শনিবার, ২৫ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্যায় চড়া সবজির দাম, গরম মসলায় গরম কম

নিজস্ব প্রতিবেদক

মহামারী করোনাভাইরাস ও বন্যার প্রভাবে পবিত্র ঈদুল আজহার আগে চড়া সবজির দাম। অন্যান্য বছর কোরবানির আগে মসলার বাজার গরম হলেও এবার তেমন নয়। রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা গেছে, উত্তরাঞ্চলে চলমান বন্যার অজুহাতে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বিক্রেতারা ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বাড়তি দাম নিচ্ছে। সবজির সঙ্গে শাকের দামও বেড়েছে। আর অপরিবর্তিত রয়েছে মসলা জাতীয় পণ্য আদা, রসুন, পিয়াজ, ডাল ও ভোজ্যতেলের দাম। তবে চালের দাম কিছুটা কমেছে।

গতকাল ঈদের আগে সর্বশেষ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের মসলার বাজার, হাতিরপুল, নিউমার্কেট, আজিমপুর, রামপুরা, মালিবাগ, খিলগাঁও, শান্তিনগর, সেগুনবাগিচা বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। কারওয়ান বাজারের মসলার বাজারে গিয়ে দেখা যায়Ñ প্রতিকেজি জিরার দাম কমেছে ১০০ টাকার মতো। কমেছে এলাচের দামও। ব্যস্ততা নেই ক্রেতা-বিক্রেতার। অস্বস্তিতে আছেন বিক্রেতারাও। গ্রিন রোড থেকে আসা ক্রেতা আফরিন বিনতে সাবরিনা বলেনÑ ঈদকে সামনে রেখে এক কেজি জিরা কিনছি ২৮০ টাকায়। অথচ, একই জিরা এক মাস আগে কিনেছি ৪০০ টাকায়। ১২০ টাকা কমে পাচ্ছি বলে এক কেজি জিরা কিনলাম। অন্যবারের চেয়ে এই ঈদের পার্থক্য হলো, প্রতিবারের মতো এবার আর ঈদের আগে সবকিছুর দাম বাড়েনি। কাঁঠালবাগান থেকে আসা ক্রেতা আরিফুল ইসলাম বলেন, এখন এলাচের কেজি তিন হাজার টাকা। অথচ এই এলাচের দাম মাস দুয়েক আগেও তিন হাজার ৮০০ টাকা ছিল। তাই ৫০০ গ্রাম এলাচ কিনলাম। লবঙ্গের কেজি আগে ছিল এক হাজার টাকা। এখন ৮৫০ টাকা কেজি। দারচিনিও কম দামে কিনলাম। আগে ছিল ৪২০ টাকা। আজ কিনলাম ৩৮০ টাকা কেজি।

কারওয়ান বাজারের মসলা বিক্রেতা সিরাজ সরদার বলেন, এবার ঈদের আগে কোনো কিছুরই দাম বাড়েনি। কিন্তু ক্রেতা নেই। মানুষের কাছে টাকা-পয়সা নেই। ব্যবসায় খুব মন্দা। আরেক বিক্রেতা জামিল রাফাত বলেন, এবার ঈদে মানুষ বেশি কেনাকাটা করছে না। কিন্তু গত ১০ বছরের ভিতরে এমন একটি বছরও দেখিনি আমি, যে বছর ঈদের আগে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি। তবে কিছু চালের দাম বেড়েছে। এ ছাড়া সব মোটামুটি স্বাভাবিক।’

রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির বাড়তি দাম নিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতারা মিশ্র প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন। ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সবজির ঘাটতি না থাকলেও বিক্রেতারা বন্যার অজুহাতে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর বিক্রেতারা বলছেন, বন্যার কারণে পাইকারি বাজারে সবজির সংকট রয়েছে। এতে সব ধরনের সবজির দাম কিছুটা বাড়তি। এসব বাজারে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে বর্তমানে গাজর (দেশি ও আমদানি) বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা, প্রতিকেজি ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা ও ?ধুন্দল ৪০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ও উচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকা, কচুর লতি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, বেগুন ৫০ থেকে ৮০ টাকা, টমেটো ১২০ টাকা, কাঁকরোল ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি। ১০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি বরবটি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, কচুর ছড়া ৬০ টাকা, ঢেঁড়স বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, মুলা ৪০ থেকে ৫০ টাকা, প্রতি হালি কলা ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা কেজি। কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়ে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায়।

অপরিবর্তিত আছে আলু, লেবু, ধনিয়াপাতা, পুদিনা পাতার দাম। বর্তমানে এসব বাজারে প্রতি আঁটি (মোড়া) লাল শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, মুলা শাক ১৫ থেকে ২০ টাকা, লাউ, কুমড়া শাক ৪০ টাকা, পুঁই শাক ২০ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে গরু ও খাসির মাংস। এসব বাজারে প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৮০ টাকা, মহিষের মাংস ৫৮০ টাকা, খাসির মাংস ৭৮০ টাকা, প্রতিকেজি বকরির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭২০ টাকা কেজিদরে। এসব বাজারে প্রতিকেজি পিয়াজ বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ৪০ থেকে ৪৫ টাকা, প্রতিকেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায় আদা বিক্রি হচ্ছে (মানভেদে) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজিদরে। বর্তমানে কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা কমে প্রতিকেজি মিনিকেট (নতুন) চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকায়, মিনিকেট পুরান ৫৫ টাকা, বাসমতী ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, গুটি চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা, পাইজাম চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ টাকা, স্বর্ণ ৪০ থেকে ৪২ টাকা, আঠাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে, আতোপ চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, এক সিদ্ধ চাল বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৪২ টাকা এবং প্রতিকেজি পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকায়। এসব বাজারে প্রতিকেজি ডাবরি ডাল বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকা, অ্যাঙ্কার ৫০ টাকা ও প্রতিকেজি দেশি মসুর ডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা, মসুর  (মোটা) ৮০ টাকা কেজি দরে। খোলা সয়াবিন (লাল) বিক্রি হচ্ছে ৯৫ থেকে ১০৫ টাকা লিটার, খোলা (সাদা) সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা লিটার। খোলা সরিষার তেল বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকা লিটার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর