শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

মানসিক রোগের মহামারী শুরু হয়েছে

-অধ্যাপক মোহিত কামাল

মানসিক রোগের মহামারী শুরু হয়েছে

বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারী চললেও এরই মধ্যে মানসিক রোগের মহামারী শুরু হয়েছে। মানসিক মহামারীর অন্যতম কারণ হচ্ছে করোনাভাইরাস আমাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। করোনা সংক্রমণের ভয়ে অতিমাত্রায় আতঙ্কিত হলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। এতে মানুষ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যার পাশাপাশি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক মোহিত কামাল গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, একজন মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার ঘুম ও ক্ষুধা চলে যায়, মেজাজে পরিবর্তন ও রাগ হয়, বিরক্তি হয়, মনোযোগ কমে আসে। কথা ও আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। এতে মানুষের সমস্যা সমাধানের যে দক্ষতা তা আর তারা পালন করতে পারে না। এর ফলে যেমন আবেগের ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে ঘরে থাকায় মানুষ অর্থনৈতিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর পরও অসতর্ক মানুষ ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা চিকিৎসকদের সংক্রমিত করছে। দিনমজুর শ্রেণির লোকজন কাজ পাচ্ছেন না। অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও বন্ধ। অনেকের চাকরি চলে যাওয়াসহ বেতন কমে যাচ্ছে। কেউ ঢাকায় ফিরতে পারছে না। অর্থাৎ আর্থিক ও সামাজিক সংকট থেকে মানুষের মধ্যে হতাশা তৈরি হচ্ছে। আর হতাশা থেকে সহিংসতা আসছে। সব মিলিয়ে এক ধরনের স্ট্রেস ডিসওর্ডার হচ্ছে, ডিপ্রেশন, স্থূলতাসহ আগে থেকেই যারা মানসিক রোগে আক্রান্ত ছিলেন তাদের সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ডায়াবেটিস, হৃৎপিন্ডের রোগ ও অ্যাজমার মতো শারীরিক রোগগুলো অনিয়ন্ত্রিত হয়ে যাচ্ছে। আর যখন শারীরিক ও মানসিক রোগগুলো বৃদ্ধি পায় তখন মানসিক স্বাস্থ্যে ধস নামে। ডা. মোহিত কামাল বলেন, এরই মধ্যে মেন্টাল এপিডেমিক বিশ্বব্যাপী শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনায় মৃত্যুহার এখন এত বেশি যে, বিষয়টি ‘আন্ডারমাইন’ হচ্ছে। যখন মৃত্যুহার কমে যাবে তখন মানসিক দুরবস্থার বিষয়টিও দৃশ্যমান হবে। করোনায় যখন একটি পরিবার সংক্রমিত হয় তখন তার প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা দেখতে আসে না। তাদের দুঃসহ অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। ফোনে হয়তো পরিচিতরা খবর নেন। কিন্তু যাদের ঘরে করোনা রোগী আছে তারা যে কি মানসিক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে এটি বলে বোঝানো যাবে না। একটি বাসায় কেউ মারা গেলে তার লাশ দাফন করার জন্যও কেউ যাচ্ছে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অন্তত আমরা অনলাইনে বা ফোনে একে অন্যের খবর নিতে পারি। এটি করা হলে যারা মানসিক ট্রমার শিকার তারা সুস্থ থাকতে পারবেন। বুঝতে হবে যে, মানুষ যতই অসতর্ক হবে ততই চিকিৎসা ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। এই চিকিৎসক বলেন, মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে ও এই অবস্থা থেকে রেহাই পেতে আমাদের নিজের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। তখন সেই ব্যক্তির পরিবারও সুরক্ষিত থাকবে। এই মুহূর্তে এটিই হবে সবার মূল দায়িত্ব। এজন্য স্বাস্থ্যবিধিগুলো যথাযথভাবে মানতে হবে।

সর্বশেষ খবর