বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা সংকটেও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে অগ্রণী ব্যাংক

শামস-উল ইসলামের স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু কর্নার ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনা সংকটেও প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে অগ্রণী ব্যাংক

আধুনিক তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করে করোনা দুর্যোগের মধ্যেও স্বাভাবিকভাবে ব্যাংকিং সেবা দিয়ে যাচ্ছে দেশের অন্যতম রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করে অফিসের পাশাপাশি বাসা থেকে পুরোদমে কাজ করছেন ব্যাংকের সব পর্যায়ের কর্মী। এতে সংকটের মধ্যেও ব্যাংকটির ব্যবসায় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭০-৮০ শতাংশ। পরিচালন মুনাফা হয়েছে ৫৩১ কোটি টাকা। বর্তমানে অগ্রণী ব্যাংকের ভিত অনেকটাই মজবুত। ব্যাংক খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখতের যথাযথ দিকনির্দেশনা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল ইসলামের দক্ষ নেতৃত্বে ক্রমশ উন্নতির দিকে এগোচ্ছে ব্যাংকটি।

২০১৬ সালের ২৮ আগস্ট অগ্রণী ব্যাংকের এমডি হিসেবে যোগ দেন শামস্-উল ইসলাম। দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি অগোছালো অগ্রণী ব্যাংককে নতুন আঙ্গিকে ঢেলে সাজিয়েছেন। দায়িত্ব নেওয়ার সময় ব্যাংকের সব ব্যবসায়িক সূচক ছিল নিম্নগামী। কিন্তু তিনি দায়িত্ব গ্রহণের চার মাসের মধ্যেই ব্যাংকের সব ব্যবসায়িক সূচকে বড় অগ্রগতি ঘটাতে সক্ষম হন। এরপর থেকে ক্রমশ উন্নতির দিকে যাচ্ছে ব্যাংকটি। সন্তোষজনক পারফরম্যান্সের কারণে এক মেয়াদ শেষ করে দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্ব পান এই এমডি। করপোরেট আবহে বঙ্গবন্ধু কর্নারের স্বপ্নদ্রষ্টা এই ব্যাংকার বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা থেকে সর্বপ্রথম ২০১০ সালে অগ্রণী ব্যাংকের মৌলভীবাজারের আঞ্চলিক কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু কর্নার প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে আনসার ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক এবং সর্বশেষ অগ্রণী ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের ষষ্ঠতলায় জাতির জনকের ম্যুরালসহ পূর্ণাঙ্গ অবয়বে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপন করেছেন। পরবর্তীতে দেশের করপোরেট অফিস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও দূতাবাসে বঙ্গবন্ধু কর্নার স্থাপিত হয়েছে।

কয়েক বছর ধরেই রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের অগ্রগতি সন্তোষজনক। মহামারী করোনার মধ্যেও চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে ব্যাংকটি ৫৩১ কোটি টাকা পরিচালন মুনাফা করেছে, গত বছরের একই সময় যা ছিল ৩১৯ কোটি টাকা। রেমিট্যান্স আহরণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মধ্যে শীর্ষে এবং দেশের সব ব্যাংকের মধ্যে দ্বিতীয়। সরকারি এই ব্যাংকটিতে দ্রুত কমছে খেলাপি ঋণ ও লোকসানি শাখা। আমানত ও ঋণ বিতরণের প্রবৃদ্ধিও সন্তোষজনক। স্বপ্নের পদ্মা সেতু, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারসহ বেশ কয়েকটি বড় প্রকল্পে অর্থায়ন করেছে ব্যাংকটি। এমনকি করোনার ক্ষতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণে এগিয়ে রয়েছে ব্যাংকটি। এভাবে দেশের উন্নয়ন ও সামাজিক দায়িত্ব পালনে কার্যকর ভূমিকা রেখে চলছে অগ্রণী ব্যাংক।

অগ্রগতির ধারাবাহিকতা সম্পর্কে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি মো. শামস-উল ইসলাম বলেন, অগ্রণী ব্যাংকের নাম দিয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। হাবিব ব্যাংক এবং কমার্স ব্যাংক একত্র করে এই ব্যাংকের নামকরণ করা হয়। বঙ্গবন্ধুর হয়তো প্রত্যাশা ছিল ব্যাংকটি ‘অগ্রে’ থাকবে। আমি মনে করি, জাতির পিতার দেওয়া নামের স্বার্থকতা আমরা ইতিমধ্যে প্রমাণ করতে পেরেছি। আমরা এখন অগ্রে রয়েছি। করোনার মধ্যেও চলতি বছরের ছয় মাসে ৫৩১ কোটি টাকার পরিচালন মুনাফা করেছি। ঋণের সুদ ৯ শতাংশে নামিয়ে আনা ও করোনার কারণে বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকের পরিচালন মুনাফা কমেছে, সেখানে অগ্রণী ব্যাংক কীভাবে এত বেশি মুনাফা করেছে জানতে চাইলে শামস-উল ইসলাম বলেন, আমরা কয়েকটা ক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করেছি। বিশেষ করে যখন দেখেছি আমাদের সুদের হার কমিয়ে দিতে হবে, তখন কিন্তু আমরা আয় বাড়ানোর বিকল্প যতগুলো রাস্তা আছে সবগুলোতে হাত দিয়েছি। আমরা খরচ কমিয়ে আয় বাড়িয়েছি। তিনি বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষ আমাদের ব্যাংকের মালিক। তাই মানুষের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ দায়বদ্ধতা থেকে ৩৬টির মতো সেবা বিনা চার্জে দিচ্ছে অগ্রণী ব্যাংক। কারণ, মুনাফা করাই আমাদের মুখ্য উদ্দেশ্য নয়। তবে আমরা যেহেতু ব্যাংক, তাই অর্থনৈতিক মুনাফা যেমন করতে হবে, তেমনি সামাজিক মুনাফাও করতে হবে। মানবিক ব্যাংকার হিসেবে অতুলনীয় শামস-উল ইসলাম করোনার মধ্যেও অগ্রণী ব্যাংকে কর্মরত প্রায় ১৩ হাজার কর্মীর সার্বক্ষণিক খোঁজ রাখছেন। কোথাও কেউ করোনা আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। ব্যাংকের সামগ্রিক বিষয়ে সশরীরে ব্যাংকে এসে কিংবা বাসা থেকেই তদারকি করছেন।  অবকাঠামোতে অর্থায়ন নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শামস-উল ইসলাম বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু প্রকল্পে অগ্রণী ব্যাংক এককভাবে ১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বৈদেশিক মুদ্রা সরবরাহ করেছে। এটা আমাদের একটা বড় অর্জন। পদ্মা সেতু হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ১ থেকে ২ শতাংশ বেড়ে যাবে। এ ছাড়া এখন পর্যন্ত ১৪টি পাওয়ার প্লান্টে অগ্রণী ব্যাংক অর্থায়ন করেছে। এসব পাওয়ার প্লান্টের উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যাচ্ছে। যাত্রাবাড়ীর মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারেও আমরা অর্থায়ন করেছি। আগে ওই রোডে কী অসহনীয় যানজট ছিল। ফ্লাইওভার চালু হওয়ার পর সেটি এখন নেই।

বঙ্গবন্ধু কর্নার করার অনুপ্রেরণা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাত বছর আমি দেশের বাইরে ব্যাংকিং করেছি। ক্যারিয়ারের ১৬ বছর কাটিয়েছি চট্টগ্রামে। ২০০৯ সালের ১ জানুয়ারি আমি জিএম পদোন্নতি পেয়ে প্রধান কার্যালয়ে আসি। সে সময় আমাকে হেড অব আইটি করা হয়। একই সঙ্গে সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। সিলেট যাওয়ার পর আমার মনে হলো, দেশ স্বাধীন না হলে আমি জিএম হতে পারতাম না। হয়তো হাবিব ব্যাংকের এসপিও পর্যন্ত যেতে পারতাম। যার জন্য দেশটি স্বাধীন হলো, আমি জিএম হতে পারলাম, সেই বঙ্গবন্ধুর সম্মানে কিছু করার ইচ্ছা হলো। আমি ভাবলাম জাতির পিতাকে কীভাবে কৃতজ্ঞতা ও শ্রদ্ধা জানানো যায়। আমি তো কবি না যে কবিতা লিখতে পারব, আমি আর্টিস্ট না যে ছবি আঁকব বা ম্যুরাল তৈরি করব। ওই রকম লেখক না যে উনাকে নিয়ে বই লিখব। তাই আমি চিন্তা করলাম করপোরেট আবহের কোনো একটি জায়গায় বঙ্গবন্ধুর ওপর কর্নার করতে, যেখানে শুধু বঙ্গবন্ধুর ওপর বই থাকবে। এটা নিয়ে যে এত প্রচার হবে, এটা যে জাতীয় পর্যায়ে চলে যাবে তা আমি চিন্তাও করিনি। আমি যখন প্রধানমন্ত্রীর কাছে ত্রাণ দিতে গেলাম তখন আমি পকেটে করে আনসার ভিডিপি ব্যাংক এবং অগ্রণী ব্যাংকের বঙ্গবন্ধুর কর্নারের দুটি ছবি নিয়ে গিয়েছিলাম। উনাকে যখন দিলাম তখন তিনি অনেক সময় দেখে বললেন গুড আইডিয়া। পরে ২ থেকে ৩ মাস পরেই পত্রিকায় দেখলাম সরকারি নির্দেশনা এলো সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাইব্রেরিতে বঙ্গবন্ধুর কর্নার করতে হবে। এটা পত্রিকায় দেখার পরেই দুই রাকাত নফল নামাজ পড়েছি। এতদিন আমি যা করেছি জাতির পিতার যোগ্য উত্তরসূরি উপলব্ধি করলেন যে এটি ভালো কাজ। এতদিন খুব টেনশনের মধ্যে ছিলাম কাজটা কি ভালো হলো না, খারাপ হলো। পরে আমি একটি বই ডকুমেন্টারি আকারে করেছি। এখন তো শুধু দেশে না বিদেশের বিভিন্ন দূতাবাস ও হাইকমিশনে বঙ্গবন্ধু কর্নার করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন অর্থনীতিবিদ ড. জায়েদ বখত। করোনার মধ্যেও নিয়মিত অফিস করছেন তিনি। ব্যাংকের সার্বিক বিষয় খোঁজ রাখেন এবং প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। এই অর্থনীতিবিদের আশা করোনা সংকট কাটিয়ে দেশের অর্থনীতি শিগগিরই ঘুরে দাঁড়াবে। এ বিষয়ে ড. জায়েদ বখত বলেন, বাংলাদেশে এ মুহূর্তে যে স্বাস্থ্যগত সমস্যা আছে, সেটার পিকটা আমরা অতিক্রম করতে পেরেছি। আমরা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরছি। সন্দেহ নেই একবার স্বাস্থ্য পরিস্থিতি টেকসই পর্যায়ে গেলে দেশের অর্থনীতিও ঘুরে দাঁড়াবে। কারণ বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত পরিশ্রমী। আগামীতে অর্থনীতি দ্বিগুণ গতিতে এগিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, নির্মাণ খাত অর্থনীতির একটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটার সঙ্গে অর্থনীতির অন্যান্য খাতের একটা লিংকেজ আছে। একটার প্রয়োজনে অন্যগুলোর চাহিদা বেড়ে যায়। আমরা যদি গত দুই দশকের বাংলাদেশের দ্রুত জিডিপি প্রবৃদ্ধির পেছনের কারণ খুঁজি, তাহলে দেখা যাবে নির্মাণ খাতের প্রায় শতকরা ৯ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি সার্বিক জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে। সুতরাং আমরা আশা করি, আগামীতে সে ধরনের পরিস্থিতি থাকবে। এদিকে গত সোমবার অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. শামস-উল ইসলামের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান। এ সময় ব্যবসার সার্বিক বিষয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তারা। সাক্ষাৎকালে অগ্রণী ব্যাংকের এমডি ব্যাংকের বিভিন্ন অগ্রগতি তুলে ধরেন। এতে বসুন্ধরা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাফওয়ান সোবহান মুগ্ধ হন এবং ধন্যবাদ জানান। অগ্রণী ব্যাংকের এমডি সাফওয়ান সোবহানকে তার নিজস্ব উদ্যোগে গড়ে তোলা ‘বঙ্গবন্ধু কর্নার’ ঘুরে দেখান। এ সময় তিনি বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা তিনটি বই, একটি ছবির অ্যালবাম এবং একটি স্মরণিকা উপহার হিসেবে সাফওয়ান সোবহানের নিকট হস্তান্তর করেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর