শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

দাপট দেখাতেই নেতা-কর্তাদের সঙ্গে তোলা ছবি দুই ভাই ফেসবুকে ছড়ায়

মশিয়ালী ট্রিপল মার্ডার

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনার মশিয়ালী এলাকায় তিন হত্যাকান্ডে মূল অভিযুক্ত দুই ভাই জাকারিয়া হোসেন ও জাফরিন হাসানের যাতায়াত প্রশাসনের ওপর মহলে। ‘আমাদের মর্যাদা কেমন দেখ’ বোঝানোর মতলবে স্থানীয় শীর্ষ রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ-র‌্যাবের কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ ভঙ্গিতে ছবি তুলে সেই ছবি ফেসবুকে প্রচার করতেন তারা। এরই প্রভাবে, হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি হলেও এই দুই ভাইকে পুলিশ ‘বিরক্ত’ করেনি। সর্বশেষ গত ১৬ জুলাই রাতে জাকারিয়া-জাফরিনদের গুলিতে তিনজন মারা যাওয়ায় ফুঁসে ওঠে গ্রামবাসী। উত্তেজিত জনতা তাদের বসতবাড়ি, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানে আগুন দেয় ও জাকারিয়ার আত্মীয় জিহাদ শেখকে পিটিয়ে হত্যা করে। এদিকে হত্যাকান্ডের তদন্তে মাঠে নেমেছে পুলিশের একাধিক টিম। প্রাথমিক তদন্তে জাফরিনের ফেসবুক থেকে রাজনৈতিক নেতা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পুলিশ-র‌্যাব কর্মকর্তার সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতার অনেক ছবি পুলিশের হাতে এসেছে।

অপরাধীর সঙ্গে ছবি থাকায় বিব্রত বোধ করছেন পুলিশ কর্মকর্তারা। এসব ছবিতে জাফরিন খুলনার দুই রাজনৈতিক নেতাকে ‘ভাই ও ফুফু’ বলে সম্বোধন করেছেন। আরও কয়েকটি ছবিতে ‘রাজনৈতিক অভিভাবক’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও একাধিক যুবলীগ নেতার সঙ্গে জাফরিনের ঘনিষ্ঠতার ছবি রয়েছে। স্থানীয় মাঠে ফুটবল ম্যাচ আয়োজন নিয়ে জাফরিন ফেসবুকে ফুলতলা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ আকরাম হোসেনকে ‘মামা’ ও পুলিশ সুপারকে ‘ভাই’ সম্বোধন করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তবে ওই ছবিতে পুলিশ সুপার ছিলেন না। ‘আমার প্রিয় বন্ধুর সাথে এক ফ্রেমে বন্দী হলাম’ বলে র‌্যাব কর্মকর্তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার ছবি রয়েছে ফেসবুকে। একজন মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তাকে ফুল দেওয়ার ছবিও উদ্ধার হয়েছে জাফরিনের ফেসবুক আইডি থেকে। এলাকাবাসী অভিযোগ করেন- এ ধরনের ছবি ফেসবুকে প্রচার করে রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কথা বলে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতেন জাকারিয়া-জাফরিনরা। হত্যা মামলার আসামি হয়েও তারা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতেন। এলাকায় সুদের ব্যবসার নামে প্রতারণা, অত্যাচার-নির্যাতন, জমি দখল, চাঁদাবাজি করলেও প্রতিবাদ করতে সাহস পেত না কেউ।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার লুৎফুল কবির বলেন, ‘অন্যদের কথা আমি জানি না, কিন্তু অপরাধীর সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তার ছবির বিষয়ে আমি বিব্রত ও লজ্জিত। এতে সাধারণ মানুষের কাছে মন্দবার্তা যায়। তারা একদিকে ওই অপরাধীর দ্বারা শিকার হওয়ার শঙ্কায় থাকেন, পাশাপাশি যারা অপরাধ দমন করবে তাদের সঙ্গে অপরাধীর যুগলবন্দী ছবি দেখে অপরাধের বিচার নিয়েও সংশয় প্রকাশ করে।’ তিনি বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্য যে মানুষকে প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করতে হয়েছে অপরাধীরা অস্ত্র ব্যবহার করেছিল। আমরা অবশ্যই অপরাধীদের গ্রেফতার ও অস্ত্র উদ্ধার করব।’ এদিকে ১৬ জুলাই গুলিতে নিহত নজরুল ইসলাম ফকিরের ভাইপো রাসেল শেখ জানান, বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণে জাফরিন একসময় মহানগর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি হয়েছিলেন। পরে চাঁদাবাজির ঘটনায় ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার হলে সম্প্রতি জাফরিন কৌশলে যুবলীগ  নেতাদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠতা গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। মূলত জমি দখল, চাঁদাবাজি ও প্রভাব বিস্তার করতে তারা দলের নেতা ও প্রশাসনের নাম ব্যবহার করতেন। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কানাইলাল সরকার জানান, সার্বিক বিষয় অনুসন্ধানে পুলিশ মাঠে কাজ করছে। চার সদস্যের তদন্ত কমিটি ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেছে। আসামিদের গ্রেফতারের জন্য আলাদা টিম কাজ করছে।

সর্বশেষ খবর