়েছে ১ হাজার ৩৪১ জন। এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৬৬ জনের। সুস্থ হয়েছেন ৭১৬ জন। গতকাল ঢাকা থেকে রিপোর্ট এসেছে ৭০টি। তার মধ্যে পজিটিভ ৪২টি এবং নেগেটিভ ২৮টি। শনাক্তের হার ৬০ শতাংশ।

দিনাজপুর : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ২৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৯৯৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৯৫ জন। মারা গেছেন ১৯ জন।

নোয়াখালী : নতুন করে ৩০ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় জেলায় রোগীর সংখ্যা হয়েছে ২ হাজার ৫৭১ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৫৫ জন, সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৫৬ জন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ : ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৬ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় জেলায় রোগীর সংখ্যা হয়েছে ২২৫ জন। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৯৩ জন।

লক্ষ্মীপুর : নতুন করে ৮ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় জেলায় রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৯৭ জন। মোট মারা গেছেন ২৪ জন। সুস্থ হয়েছেন ৭১৬ জন।

বাগেরহাট : ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২০ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ায় রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৪৩ জনে। এর মধ্যে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। ১৯০ জন সুস্থ হয়েছেন।

বগুড়া : নতুন করে আরও ৪৫ জনের দেহে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৩ হাজার ৮০৮ জনে দাঁড়িয়েছে।

গাজীপুর : ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২ জনের দেহে। এ নিয়ে গাজীপুরে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৯২ জনে। এ পর্যন্ত জেলায় সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৭৫৯ জন। মারা গেছেন ৫০ জন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর