শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

পরীক্ষা ও শনাক্ত কমেছে, বেড়েছে মৃত্যু

২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত্যু ৪৮, শনাক্ত ২৬৯৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস শনাক্তের পরীক্ষা ও শনাক্ত কমেছে, বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। একই সময়ে ১২ হাজার ৯৩৭টি নমুনা পরীক্ষা করে ২ হাজার ৬৯৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন ৪৮ জন। আগের দিন বুধবার মারা যান ৩৫ জন। ১৪ হাজার ১২৭টি নমুনা পরীক্ষায় করোনা পাওয়া যায় ৩ হাজার ৯ জনের দেহে। সেই হিসাবে আগের ২৪ ঘণ্টার তুলনায় গত ২৪ ঘণ্টায় রোগী শনাক্ত কমলেও বেড়েছে মৃত্যুর সংখ্যা। দেশে এক দিনে সর্বোচ্চ মৃত্যুর রেকর্ড আছে ৬৪ জনের। সে তথ্য জানানো হয়, ৩০ জুনের বুলেটিনে। সর্বোচ্চ শনাক্তের রেকর্ড ৪ হাজার ১৯ জনের, যা জানানো হয় ২ জুলাইয়ের বুলেটিনে। এদিকে দেশে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৮৩ জনে। শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৯ জন হয়েছে। আইইডিসিআরের ‘অনুমিত’ হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ২ হাজার ৬৬৮ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। তাতে সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল মোট ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৬০ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা গতকাল নিয়মিত বুলেটিনে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সর্বশেষ তথ্য তুলে ধরেন। পিসিআর-ল্যাবরেটরিতে নমুনা পরীক্ষার তথ্য তুলে ধরে তিনি জানান, করোনাভাইরাস শনাক্তে গত ২৪ ঘণ্টায় ১২ হাজার ৬৬৭টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষা করা হয় আগের কিছু মিলিয়ে ১২ হাজার ৯৩৭টি নমুনা। এ নিয়ে মোট নমুনা পরীক্ষা করা হলো ১১ লাখ ৬৪ হাজার ১৯৫টি। নতুন পরীক্ষায় করোনা মিলেছে ২ হাজার ৬৯৫ জনের মধ্যে। এ নিয়ে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ২ লাখ ৩৪ হাজার ৮৮৯ জন। আক্রান্তদের মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরও ৪৮ জন। ফলে ভাইরাসটিতে মোট মৃত্যু হলো ৩ হাজার ৮৩ জনের। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন আরও ২ হাজার ৬৬৮ জন। এ নিয়ে মোট সুস্থ রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ১ লাখ ৩২ হাজার ৯৬০ জন।

তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ২ হাজার ৬৯৫ জন শনাক্ত হয়েছেন। মারা গেছেন আরও ৪৮ জন। তাদের মধ্যে ৩৬ জন পুরুষ ও ১২ জন নারী। বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে তাদের মধ্যে একজনের বয়স ৩১-৪০ বছরের মধ্যে, চারজনের বয়স ৪১-৫০ বছরের মধ্যে, ১৪ জনের বয়স ৫১-৬০ বছরের মধ্যে, ১২ জনের বয়স ৬১-৭০ বছরের মধ্যে, ১১ জনের বয়স ৭১-৮০ বছরের মধ্যে, পাঁচজনের বয়স ৮১-৯০ বছরের মধ্যে ও একজনের বয়স ৯১-১০০ বছরের মধ্যে। দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৩ হাজার ৮৩ জন।

এ পর্যন্ত বয়স বিভাজন ভিত্তিতে মৃতের সংখ্যা ও শতকরা হার তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা মারা গেছেন, তাদের মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের ১৮ জন, যার হার দশমিক ৫৮ শতাংশ; ১১ থেকে ২০ বছরের ৩০ জন, হার দশমিক ৯৭ শতাংশ; ২১ থেকে ৩০ বছরের ৮৫ জন, হার ২ দশমিক ৭৬ শতাংশ; ৩১ থেকে ৪০ বছরের ২০২ জন, হার ৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ; ৪১ থেকে ৫০ বছরের ৪৩৫ জন, হার ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ; ৫১ থেকে ৬০ বছরের ৮৯০ জন, হার ২৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ এবং ৬০ বছরের অধিক বয়সের ১ হাজার ৪২৩ জন ছিলেন, যার হার ৪৬ দশমিক ১৬ শতাংশ। বিভাগভিত্তিক মৃতের সংখ্যা তুলে ধরে তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রামে ১২ জন, খুলনায় পাঁচজন, সিলেটে পাঁচজন, রাজশাহীতে তিনজন, বরিশাল, ময়মনসিংহ ও রংপুর বিভাগে দুজন করে মৃত্যুবরণ করেছেন। এ পর্যন্ত বিভাগভিত্তিক মৃতের সংখ্যা ও শতকরা হার তুলে ধরে তিনি বলেন, ঢাকা বিভাগে ১ হাজার ৪৭৫ জন মারা গেছেন, যার হার ৪৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ; চট্টগ্রামে ৭৫১ জন, হার ২৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ; রাজশাহীতে ১৮২ জন, হার ৫ দশমিক ৯০ শতাংশ; খুলনায় ২১৯ জন, হার ৭ দশমিক ১০ শতাংশ; বরিশালে ১০২ জন, হার ৩ দশমিক ৯২ শতাংশ; সিলেটে ১৫১ জন, হার ৪ দশমিক ৯০ শতাংশ; রংপুরে ১৭৭ জন, হার ৩ দশমিক ৮০ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৬৭ জন মারা গেছেন, যার হার ২ দশমিক ১৭ শতাংশ। স্বাস্থ্য বুলেটিনে জানানো হয়, দেশে মোট পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ১৮ শতাংশ। আর মোট শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৬ দশমিক ৬১ শতাংশ ও মৃত্যুর হার এক দশমিক ৩১ শতাংশ। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় বলে জানায় সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আর ১৮ মার্চ প্রথম একজনের মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়।

ভর্তি রোগী ও সেবা সরঞ্জামের তথ্য : ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৪১ জন এবং বাড়িতে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে জানিয়ে নাসিমা সুলতানা বলেন, ঢাকা মহানগরীতে সাধারণ শয্যায় ভর্তি আছেন ২ হাজার ৮৪ জন এবং আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছেন ১৯৩ জন। সারা দেশের অন্যান্য হাসপাতালের সাধারণ শয্যায় রোগী ভর্তি আছেন ১ হাজার ৫৩৭ জন এবং আইসিইউতে রোগী ভর্তি আছেন ১০৬ জন। সারা দেশে সব মিলিয়ে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৫ হাজার ২৪০টি, রোগী ভর্তি আছেন ৩ হাজার ৯৭১ জন, শয্যা খালি আছে ১১ হাজার ২৬৯টি। সারা দেশে আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ৫৪৯টি, রোগী ভর্তি আছেন ৩২৩ জন, শয্যা খালি আছে ২২৬টি। সারা দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৩৫২টি, হাই ফ্লো নেজাল ক্যানোলার সংখ্যা ৩১৪টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের সংখ্যা ১৫৭টি।

আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টাইন : আইসোলেশনে গত ২৪ ঘণ্টায় যুক্ত হয়েছেন ৬৩৫ জন, এই সময় ছাড়া পেয়েছেন ৭৩৬ জন। এ পর্যন্ত সর্বমোট আইসোলেশনে গেছেন ৪৯ হাজার ৯৫১ জন এবং ছাড় পেয়েছেন ৩১ হাজার ৩৮৩ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৮ হাজার ৫৬৮ জন। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইনে যুক্ত হয়েছেন ২ হাজার ৪৫৩ জন এবং এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে গেছেন ৪ লাখ ৩৪ হাজার ৩৯৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড়া পেয়েছেন দুই হাজার ২৭২ জন এবং এ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন থেকে ছাড় পেয়েছেন ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৭২ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টাইনে আছেন ৫৭ হাজার ৪২৫ জন।

আজ ৩১ জুলাই থেকে আইইডিসিআর ছাড়া অন্য হটলাইন বন্ধ

ঈদুল আজহা উপলক্ষে হটলাইনে করোনা ও অন্যান্য রোগের সেবা সীমিত করা হয়েছে। আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বর ১০৬৫৫ সর্বদা খোলা থাকবে। এ ছাড়া জাতীয় কল সেন্টার (৩৩৩) ও স্বাস্থ্য বাতায়নের (১৬২৬৩) হটলাইন সেবা ঈদে বন্ধ থাকবে। গতকাল দুপুরে করোনাভাইরাস বিষয়ক নিয়মিত হেলথ বুলেটিনে এ তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ডা. নাসিমা সুলতানা। আজ শুক্রবার (৩১ জুলাই) থেকে এই সেবা সীমিত করা হচ্ছে। তবে কবে নাগাদ এই সেবা পুরোপুরি চালু হবে তা জানাননি নাসিমা সুলতানা।

গত ২৪ ঘণ্টার হটলাইন ফোনের তথ্য তুলে ধরে নাসিমা সুলতানা বলেন, এ সময়ে মোট ফোনকল এসেছে ৭৪ হাজার ৩৬৯টি। এর মধ্যে স্বাস্থ্য বাতায়নে (১৬২৬৩) ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ১১ হাজার ৪১৪, ৩৩৩ নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৬২ হাজার ৪৭০ এবং আইইডিসিআরের দুটি নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৪৮৫টি। উল্লেখ্য, ৩১ জুলাই থেকে আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরটি (১০৬৫৫) ব্যবহৃত হবে। টেলিমেডিসিন সেবায় ২৪ ঘণ্টায় করোনা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৫৩১ জন। এ পর্যন্ত করোনা স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৩১৬ জন বলেও জানান নাসিমা সুলতানা।

সর্বশেষ খবর