বুধবার, ৫ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

পানিবন্দী মানুষের মানবেতর ঈদ

১৭ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে

নিজস্ব প্রতিবেদক

পানিবন্দী মানুষের মানবেতর ঈদ

আশুলিয়ার ধামসোনা এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে গেছে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

বন্যায় দেশের ১৮টি জেলার লাখ লাখ মানুষের ঈদ কাটল পানিবন্দী অবস্থায়। মাসব্যাপী বন্যার আঘাতে এবারের ঈদ তাদের জীবনে বয়ে আনেনি কোনো আনন্দ। বছরের বিশেষ এই দিনটিতেও অনেকের ভাগ্যে জোটেনি তিনবেলা খাবার। পরিবারের শিশুটির জন্য কেনা হয়নি নতুন পোশাক। এর মধ্যেই অনেকে বন্যার পানিতে হারিয়েছেন কোলের শিশুসন্তানকে। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে পথের ফকিরে পরিণত হয়েছেন। অধিকাংশ নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনো অনেক নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। মাস পার হলেও বাড়ি-ঘর থেকে বন্যার পানি না নামায় মানবেতর জীবন পার করছেন বন্যাকবলিত হতভাগা মানুষগুলো।

এদিকে টানা বন্যার মাস পার হলেও এখনো অনেক নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। কিছু নদীর পানি কমতে শুরু করলেও এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে ১৭টি নদীর পানি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল সকালের তথ্যানুযায়ী,  দেশের পর্যবেক্ষণাধীন ১০১টি পানি সমতল স্টেশনের ২৬টিতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। কমেছে ৭২টি স্টেশনে। অপরিবর্তিত রয়েছে তিনটিতে। ১৭টি নদীর পানি ২৭টি স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বর্তমানে বন্যা আক্রান্ত জেলা ১৮টি। ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। গঙ্গা-পদ্মা ও ঢাকার আশপাশের নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল রয়েছে। কুশিয়ারা ব্যতীত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে। আজ গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, বগুড়া, জামালপুর, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নওগাঁ, নাটোর, মানিকগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। তবে মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত থাকতে পারে। বন্যা নিয়ে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য- টাঙ্গাইল : মির্জাপুরে বন্যার পানিতে ডুবে নওশাদ হোসেন নামে সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রের মৃত্যু হয়েছে। জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের মির্জাপুর পুরাতন অংশের পুষ্টকামুরী চরপাড়া এলাকা বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়ায় সেখানে সড়কের ওপর দিয়ে প্রবল স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। সোমবার দুপুরে নওশাদ তার মা ও কয়েকজন বন্ধু মিলে সেখানে গোসল করতে যায়। গোসলের এক পর্যায়ে নওশাদ সবার অজান্তে পানির স্রোতে পাকা সড়ক থেকে বিলের পানিতে তলিয়ে যায়। পরে মহাসড়ক থেকে আনুমানিক ৫০ গজ ভাটিতে নওশাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। রাজশাহী : কোলের সন্তানকে বাঁচাতে গিয়ে বন্যার পানিতে প্রাণ দিয়েছেন মা আকলিমা বেগম (২৮)। সোমবার সকালে রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হামিরকুৎসা ইউনিয়নের কোনাবাড়িয়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নৌকা থেকে নিজের শিশু সন্তান বন্যার পানিতে পড়ে যাচ্ছে দেখে পানিতে ঝাপ দেন আকলিমা বেগম। এরপরই তলিয়ে যান। স্থানীয়রা আকলিমাকে তুললেও বাঁচাতে পারেননি। শরীয়তপুর : শরীয়তপুরে পদ্মার পানি এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখনো ৪ উপজেলার দুই লাখের বেশি মানুষ পানিবন্দী। বন্যার পানি কিছুটা কমলেও প্রচ- স্রোতের কারণে নদীভাঙন বেড়েছে। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। করোনার মধ্যে বন্যা ও ভাঙনে দিশাহারা জেলার মানুষ। ইতিমধ্যে নড়িয়া উপজেলার চরআত্রা ইউনিয়নের দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনের কারণে অন্তত ৮০টি বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। মানবেতর জীবন পার করছে বন্যা ও ভাঙন কবলিত মানুষ। ঈদের দিনেও একবেলা খাবার জুটলে আরেক বেলা জোটেনি অভাগা পরিবারগুলোর।

অর্ধহারে, অনাহারে জীবন পার করছে বন্যা ও ভাঙনকবলিত মানুষ। সরকারি ত্রাণ মিললেও তা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারে অপ্রতুল বলে জানিয়েছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

সাভার : আশুলিয়া, ধামসোনা, শিমুলিয়ার, পাথালিয়া, ইয়ারপুর, সাভার সদর, তেঁতুলঝড়া, বনগাঁও, আমিনবাজার, ভাকুর্তা, বিরুলিয়া ও কাউন্দিয়ার নিচু এলাকাগুলোর বেশিরভাগ ঘরে বন্যার পানি ঢুকে গেছে। কিছু এলাকায় ঘরের ভিতরে পানি না ঢুকলেও পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বাসিন্দারা। এবার রাজধানীর অনেক এলাকাই প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, শিমুলিয়ার ব্রিজ থেকে আমতলা দিকে খালের পানি অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২ নম্বর ধামসোনা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে গলা পানি পেরিয়ে বলিভদ্র নতুন নগরের দিকে যেতেই দেখা যায় রাস্তার দুই পাশ পুরো প্লাবিত। মূল সড়ক বাদে বেশিরভাগ সড়কই বন্যার পানিতে ডুবে গেছে। জানা যায়, সাভার সদর, সাভার পৌরসভা, তেঁতুলঝোড়া, কাউন্দিয়া, আরও আশপাশে জায়গা ডুবে গেছে। এর পাশে ও বিভিন্ন জায়গা ডুবে গেছে। শিমুলিয়ার ৩৭টি গ্রাম ডুবে গেছে। বড় রাঙ্গামাটিয়া সেতুর উভয় পাশে অনেক পাকা বা কাঁচা বাড়ি বন্যার পানিতে অর্ধেক ডুবে গেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় তিতাস, মেঘনা ও হাওড়া নদীর পানি অনেকাংশই কমে গেছে। পানি কমতে শুরু করলেও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদের চারটি পয়েন্টে এখনো বিপৎসীমার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। মেঘনা নদীর পানি এখনো বিপৎসীমার ৪১ সেন্টিমিটার নিচে আছে। হাওড়া নদীর পানি আখাউড়া পয়েন্টে ৩১ সেন্টিমিটার নিচে ও গঙ্গাসাগর পয়েন্টে ৯৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সরাইল অরুয়াইল সড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও সড়কটির বিভিন্ন স্থান ভেঙে যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

বরিশাল : গত সোমবার রাত থেকে গতকাল সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত বজ্রপাতসহ ভারি বর্ষণে তলিয়ে গেছে বরিশাল নগরীর বটতলা রোড, বগুড়া রোড, কালীবাড়ি রোড ও আগরপুর রোডসহ বিভিন্ন সড়ক। এতে চরম জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। এদিকে ঝড়-বৃষ্টির সময় আকস্মিক বজ্রপাতে নয়ভাঙ্গুলী নদীতে পড়ে এক পেয়ারা ব্যবসায়ী নিখোঁজ হয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর