জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক বলেছেন, করোনা ভাইরাস টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট ধরা পড়ায় বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের দিকে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে। এই অনিয়মের কারণে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও করোনা মোকাবিলায় গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির পরামর্শও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এলোমেলো কথাবার্তায় সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। গতকাল তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, গার্মেন্ট খুলে দেওয়ার পর স্বাস্থ্যমন্ত্রী বললেন, গার্মেন্ট কে খুলতে বলেছে তিনি কিছু জানেন না। সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এমন এলোমেলো কথা সাজে না। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বললেন, করোনা তিন বছরের আগে যাবে না। গবেষণা, তথ্য-উপাত্ত ছাড়া এসব কথা জনগণের মধ্যে হতাশা, আতঙ্ক তৈরি করে। সংক্রমণ ছড়ানোর সময় গার্মেন্ট খুলে দিয়ে শ্রমিকদের আসতে বলা হলো। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে এক রকমের লকডাউন করা হলো। কিন্তু কেউ মানল না। জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরিতে যে ধরনের কাজ করা উচিত ছিল তাতেও নজর নেই। জনগণ সব ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু এটা ভুলে গেলে চলবে না। জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে না পারলে মহামারী ঠেকানো সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরের একার পক্ষে পরিস্থিতি সামলানো সম্ভব নয়। কিট, মাস্ক নিয়ে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রতি মানুষের অনাস্থা তৈরি হয়েছে। এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে দুদক তদন্ত শুরু করেছে। কাজী রিয়াজুল হক বলেন, চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মহামারী মোকাবিলা করে যাচ্ছে। অনেকে মারাও গেছেন। চিকিৎসা ব্যবস্থাপনা সঠিকভাবে চালিয়ে নিতে হবে। সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রিজেন্ট হাসপাতালের মেয়াদ না থাকলেও চুক্তি করার দায় স্বাস্থ্য অধিদফতর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এড়াতে পারে না। জেকেজি নামের এই প্রতিষ্ঠানের নাম জীবনেও শুনিনি। তাদের যখন নমুনা সংগ্রহের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দেওয়া হলো তখন অবশ্যই যাচাই করে দিতে হতো। এসব অনিয়মের দায় তারা কীভাবে এড়াবেন? ভুয়া টেস্টের কারণে বিভিন্ন দেশে আমাদের শ্রমবাজার নষ্ট হচ্ছে। প্রবাসী বাংলাদেশিদের দিকে অন্য দেশ বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে। ইতালি থেকে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে দেওয়া হলো। দেশের সুনাম নষ্ট হলো, বিদেশি গণমাধ্যমে সংবাদ ছাপা হলো। এসব দুর্নীতিবাজকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এখনো সময় আছে সমন্বয়ের মাধ্যমে করোনা পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।