বুধবার, ১৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

নান্দনিক পাখির রাজ্য

মোস্তফা কাজল

নান্দনিক পাখির রাজ্য

এ যেন অন্যরকম পাখির রাজ্য! চারদিকে কিচিরমিচির কলরব। বাহারি রং-বেরঙের পাখি। লেজ, ঠোঁট, পালক-পাখা, একেকটি পাখির একেক রকম। নামও বাহারি রকমের। পাখিদের এই রাজ্যে আগত শিশু- কিশোরদের মনেও আনন্দ। সবমিলিয়ে নজরকাড়া পরিবেশ। এমনি নান্দনিক পরিবেশ বিরাজ করছে রাজধানীর ২২/২, হাতিরপুল ফিকামলি মিনি পাখি চিড়িয়াখানায়। এ চিড়িয়াখানাটি একটি বহুতল ভবনে কৃত্রিমভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। বেসরকারিভাবে গড়ে তোলা বিদেশি পাখির এমন ধরনের চিড়িয়াখানা এটিই বাংলাদেশে প্রথম। এখানে রয়েছে কৃত্রিম ঝরনা। আমাজনের আদলে গাছ-গাছালি। আরও রয়েছে ছনের ঘর।

 এই বাহারি রঙের পাখির চিড়িয়াখানাটি নির্মাণ করেছেন পাখি বিশেষজ্ঞ ড. আবদুল ওয়াদুদ। সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত এ চিড়িয়াখানায় স্থান পেয়েছে কয়েকশ দুর্লভ ও মনমাতানো পাখি। চারতলা বাড়ি। নিচতলায় দুর্লভ ও বিপন্ন প্রজাতির বিদেশি ব্লু গোল্ড ম্যাকাও, লাভ বার্ড, গোল্ডেন রোজেলা, পাবলার, রেড রোজেলা, পিন্যান্ট, কাইফ, গ্রে টিয়া, ইয়েলো টিয়া, ব্লু টিয়া, রেইন বোলরি, কাকারাকি, পোর্ট লিঙ্কন, ফেরারি রোজেলা, বুরকিস প্যারট, সিলভার ফিজেন্ট ও লেডি আমহাস্ট, স্টারলেট ম্যাকাও। দ্বিতীয় তলায় ইলেকটাস প্যারট। এ পাখির কাজকর্ম চমক লাগানো। সুদূর অস্ট্রেলিয়া, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং আমাজনের বনাঞ্চলে এ পাখির বসবাস। বিদেশি এ পাখির আন্তর্জাতিক বাজারমূল্য কয়েক লাখ টাকা। এ পাখির দৈহিক গড়ন যেমন সুন্দর,  তেমনি আকর্ষণীয়। বিরল ও দুর্লভ ইলেকটাস প্যারট গোটা উপমহাদেশে আছে হাতেগোনা কয়েকশ। বাংলাদেশে আছে এমন প্রজাতির মাত্র ১০-১১ জোড়া। এ চিড়িয়াখানায় রয়েছে মাত্র একজোড়া। এছাড়া এখানে রয়েছে একদল চিত্রল হরিণ। গত সপ্তাহে স্ত্রী প্রজাতির হরিণটি একটি শাবকের জন্ম দিয়েছে। হরিণের শ্যাডে দেখা গেছে শাবককে নিয়ে মা হরিণ ঘুরে বেড়াচ্ছে। চিড়িয়াখানার কাকাতুয়া পাখিটি আবার ডিম পেড়েছে। কাকাতুয়া পাখিটি ধবধবে সাদা। এ পাখি নাচতে পারে। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ওয়াইল্ড লাইফ কনজারভেশন অ্যান্ড হিয়ারিং অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ড. আবদুল ওয়াদুদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ২০১২ সাল  থেকে এ পাখিসহ পাঁচ শতাধিক পাখি রয়েছে তার সংগ্রহে। মিনি এ পাখি চিড়িয়াখানায় ঘুরে আরও জানা গেছে, দুর্লভ প্রজাতির এসব পাখি পোষা অনেক ব্যয়বহুল। পরিচর্যায় একটু ব্যতিক্রম বা অবহেলা হলেই মৃত্যুঝুঁকি থাকে। টাকার অঙ্কে একটি পাখির মৃত্যুর ধকল অনেক বেশি হলেও আরেক জোড়া সংগ্রহ করা আরও কঠিন।

সবচেয়ে মজার বিষয় হলো- ময়না, টিয়া, রোজেলা, কাইফ, কাকাতুয়া ও ম্যাকাও পাখিকে আদর করলে পোষ মানে। এমনকি উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেলে এসব পাখি বাংলায় কথা বলতে পারে। এসব পাখির মধ্যে টিয়া, ময়না ও কাইফ ছয় মাস পর পর ২-৩টি করে ডিম পাড়ে। আর এসব পাখি কথা বলে সকাল ও বিকালে। বিদেশি এসব পাখির প্রধান খাদ্য তালিকায় রয়েছে চীনাবাদাম, ভুট্টা, সূর্যমুখী ফুলের বীজ, শসা, কলা, আপেল, গাজর, বরবটি, পেঁপে ও আঙুর। এসব পাখির বেশির ভাগ গভীর জঙ্গলে বড় গাছের কোটরে ও ডালে বাসা বাঁধে। এসব পাখির গড় আয়ু ২৫ থেকে ৪০ বছর। সবমিলিয়ে এ বাড়ির আঙ্গিনায় প্রবেশ করলে মনে হবে পাখির রাজ্যে অবস্থান করছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রতিদিন অনেকে ভিড় করছেন এখানে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের এখানে প্রবেশে কোনো ফি লাগে না।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর