শুক্রবার, ২৪ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
স্বাস্থ্য পরামর্শ

করোনাকালে ডায়াবেটিস রোগীরা যা করবেন

অধ্যাপক ডা. আবদুল মান্নান সরকার

বর্তমান বিশ্ব ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। মহামারী আকার ধারণ করেছে করোনাভাইরাস। পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশও তার ব্যতিক্রম নয়। করোনা বা কভিড-১৯ আমাদের কাছে নতুন একটি রোগ। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ। যেহেতু এখন পর্যন্ত এই রোগের কোনো ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কৃত হয়নি। তাই সবাইকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সবারই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। এর মধ্যে আগে থেকে নানা রোগে আক্রান্ত রোগীদের ঝুঁকিটা অনেক বেশি থাকে। অর্থাৎ ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যাজমা, ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগী এবং দীর্ঘদিন ধরে স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ নিচ্ছেন, এ ধরনের রোগীরা অত্যন্ত ঝুঁকিপ্রবণ।

করোনাকালীন সময়ে ডায়াবেটিস রোগীরাও অনেক বেশি ঝুঁকিতে আছেন। তবে গবেষণা বলছে, যদি রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলে ডায়াবেটিস আছে এমন রোগী করোনায় আক্রান্ত হলেও মৃত্যুঝুঁকি কিছুটা কমিয়ে আনা সম্ভব। পাশাপাশি তাদের গ্রহণ করতে হবে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। যেমন- ১. করোনাকালে অন্যান্য সবার মতো ডায়াবেটিস রোগীদেরও পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। ঘর থেকে বের হলে অবশ্যই মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। যাতে নাক ও মুখ ঢাকা থাকে। ২. সামাজিক দূরত্বও বজায় রাখতে হবে। অর্থাৎ ৩ থেকে ৬ ফুট দূরত্ব মেনে চলতে হবে। ৩. সব ধরনের ভিড় এড়িয়ে চলবেন। তবে যদি কোনো জনবহুল স্থানে, যেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা সম্ভব নয়, সেখানে বেশিক্ষণ থাকবেন না। ৪. যেখানেই থাকুন না কেন, নিয়ম মেনে হ্যান্ডওয়াশ বা সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড হাত ধুয়ে নিন। অথবা কিছুক্ষণ পর পর হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। ৫. হাত না ধুয়ে কোনো কিছু ষ্পর্শ করবেন না। আর খাওয়াদাওয়ার পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে হাত ধুয়ে নেবেন। ৬. ষাট বছরের বেশি বয়সের ডায়াবেটিস রোগীরা আরও বেশি সতর্কতা অবলম্বন করবেন। তারা ঘরে বা বাইরে যেখানেই থাকুন না কেন, সাবধানতা অবলম্বন করে থাকতে হবে। ৭. যেসব ডায়াবেটিস রোগী ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ নিচ্ছেন বা ইনসুলিন নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে কেউ করোনায় আক্রান্ত না হলে, ওষুধ আগের মতোই চলবে। ৮. তবে ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে যারা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, তাদের চিকিৎসায় খানিকটা পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন- করোনায় আক্রান্ত হলে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। তাদের ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে কিছু ওষুধ বাদ দিতে হবে। কারণ সেগুলো ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীর ক্ষতির কারণ হতে পারে। ৯. করোনা যেমন ফুসফুসে প্রভাব বিস্তার করে, তেমনই পেইন কেসেও প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে করোনায় আক্রান্ত ইনসুলিন গ্রহণ করা ব্যক্তির ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়। তারা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে ইনসুলিনের মাত্রাটা ঠিক করে নেবেন। ১০. করোনায় আক্রান্ত ডায়াবেটিস রোগীদের ম্যাটফরমেট জাতীয় ওষুধ বাদ দিয়ে দেওয়া ভালো। এর বিপরীতে চিকিৎসকের পরামর্শে অন্য ওষুধ খেতে পারেন। ১১. যাদের ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে নেই, অথচ নিয়মমাফিক ওষুধ নিচ্ছেন, তাদের ইনসুলিন দিয়ে দিতে হবে। কারণ, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকলে রোগীর অবস্থা খারাপের দিকে চলে যেতে পারে। ১২. এ সময় পার্কে বা বাইরে হাঁটতে যাওয়ার দরকার নেই। শর্করা নিয়ন্ত্রণে বাড়িতে, বারান্দায় বা করিডরে হাঁটতে হবে এবং হালকা ব্যায়াম করতে পারেন। লেখক :  সিনিয়র কনসালটেন্ট, ডায়াবেটিস ও হরমোন রোগ বিভাগ, এভারকেয়ার হাসপাতাল, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর