বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ফের নারী কেলেঙ্কারিতে পররাষ্ট্র দফতরের কর্মকর্তা

কূটনৈতিক প্রতিবেদক

ফের নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নাম। মন্ত্রণালয়ের এক পরিচালক পদমর্যাদার এক পেশাদার কূটনীতিক এবার জড়িয়েছেন কেলেঙ্কারিতে। তার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন ও প্রতারণার অভিযোগ তুলে বিচারের দাবিতে আবেদন করা হয়েছে প্রশাসন অনুবিভাগের প্রধানের কাছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে একাধিক নারী কর্মকর্তা ও দেশি-বিদেশি নারী হয়রানি-হেনস্তার শিকার হলেও কোনোটিরই বিচার হয়নি। এ কারণে বারবার ভাবমূর্তি সংকটে পড়ছে মন্ত্রণালয়। সূত্র জানায়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক পদমর্যাদার কর্মকর্তা মো. রিয়াদ হোসেন (রিপন)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক একজন নারী শিক্ষার্থী। এই নারীর এক ভাই পুলিশ সুপার হিসেবে একটি জেলায় কর্মরত আছেন, অপর এক ভাই ও এক বোনও বিসিএস জুডিশিয়ারি এবং কাস্টমস কর্মকর্তা। ওই নারী পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো আবেদনপত্রে উল্লেখ করেছেন, ‘পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক রিয়াদ হোসেনের সঙ্গে আমার ফেস বুকে পরিচয়। পরিচয় হওয়ার পর গত ১৬ জুন তারিখ থেকে তিনি অনেক পছন্দ করেন, ভালোবাসেন এবং আমাকে ছাড়া তিনি বাঁচবেন না জাতীয় মেসেজ পাঠাতে থাকেন। তিনি শুরুতে আমাকে তার বৈবাহিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানাননি পরে আমি জানতে চাইলে বলেন যে, ওনার সঙ্গে ওনার বৌ-এর সম্পর্ক শেষ দিকে এবং শিগগিরই ডিভোর্স হবে। তিনি আমাকে বৌ বলে সম্বোধন করতে শুরু করেন এবং বলেন যে, গত নয় মাস ধরে ওনার বৌ-এর সঙ্গে ওনার কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয় না। ডিভোর্সের পরে তিনি আমাকে বিয়ে করবেন বলেও আশ্বাস দেন। উনি আমাকে নিয়ে বাংলা এবং ইংলিশে অনেক কবিতা লেখেন এবং আমাকে পাঠান। ওগুলো ওনার হাতের লেখা।’ নিগ্রহের শিকার নারী লিখেছেন, আমি করোনা পরিস্থিতির কারণে ঢাকার বাইরে গ্রামের বাড়িতে থাকতাম। রিয়াদ হোসেন আমাকে বলেন যে, আমাকে উনি দেখার জন্য পাগল হয়ে আছেন এবং আমি যদি না আসতে পারি তাহলে তিনি আমাদের এলাকায় গিয়ে হলেও আমার সঙ্গে দেখা করবেন। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স করা মেয়ে এবং আমার এখন বিয়ের বয়স। আমি ওনার সিরিয়াসনেস দেখে মনে করি যেহেতু উনি আমাকে পছন্দ করেন এবং বৌ-এর সঙ্গে ডিভোর্স হবে এবং ডিভোর্সের পরে আমাকে বিয়ে করবেন, আমি ওনাকে বিশ্বাস করি এবং দেখা করার জন্য ঢাকায় আসি। ঢাকা আসবার পর গত ৬ জুলাই তিনি তার অফিসের গাড়িতে করে আমাকে আমার আত্মীয়ের বাসা থেকে পিক করে শ্যামলী এবং মোহাম্মদপুর এর মাঝামাঝি একটা জায়গায় তার এক বন্ধুর বাড়িতে নিয়ে যান এবং আমার সঙ্গে জোরপূর্বক দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। আমি ব্যাপারটার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। আমি প্রচ- কান্নাকাটি করলে উনি বলেন, আমি তো তোমাকে বিয়ে করব বিয়ের পরে তো আমার সঙ্গেই ... করবা এখন করলে সমস্যা কী। এর পরের দিন আবার তিনি আমাকে ধানমন্ডিতে আরেক বন্ধুর বাসায় নিয়ে আবার দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করেন। আমি পুরো সময়টা একটা ঘোরের মধ্য দিয়ে কাটাই। গত ৮ জুলাই তিনি আমাকে নিয়ে ধানমন্ডির একটা রেস্তোরাঁতে যান এবং নাস অ্যাপার্টমেন্টে দুটি রুম বুকিং দেন। একটি আমার নাম আরেকটি ওনার নাম। দুটি রুমই উনি ওনার ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে বুকিং দেন। আমাদের ওখানে যাওয়ার কথা ছিল ৯ জুলাই কিন্তু ওইদিন ওনার বৌ-এর সঙ্গে কী একটা ঝামেলা হওয়ার কারণে উনি ক্যানসেল করেন। নাস অ্যাপার্টমেন্টের বুকিংয়ের স্ক্রিন শট দিলাম দেখতে পারেন কিংবা যোগাযোগ করলে বুকিং সম্পর্কে জানতে পারবেন। উনি আমাকে প্রস্তাব দেন যে তুমি ঢাকা চলে আস, আমরা জামাই-বৌ হিসেবে একটা বাসা ভাড়া করব বিয়ের আগে পর্যন্ত ওখানে তুমি থাকবে আমি মাঝে মাঝে দেখা করতে আসব। আমার সঙ্গে দেখা হওয়ার আগেই উনি মেসেঞ্জার এবং হোয়াটঅ্যাপ-এ আমাকে ওনার নানা রকম ছবি পাঠান এবং আমাকেও পাঠাতে বলেন। এমনকি উনি ওনার গোপনাঙ্গের ছবিও পাঠান ওনার বাসা থেকে। উনি আমাকে বলেন যে, ওনার বৌ অনেক খারাপ এক মহিলা শুধু তার ছেলের জন্য এতদিন ছিলেন বিয়েতে। ৯ জুলাই সকাল থেকেই রিয়াদ হোসেন আমাকে ইগনোর করা শুরু করে। আমার সঙ্গে ঠিক মতন কথা বলে না, ফোন এটেন্ড করে না এবং দেখা করার কথা বললে নানান অজুহাত দিতে শুরু করে। আবেদনপত্রে ওই নারী লিখেছেন, আমার সঙ্গে যা হয়েছে তা অত্যন্ত অবমাননাকর এবং আমি কিছুতেই ছেড়ে দেব না। যেহেতু আমার ভাই-বোনেরা সরকারি চাকরি করেন তাই এক্ষুনি আমি অন্য কোনো স্টেপ নিচ্ছি না। আপনারা (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) কী ব্যবস্থা নেন তার ওপর ডিপেন্ড করবে আমার নেক্সট স্টেপ।

সর্বশেষ গত ১২ জুলাই আমি রিয়াদ হোসেনকে বলেছি যে, তিনি জাস্ট আমার সঙ্গে খেলেছেন এবং মানুষের জীবন নিয়ে এই খেলার পরিণতি কী উনি হয়তো জানে না। উনি আমাকে বলেছেন যে তুমি যদি মন্ত্রণালয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করো আমার কিছু হবে না, তাই ওই প্ল্যান করে লাভ নাই। আমি জানি আপনারা ওনাকে জিজ্ঞেস করলে উনি বলবেন যে, আমাকে চেনেন না। আমি কিছু ডকুমেন্ট পাঠালাম এগুলো দেখে যদি আপনাদের মনে হয় আমি মিথ্যে বলেছি তাহলে ওনার আমার কিছু যুগল ছবি আছে সেগুলো পাঠাব। উনি যে আমাকে বিয়ে করবেন আশ্বাস দিয়েছেন তার স্ক্রিন শট দিলাম, উনি যে ওনার বাসা থেকে স্পর্শকাতর স্থানের ছবি তুলে পাঠিয়েছেন তাও দিলাম। ওনার অফিসের টিঅ্যান্ডটি থেকে কল ঘণ্টার পর ঘণ্টা সেগুলোর স্ক্রিন শট, যা আপনারা ইচ্ছে করলেই কল লিস্ট থেকে বের করতে পারবেন। রাতের পর রাতে জেগে আমার জন্য তার লেখা কবিতা এবং কমপক্ষে কয়েক হাজার লাইনের মেসেজ দেখে আমার কেন যেন মনে হয়েছিল আমাকে তিনি ভালোবাসেন কিন্তু এখন বুঝতে পারি সব মিথ্যে, প্রতারণা করে আমার সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করা একজন কীভাবে ফরেন ক্যাডার হতে পারে আমি বুঝতে পারি না।

এসব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে কূটনীতিক মো. রিয়াদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অভিযোগের কপি আমাকেও পাঠানো হয়েছে। আসলে আমার বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। আমি পাবলিকলি কথা না বলে মন্ত্রণালয়ের যথাযথ স্থানে আমার জবাব দিব। তবে বিষয়টি নিয়ে আমি আপসেট বলে উল্লেখ করে মো. রিয়াদ হোসেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর