বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

হটলাইনে সাড়ে ৭ কোটি ফোনকল

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৩০৫৭, মৃত্যু ৪১

নিজস্ব প্রতিবেদক

করোনায় দ্রুততার সঙ্গে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি করোনার উপসর্গসহ নানা সমস্যা নিয়ে হটলাইনে সাধারণ মানুষের ফোনকল বেড়েই চলেছে। হটলাইন ১৬২৬২ স্বাস্থ্য বাতায়নে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৯ হাজার ৫৮৬টি ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে। শুরু থেকে এখন পর্যন্ত এই ফোনকলের সংখ্যা সাত কোটি ৩৬ লাখ নয় হাজার ২৭৯টি। এ ছাড়া ৩৩৩-এ গত ২৪ ঘণ্টায় কল গ্রহণ করা হয়েছে ৮০ হাজার ১৬৬টি এবং আইইডিসিআরের হটলাইনগুলোতে ২৪ ঘণ্টায় কল গ্রহণ করা হয়েছে ৭৩৯টি। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর মিছিলে যোগ হয়েছে আরও ৪১ জনের নাম। সেইসঙ্গে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৫৭ জন করোনা রোগী। গতকাল করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত অনলাইন ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা। তিনি নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১২ হাজার ৮৯৮টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে তিন হাজার ৫৭ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৩ দশমিক ৭০ শতাংশ। এ নিয়ে দেশে এখন পর্যন্ত করোনা রোগী শনাক্ত হলো দুই লাখ ১০ হাজার ৫১০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে আরও ৪১ জনের। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল দুই হাজার ৭০৯ জনে। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও এক হাজার ৮৪১ জন। এতে সুস্থ হয়ে ওঠা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ১৫ হাজার ৩৯৯ জনে। গত ২৪ ঘণ্টায় যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে পুরুষ ৩৪ জন এবং নারী সাতজন। এদের মধ্যে ২১ বছরের  বেশি বয়সী একজন, ত্রিশোর্ধ্ব দুজন, চল্লিশোর্ধ্ব ছয়জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১২ জন, ষাটোর্ধ্ব ১১ জন, সত্তরোর্ধ্ব সাতজন এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী দুজন ছিলেন। মারা যাওয়া ৪১ জনের মধ্যে ৩২ জনই পঞ্চাশোর্ধ্ব (৭৮ শতাংশ)। তাদের ১৫ জন ঢাকা বিভাগের, ১৫ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, পাঁচজন রাজশাহী বিভাগের, পাঁচজন খুলনা বিভাগের এবং একজন রংপুর বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন। হাসপাতালে মারা গেছেন ৩১ জন এবং বাসায় মৃত্যু হয়েছে ১০ জনের। ব্রিফিংয়ে বলা হয়, হটলাইন ১৬২৬২ স্বাস্থ্য বাতায়নে গত ২৪ ঘণ্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১৯ হাজার ৫৮৬টি। এ পর্যন্ত যার সংখ্যা সাত কোটি ৩৬ লাখ নয় হাজার ২৭৯টি। ৩৩৩-এ ২৪ ঘণ্টায় কল গ্রহণ করা হয়েছে ৮০ হাজার ১৬৬টি এবং আইইডিসিআরের হটলাইনগুলোতে ২৪ ঘণ্টায় কল গ্রহণ করা হয়েছে ৭৩৯টি। সব হটলাইনে ২৪ ঘণ্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে এক লাখ ৪৯১টি।

নমুনা পরীক্ষা নিয়ে বিতর্ক : দেশে করোনা আক্রান্তের হার বাড়তে থাকলেও কমছে নমুনা পরীক্ষা। গত মাসের শেষ দিকেও দৈনিক ১৭-১৮ হাজার নমুনা পরীক্ষা করা হলেও বর্তমানে তা ১০ থেকে ১৩ হাজারের মধ্যে আটকে আছে। এদিকে প্রান্তিক পর্যায়ে নমুনা দেওয়ার পর ১৫ দিনেও মিলছে না পরীক্ষার ফল। এই সময়ের মধ্যে হয় রোগী সুস্থ হয়ে যাচ্ছেন, অথবা মারা যাচ্ছেন। সম্প্রতি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের ল্যাব থেকে হারিয়ে গেছে ৫২ জনের নমুনা। বাংলাদেশ প্রতিদিনের রাজশাহী ব্যুরো থেকে পাঠানো খবরে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার করোনা সন্দেহভাজন ৫২ ব্যক্তির নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য গত ১২ জুলাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ল্যাবে পাঠানো হয়। দীর্ঘদিনে প্রতিবেদন না আসায় বিষয়টি নিয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায় নমুনাগুলো হারিয়ে গেছে। গত সোমবার হারিয়ে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে স্বাস্থ্য বিভাগে তোলপাড় শুরু হয়। ফলে গতকাল পর্যন্ত ওই সন্দেহভাজন ৫২ জনের ফল আসেনি। এদিকে খুলনা ব্যুরো থেকে জানানো হয়েছে, জেলায় নমুনা পরীক্ষা ক্রমেই কমছে। এমনকি মানুষের মধ্যেও নমুনা পরীক্ষার আগ্রহে ভাটা পড়েছে। গত ১৬ জুলাই খুলনা মেডিকেল কলেজের পিসিআর মেশিনে সর্বাধিক ২৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে করোনা শনাক্ত হয় ৭৫ জনের। এরপর খুলনা ল্যাবে গত ১৭ জুলাই ২৩০টি, ১৮ জুলাই ২৪৯টি, ১৯ জুলাই ২১৬টি ও ২০ জুলাই ১৯৫টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এ পর্যন্ত খুলনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৭৩৮ জনের। মারা গেছেন ৫৫ জন। বাংলাদেশ প্রতিদিনের বিভিন্ন জেলা সংবাদকর্মীরা জানিয়েছেন স্থানীয় পর্যায়ে করোনা সংক্রমণের সবশেষ পরিস্থিতি। বগুড়া : জেলায় নতুন করে ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বগুড়ায় মোট শনাক্ত চার হাজার ২২৭ জন, এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ১৮৭ জন, নতুন তিনজন নিয়ে মোট মৃত্যু হয়েছে ৮৩ জনের। বাগেরহাট : মোংলা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে গত রবিবার করোনার উপসর্গ নিয়ে বকুল বেগম (৪০) নামে এক গৃহবধূ মারা গেছেন। গতকাল তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্টে করোনা পজিটিভ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে বাগেরহাট জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়ার সংখ্যা দাঁড়ালো ১০ জনে। এ দিকে জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ২২ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এই নিয়ে বাগেরহাট জেলায় ৪৩৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। বাগেরহাটের সিভিল সার্জন ডা. কেএম হুমায়ুন কবির  মোংলা উপজেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে এক গৃহবধূর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, বাগেরহাট জেলায় এ নিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়ালো ৪৩৩ জনে। এর মধ্যে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ২৬০ জন সুস্থ হয়েছেন। অন্যরা চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নতুন করোনা আক্রান্তদের বাড়িতে ও প্রাতিষ্ঠানিক আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। এসব করোনা আক্রান্তদের পরিবারের সদস্য ও সংস্পর্শে আসা লোকজনকে চিহ্নিত করে তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জ : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৭ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট ৩১৮ জনের দেহে ভাইরাসটি শনাক্ত হলো। মারা গেছেন দুজন।দিনাজপুর : গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এনিয়ে জেলায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এক হাজার ২৩৮ জন। মৃত্যু হয়েছে ২৩ জনের।গাজীপুর : জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছে ২৬ জনের। এ নিয়ে গাজীপুরে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল চার হাজার ৭৮ জনে।

সর্বশেষ খবর