রবিবার, ১৯ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

আওয়ামী লীগের সাত শূন্য পদ পূরণ হবে কবে?

► প্রেসিডিয়াম সদস্য ২, সম্পাদকমন্ডলী ২ (ধর্ম ও বাণিজ্য), সদস্য ৩ ► গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৬০ দিনের মধ্যে শূন্যপদ কো-অপ্ট করতে হবে

রফিকুল ইসলাম রনি

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটিতে বর্তমানে সাতটি পদ শূন্য আছে। আগে থেকেই ধর্মবিষয়ক, শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক এবং দুটি কেন্দ্রীয় সদস্য পদ খালি ছিল। প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও সাহারা খাতুন মারা যাওয়ায় প্রেসিডিয়ামের দুটি পদ শূন্য হয়ে গেছে। অপর এক কেন্দ্রীয় সদস্য সিলেটের সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। ফলে কেন্দ্রীয় কমিটির এই সাতটি পদ এখন শূন্য। এসব পদে কারা আসছেন বা আসতে পারেন এ নিয়ে দলে শুরু হয়েছে আলোচনা। তবে কবে নাগাদ পূরণ হবে এসব শূন্য পদ তা কেউ বলতে পারছেন না। অনেকের আশঙ্কা সহসাই পূরণ হচ্ছে না এসব পদ। 

দলের গঠনতন্ত্রের ২৪ ধারার (২) বলা আছে, আওয়ামী লীগের কোনো কর্মকর্তার পদ শূন্য হইলে কার্যনির্বাহী সংসদ উক্ত পদ শূন্য হওয়ার ৬০ দিনের মধ্যে কো-অপ্ট বা মনোনয়ন দ্বারা উক্ত শূন্য পদ অবশ্যই পূরণ করিবে। এক বছর সাত মাস ধরে দুটি সম্পাদকীয় পদ এবং দুটি সদস্য পদ শূন্য থাকলেও এখনো তা পূরণ করা হয়নি। সম্প্রতি তিনজন নেতার মৃত্যুতে তিনটি পদ ফাঁকা হলো। এদিকে মোহাম্মদ নাসিমই ছিলেন জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা একমাত্র সদস্য। তিনি মারা যাওয়ার পর এই প্রথম জাতীয় চার নেতার পরিবার থেকে কোনো সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে নেই। দলের কাউন্সিলে সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনে দলীয় সভানেত্রীর ওপর ক্ষমতা অর্পণ করেন কাউন্সিলররা।

আওয়ামী লীগ প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, পদগুলো অবশ্যই নেত্রী পূরণ করবেন। তবে একটু সময়ের ব্যাপার। এটি নিয়ে চিন্তা করা হচ্ছে না। কারণ আমরা এখনো শোকের রেশই কাটাতে পারিনি। দলীয় সভানেত্রী যখন চাইবেন তখনই নেতা মনোনীত করবেন।

আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, আমাদের দলের কাউন্সিলররা দলীয় সভানেত্রীর ওপর সব ক্ষমতা দিয়ে গেছেন।  সুতরাং নতুন পদে কাকে আনা হবে এই এখতিয়ারটুকু কেবলমাত্র দলীয় প্রধানের হাতেই থাকবে।

কমিটিতে নেই জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্য : ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের প্রতিটি কেন্দ্রীয় কমিটিতে জাতীয় চার নেতার পরিবারের কোনো না কোনো সদস্য ছিলেন। ১৯৭৭ সালে আওয়ামী লীগের আহ্বায়কের দায়িত্ব নেন বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের স্ত্রী সৈয়দা জোহরা তাজউদ্দীন। ১৯৮১ সালে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে বিদেশে নির্বাসিত বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে দলটির সভানেত্রী নির্বাচিত করতে জোরালো ভূমিকা রাখেন জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যরা। জোহরা তাজউদ্দীন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। আলোচিত এক-এগারোর সময়ে আওয়ামী লীগের চরম দুর্দিনে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে অসাধারণ ভূমিকা রাখেন মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তিনি টানা দুই মেয়াদে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। নির্লোভ রাজনীতিবিদ সৈয়দ আশরাফ দল-মত-নির্বিশেষে সব মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। ১৯৮১ সালে ভারতে নির্বাসন থেকে শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসার পর মুক্তিযুদ্ধকালে অর্থমন্ত্রী ও পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী এম মনসুর আলীর দুই পুত্র আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। ১৯৮১ সালে প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের যুব বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন মোহাম্মদ নাসিম। এরপর প্রচার সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, কার্যনির্বাহী সদস্য এবং সর্বশেষ মৃত্যু পর্যন্ত প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন তিনি। এম মনসুর আলীর আরেক ছেলে প্রয়াত মোহাম্মদ সেলিমও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। জাতীয় চার নেতার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বর্তমানে দুজন সংসদ সদস্য রয়েছেন। তারা হলেন- সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা সৈয়দা জাকিয়া নূর, তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা সিমিন হোসেন রিমি। আরেক জাতীয় নেতা এ এইচ এম কামারুজ্জামানের ছেলে এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র। খায়রুজ্জামান লিটন ও সিমিন হোসেন রিমি একাধিকবার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলনে গঠিত কমিটি থেকে তারা বাদ পড়েন। সিমিন হোসেন রিমির ছোট ভাই সোহেল তাজ ২০০৯ সালের আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে অভিমান করে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। বর্তমানে তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। সোহেল তাজের অন্য দুই বোনও রাজনীতিতে যুক্ত হননি। সৈয়দ নজরুল ইসলামের অপর সন্তান সৈয়দ শাফায়াতুল ইসলামের রাজনীতিতে আগ্রহ থাকলেও তিনি কোথাও নেই। মোহাম্মদ নাসিমের মৃত্যুতে উত্তরাঞ্চল অভিভাবক শূন্য বলে মনে করেন তৃণমূল নেতা-কর্মীরা।

সর্বশেষ খবর