শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
পাঁচতারকা হাসপাতালে রোগীদের নানা অভিযোগ

ব্যবহার একজনের মূল্য দিচ্ছে বহুজন

মাহবুব মমতাজী

‘কয়েক দিন আগে অসুস্থ বাবাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। সেখানে চিকিৎসাসেবার সঙ্গে সঙ্গে যে ধরনের লুটপাটের শিকার হয়েছি তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না।’- এভাবে নিজের চরম ভোগান্তির অনুভূতি প্রকাশ করেছেন ফারহান নূর নামে এক ব্যবসায়ী। তার অভিযোগ, এক রোগীর নামে নেওয়া চিকিৎসাসামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে একাধিক জনের সেবায়। অথচ বিল নেওয়া হয়েছে প্রত্যেকের কাছ থেকে আলাদা আলাদা করে।  ফারহান নূরের মতো অধিকাংশ রোগীর স্বজনের কাছ থেকেই এভাবে চিকিৎসাসামগ্রী না দিয়েও অতিরিক্ত বিল নেওয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাননি। রোগীদের অভিযোগ, চিকিৎসা নিতে আসা প্রত্যেকেই জিম্মি হয়ে পড়েছেন। এটি শুধু ইউনাইটেড হাসপাতালেই নয়, রাজধানীর পাঁচতারকা সব হাসপাতালেই দেখা গেছে এমন চিত্র। এসব হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের কাছ থেকে চিকিৎসকের ফির পাশাপাশি আলাদা করে পিপিইর দামও নেওয়া হয়। অথচ চিকিৎসকরা একটি পিপিই পরেই সারাদিন সব রোগী দেখেন। ভুক্তভোগী রোগীরা অভিযোগ করেছেন, এক বক্স হ্যান্ড গ্লাভস একজন রোগীর নামে নিয়ে ১০ জনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়েছে। অথচ পুরো এক বক্সের দাম আলাদা আলাদা করে ১০ জন রোগীর কাজ থেকে নেওয়া হয়েছে। রোগীর স্বজনরা হিসাব করে দেখেছেন, এক বক্স হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার করে দাম তোলা হয়েছে ১০টি বক্সের। একইভাবে দাম তোলা হয়েছে ডিসপোজাল ফেস মাস্ক, এপ্রোন, ডিসপোজাল ক্যাপ, সু কাভার এবং স্যানিটাইজারের ক্ষেত্রেও। শাসকষ্ট ও হার্টবিট বাড়ায় এবং প্রেসার কমে যাওয়ায় ফারহান নূরের বাবা নূরুল হক ভূঞাকে গত ২৮ জুন ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ রোগীর আইডি নম্বর-১০০০৩২৫১৩৮। প্রথমে নূরুল হককে হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগে নেওয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেখান থেকে তাকে সিসিইউতে ভর্তি করে। সেখানে তিন দিন রাখার পর এক দিন কেবিনে নেওয়া হয়। ওই রোগী করোনা আক্রান্ত ছিলেন না, এর পরও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দুইবার করোনা পরীক্ষা করানো হয়। এ হাসপাতালে মোট চার দিনে নূরুল হকের নামে বিল করা হয় ২ লাখ ১৫ হাজার ৩৬৩ টাকা। এমন অস্বাভাবিক বিল দেখে গত ১২ জুলাই জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে অভিযোগ করেন নূরুল হকের ছেলে ফারহান নূর। এরপর সেই অভিযোগের বিষয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন- ‘একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে হাসপাতাল কর্তৃক লুটপাটের এই অভিযোগটি ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত সেলে জমা দিয়েছি। দেখা যাক কোনো প্রতিকার পাই কি না। আমার অভিযোগ করার মূল কারণ হলো- এ রকম লুটপাটের ধারাটা বন্ধ হোক। আশা করব আমি উপকৃত না হলেও অন্য রোগীরা যেন এই লুটপাটের হাত থেকে রক্ষা পায়।’ তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, তারা কিছু জিনিসের বিল ধরেছে যা আমার কাছে অস্বাভাবিক মনে হয়েছে। যেমন প্রতিদিন ১শ পিসের কনফ্রিটের এক বক্স হ্যান্ড গ্লাভস ব্যবহার দেখানো হয়েছে। দাম ধরা হয়েছে ২ হাজার ৪০০ টাকা। অথচ বাইরে এগুলো এক বক্সের দাম ৮০০ টাকা। রোগীর সঙ্গে দেখা করার জন্য তাদের ফার্মেসি থেকে আলাদাভাবে এপ্রোন, ফেস মাস্ক, ক্যাপ, সু কাভার এবং হ্যান্ড গ্লাভস কিনে হাসপাতালে ঢুকতে হয়েছে। তারা ভিতরে গিয়ে দেখেন চিকিৎসক এবং নার্সরা একই এপ্রোন ও ডিসপোজাল আইটেম পরে বিভিন্ন রোগীকে সেবা দিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে তার বাবাকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে এতগুলো এপ্রোন ও ডিসপোজাল আইটেম ব্যবহারে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিল করার সময় এ বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেছেন, আমরা তো সব রোগীর বেলায় এভাবে বিল করি, আপনি এ নিয়ে কথা বলছেন কেন? তার বাবাকে সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে কতজন চিকিৎসক ও নার্সের প্রয়োজন হয়েছে তা ভেবে দেখার বিষয়। সব মিলে মনে হয়েছে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চিকিৎসার নামে রোগীর সঙ্গে আর্থিকভাবে প্রতারণা করছে। এ বিষয়ে জানতে হাসপাতালটির জনসংযোগ কর্মকর্তা (পিআরও) সাজ্জাদুর রহমান শুভর সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তিনি প্রশ্ন লিখে ই-মেইল করতে বলেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে প্রশ্নগুলোর উত্তর পাঠাবেন বলে জানান। গত ১৫ জুলাই এ প্রতিবেদক ই-মেইলে তাকে তিনটি প্রশ্ন পাঠান। গতকাল পর্যন্ত তিনি ই-মেইলের কোনো জবাব দেননি। অভিযোগে ফারহান নূর উল্লেখ করেছেন, চিকিৎসায় ব্যবহৃত ওষুধপত্র, চিকিৎসকের ফি ছাড়াও অন্যান্য খাতে যেমন- রিইউজেবল পিপিই ৩টি, ডিসপোজাল এপ্রোন ৪৪টি, ডিসপোজাল ফেস মাস্ক ৪৮টি, সার্জিক্যাল গ্লাভস ৩৩৮টি, ডিসপোজাল ক্যাপ ফিমেল ৪৩টি, সু কাভার ৫৪টি, প্লেইন এবজরবেন্ট গজ ৫০টি এবং স্যানিটাইজার হ্যান্ড রাব ৫টির ব্যবহার দেখানো হয়েছে। তার বাবা সার্জারির রোগী না হওয়া সত্ত্বেও সার্জারির সুতা কেনা বাবদ বিল বানানো হয়েছে। যা তার কাছে অসঙ্গতিপূর্ণ ও অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর