বৃহস্পতিবার, ২৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

নাম-ঠিকানাহীন দেড়শ রিক্রুটিং এজেন্সির খোঁজে সরকার

লাইসেন্স আছে কার্যক্রম নেই

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়ার পর গত ২৫ বছর ধরে কোনো ধরনের কার্যক্রমে নেই ১৫০টি রিক্রুটিং এজেন্সি। তিন বছর পরপর লাইসেন্স নবায়নের শর্ত থাকলেও এরা সেই শর্ত পালন করেনি। এমনকি অনেক প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নম্বর থাকলেও তাদের কোনো নাম ঠিকানা মিলছে না। এখন এসব নাম-ঠিকানাবিহীন রিক্রুটিং এজেন্সির কার্যক্রম অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)। জানা গেছে, লাইসেন্সপ্রাপ্ত নিষ্ক্রিয় এসব প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য চেয়ে সম্প্রতি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-কে চিঠি পাঠিয়েছে বিএমইটি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শামছুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিএমইটি থেকে এ পর্যন্ত ১৮০৬টি প্রতিষ্ঠানকে জনশক্তি রপ্তানির জন্য লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। আমরা যখন দেখতে চাইলাম, এর মধ্যে কতটি প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তখন অন্তত ১৫০ প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেল- যেগুলোর কিছু কিছুর নাম ও লাইসেন্স নম্বর ছাড়া আর কোনো তথ্য নেই। কিছু প্রতিষ্ঠানের শুধু লাইসেন্স নম্বর ছাড়া আর কোনো তথ্যই পাওয়া যায়নি। এই প্রতিষ্ঠানগুলো লাইসেন্স নিয়ে বাস্তবে কী ধরনের কাজ করছে, আদৌ এসব প্রতিষ্ঠানের কোনো অস্তিত্ব আছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা দরকার। সূত্রগুলো জানায়, দেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানির কাজে নিয়োজিত এসব নাম-ঠিকানাবিহীন প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে তথ্য দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ (বায়রা)-কে ১০ দিনের সময় দিয়ে গত ৩০ জুন চিঠি পাঠিয়েছিল বায়রা। তবে করোনা সংকটের কারণে অফিস-আদালত সীমিত পরিসরে খোলা থাকায় নির্ধারিত সময়ে বায়রা সেই তথ্য সরবরাহ করতে পারেনি।

বায়রার প্রেসিডেন্ট বেনজির আহমেদ এমপি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, তারা বিএমইটির চিঠি পাওয়ার পর উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য যাচাই করে দেখছেন। এজন্য সংগঠনের মহাসচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বলেও জানান বায়রার প্রেসিডেন্ট। সংগঠনের মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান জানান, যে প্রতিষ্ঠানগুলোর তথ্য চাওয়া হয়েছে তার অনেকের কোনো তথ্য বায়রার কাছেও নেই। তবে যেগুলোর তথ্য পাওয়া গেছে সেগুলোর বিষয়ে একটি ‘স্টেটমেন্ট’ গতকাল বিএমইটিতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি।

অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব বলেন, নিয়মানুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের নাম-ঠিকানা বিএমইটিতে থাকার কথা। তিনি বলেন, বায়রা প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর নিয়ম ছিল,  যেসব রিক্রুটিং এজেন্সিকে সরকার থেকে লাইসেন্স দেওয়া হবে, তাদের বাধ্যতামূলক বায়রার সদস্য হতে হবে। কিন্তু ২০১২ সাল থেকে এই বাধ্যবাধকতা তুলে দেয় প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ফলে এরপর লাইসেন্স গ্রহণ করলেও অনেকে বায়রার সদস্য হয়নি, ফলে তাদের তথ্যও আমাদের কাছে নেই।

বিএমইটির সার্ভারে রক্ষিত রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর লাইসেন্স সংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, উল্লিখিত ১৫০ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮২টি প্রতিষ্ঠানের নাম ও লাইসেন্স নম্বর ছাড়া অন্য কোনো তথ্য নেই। ৬৮টি প্রতিষ্ঠান পাওয়া গেছে, যাদের লাইসেন্সের সিরিয়াল নম্বর ছাড়া রিক্রুটিং এজেন্সির নাম-ঠিকানা কিছুই নেই। এই ১৫০ প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স নেওয়ার পর গত ২৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে জনশক্তি রপ্তানি করছে এমন কোনো তথ্য-প্রমাণও পায়নি বিএমইটি।  

যে ৮২টি প্রতিষ্ঠানের শুধু নাম ছাড়া আর কোনো তথ্য নেই সেগুলো হলো- এআর ট্রেড লি., এওয়ান ইন্টারন্যাশনাল, অ্যা অ্যান্ড আর সিঙ্গাপুর এক্সপ্রেস, আভা ওভারসিজ, এয়ার অ্যান্ড ওয়েভ প্রাইভেট লিমিটেড, আল আমাল কোম্পানি, আল-নাজরান অ্যাসোসিয়েটস, আল-আজদাহার তেনেগা, আল-হারমাইন ইন্টারন্যাশনাল, আল-জাবিন এস্টাবলমিম্যান্ট লি., আল নাদিয়া ওভারসিজ, আল নাইমা ওভারসিজ, আল রায়াক ইন্টারন্যাশনাল, আল সউদ ওভারসিজ, এরকম ওভারসিজ, আর্ট ইন ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল, বিট ইন্টারন্যাশনাল, বিএনআর ইন্টরন্যাশনাল, ক্যাসিনো ওভারসিজ লি. , চাঁদনি ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, চয়নিকা ইন্টারন্যাশনাল, কংগ্রাচুলেশন এক্সপ্রেস ইন্টা. লি., ক্রেডিট সিস্টেম, ডেল্টা ট্রেডিং করপোরেশন, ঢাকা ওভারসিজ লি., এমিনেন্ট ইন্টা., ইভা ওভারসিজ লি., ইভেনিং স্টার, এক্সচেঞ্জ প্রমোটার্স, এক্সপার্ট ওভারসিজ, ফাহমি ইন্টারন্যাশনাল লি., ফার্স্ট লিজ ইন্টা. লি., ফাইভ স্টার ওভারসিজ সার্ভিস লি., গাজ্জালি ইন্টা., গ্লোবাল সার্ভিস লি., গোলাপ ইন্টা. এজেন্সি, হাবিব অ্যাসোসিয়েটস, হোমল্যান্ড ট্রেড ইন্টা., জয়নব ওভারসিজ, যমুনা ওভারসিজ লি. জব সিকার ইন্টা., কাদের ইন্টা., এলপি ইন্টা., লিট ট্রেডার্স ইন্টা., ম্যাগনেট ওভারসিজ, মজিদ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস, ম্যান কেয়ার সিন্ডিকেট., ম্যান-লিঙ্ক (বিডি) লি., ময়নামতি ওভারসিজ, মার্ক ওভারসিজ, মার্ভেল করপোরেশন, মাজহার ইন্টা. লি., মেহেদি ইন্টা. লি., মিরাজ ইন্টা. (প্রা.) লি., মোহাম্মদ উল্লাহ চৌধুরী ইস্ট. লি., মাল্টিটোন ইন্টা., এনআর রিক্রুটিং এজেন্সি, এন এস এন্টারপ্রাইজ, নামিকো ইঞ্জিনিয়ার্স, নাসের এয়ার ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরস, নজিবুর রহমান, নবোদয় ইন্টারন্যাশনাল, নরলাস্ট্রিক ইনআ., ওমর ফারুক এন্টারপ্রাইজ, পাইওনিয়ার এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস, পুষ্প ট্রেড ইন্টা., রাওয়া ওভারসিজ লি., রাহমানিয়া ট্রাভেলস লি., রহমত ট্রেড ইন্টা., রূপসা ওভারসিজ লি., সেফওয়ে ইন্টারন্যাশনাল, শাহরিয়ার হোম অ্যান্ড ওভারসিজ., স্পিড বার্ড অ্যান্ড কোম্পানি লি., স্টাফ বিল্ডার্স ইন্টা., স্ট্যান্ডার্ড মেজারম্যান্ট অব ইমপ্লয়মেন্ট ওভারসিজ, সায়েদ ইন্টা., টিআর ইন্টা., টকেনোকন লি., টকনো ফকি (বাংলাদেশ) ওভারসিজ, দ্য মাল্টিমোড ওভারসিজ, টর্ট ইন্টারন্যাশনাল এবং ইয়েলো ইন্টারন্যাশনাল। এ ছাড়া আরও ৬৮ প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের শুধুমাত্র লাইসেন্স নম্বর ছাড়া

নাম-ঠিকানা কিছুই নেই।

লাইসেন্স নেওয়ার পর প্রায় ১৫০ প্রতিষ্ঠানের নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বায়রার ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং রিক্রুটিং এজেন্সি অর্কিড ভিউ লিমিটেডের এমডি মোহাম্মদ ওবায়দুল আরিফ বলেন, উল্লিখিত এজেন্সিগুলোর নাম-ঠিকানা বা কার্যক্রম না পাওয়ার পেছনে বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। এমন হতে পারে- হঠাৎ বিদেশে জনশক্তি রপ্তানির কোনো সুযোগ সৃষ্টি হওয়ার পর, অনেকে লাইসেন্স নিয়েছে। পরে কাজ না পাওয়ায় কোম্পানিগুলো নিষ্ক্রিয় হয়ে গেছে। এ ছাড়া প্রতিযোগিতামূলক বিশ্ববাজারে টিকে থাকতে না পেরে অনেকে কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এখন সরকার চাইলে শর্ত অনুযায়ী এসব প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করে দিতে পারে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর