যুক্তরাষ্ট্রে করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। মৃত্যুর সংখ্যা দেড় লাখ ছাড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রে গতকাল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৪ লাখ ৩৩ হাজার ৪১০ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৪৪৪ জন এখনো আশঙ্কাজনক অবস্থায় রয়েছে ১৯ হাজার ১শ জন। গত ৩১ ডিসেম্বর চীনে প্রথম করোনার উপস্থিতি ধরা পড়ে। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত ২১৩টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে করোনা। এখন বিভিন্ন দেশে দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এজন্য নতুন করে দেওয়া হচ্ছে বিধিনিষেধ। করোনায় সবচেয়ে বিপর্যস্ত যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা রবার্ট ও’ব্রায়েন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। পারিবারিক এক অনুষ্ঠানে অংশ নেওয়ার পর করোনায় আক্রান্ত হন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ব্রায়েন। গত সপ্তাহ থেকে তিনি অফিস করছেন না। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যায় নিউইয়র্ককে পেছনে ফেলেছে ক্যালিফোর্নিয়া। এতদিন পর্যন্ত নিউইয়র্কে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি থাকলেও এখন আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ক্যালিফোর্নিয়ায়। তবে মৃত্যুর সংখ্যায় এগিয়ে আছে নিউইয়র্ক। ক্যালিফোর্নিয়ায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৬৬ হাজার ৮২৫। এর মধ্যে মারা গেছে ৮ হাজার ৫৪৫ জন। অপরদিকে, নিউইয়র্কে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৪০ হাজার ৪৬২ জন। এর মধ্যে মারা গেছে ৩২ হাজার ৭০৮ জন।
অন্যদিকে, দ্বিতীয় ঢেউয়ের আশঙ্কায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নতুন বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। যেসব দেশে ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে এসেছে বলে ধারণা করা হয়েছিল সেসব দেশেই এই দ্বিতীয় ধাক্কা দেখা দিয়েছে। অস্ট্রেলিয়া এক দিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের রেকর্ড করেছে। অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় ভিক্টোরিয়া প্রদেশের কিছু জায়গায় ছয় সপ্তাহের লকডাউন জারি করা হয়েছে। দেশটিতে লকডাউন বৃদ্ধি পেতে পারে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। জাপান সরকার বলছে, তারা ব্যবসায়ী নেতাদের ভাইরাসবিরোধী পদক্ষেপ জোরালো করার আহ্বান জানাবেন। তিনজন স্থানীয় নাগরিক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর ভিয়েতনামের পর্যটন এলাকা দানাং থেকে ৮০ হাজার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছে। এপ্রিল থেকে গত শনিবার পর্যন্ত ভিয়েতনামে কোনো কমিউনিটি সংক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। দুজনের বেশি মানুষের জড়ো হওয়া নিষিদ্ধ, রেস্টুরেন্টে রান্না বন্ধ এবং জনসম্মুখে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করেছে হংকং। স্পেন থেকে আসা যাত্রীদের ব্রিটেনে কোয়ারেন্টাইনে রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ব্রিটেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় স্পেনের মূল ভূখ-সহ বেলেরিক ও কেনারি দ্বীপপুঞ্জে পর্যটকদের অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বাড়িয়েছে। এতে ইউরোপের পর্যটন খাত খুলে দেওয়ার প্রস্তুতিতে ভাটা পড়েছে। ইউরোপ এখনো যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশের ভ্রমণকারীদের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) বলেছে, ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘমেয়াদি কোনো সমাধান নয়। ভাইরাসের বিস্তার রোধে সামাজিক দূরত্ব এবং মাস্ক পরিধানের মতো প্রমাণিত কৌশলগুলো অবশ্যই মেনে চলতে হবে। ব্লিউএইচওর জরুরি কর্মসূচির পরিচালক মাইক রায়ান বলেন, ভবিষ্যতের অনির্দিষ্ট সময় ধরে যে কোনো দেশের জন্য তাদের সীমান্ত বন্ধ রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অর্থনীতি চালু, মানুষের কাজে ফেরা, ব্যবসা-বাণিজ্য পুনরায় চালু করতে হবে। ইউরোপ ও এশিয়ায় পুনরায় সংক্রমণ বাড়ছে- এমন কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা বলেন, দেশজুড়ে লকডাউনের পরিবর্তে স্থানীয়ভাবে পদক্ষেপ নিয়ে নতুন সংক্রমণ ঠেকানো যেতে পারে।