শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

দুশ্চিন্তায় এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

কবে পরীক্ষা শুরু হবে তা নিয়ে কোনো নির্দেশনা এখনো পাওয়া যায়নি

আকতারুজ্জামান

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সারা দেশের ছাত্র-ছাত্রীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলেও চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থীদের। গত ১ এপ্রিল থেকে তাদের চূড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠানের কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এ পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়। করোনার প্রকোপ বন্ধ না হওয়ায় কবে এ পরীক্ষা শুরু হবে তা নিয়েও এসব ছাত্র-ছাত্রী কোনো নির্দেশনা পায়নি সরকারের কাছ থেকে। চলমান করোনা মহামারীর কারণে প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষার বিদ্যাপীঠ বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত সব শ্রেণির সরাসরি পাঠদান বন্ধ হয়ে গেছে। নানা মাধ্যম ব্যবহার করে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে সরকার। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অনলাইন কার্যক্রম কোনো কাজে আসছে না। কারণ সারা দেশের ১৩ লাখের বেশি এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার্থী এখন পরীক্ষার জন্য প্রহর গুনছে। চার মাসের বেশি সময় ধরে পরীক্ষার অপেক্ষায় থাকা এই শিক্ষার্থীরা ক্রমে পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এই পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত তাদের অভিভাবকরাও।  করোনার প্রকোপ কমাতে গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এদিন চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষাও স্থগিত ঘোষণা করা হয়। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন থাকলেও করোনার কারণে এ পরীক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি এর আগে এই প্রতিবেদককে বলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে এক/দুই সপ্তাহের নোটিসে এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার আয়োজন করা হবে। কিন্তু করোনার প্রকোপ কমে না আসায় কবে পরীক্ষা নেওয়া হবে তা নিয়ে সংশয়ে রয়েছে পরীক্ষার্থীরা। এ ছাড়া রীতি অনুযায়ী এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা প্রতিবছর এপ্রিলে শুরু হয়। সে হিসাবে যেসব শিক্ষার্থী একাদশে পড়াশোনা করছে তাদের এইচএসসি পরীক্ষাও মাত্র সাত মাস পরে আগামী এপ্রিলে শুরু হওয়ার কথা। অথচ এই ছাত্র-ছাত্রীদের অনেকের একাদশের সিলেবাসও সম্পন্ন করতে পারেনি কলেজগুলো। করোনাকালে একাদশ থেকে দ্বাদশে কীভাবে শিক্ষার্থীদের উত্তীর্ণ দেখানো হবে তার কোনো সিদ্ধান্তও জানায়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয়। যদিও কয়েকটি কলেজ শিক্ষার্থীদের দ্বাদশে উত্তীর্ণ দেখিয়ে বিভিন্ন ফি আদায় করেছে।

তথ্যমতে, এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশের পরপরই সারা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন শুরু হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করেও আলাদা প্রস্তুতি নিতে হয় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের। সাধারণত সেপ্টেম্বর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এ ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করে। এইচএসসি পরীক্ষা আটকে যাওয়ায় এই শিক্ষার্থীরা এইচএসসি পরীক্ষার পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে। দিনাজপুর সরকারি কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী শামসুন্নাহার কলি বলেন, এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে গেল। কবে হবে এ পরীক্ষা সেটিও বুঝতে পারছি না। পরীক্ষার পর বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে প্রয়োজনীয় সময় পাব না। তাই এখন এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেব নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নেব সেটি নিয়ে দ্বিধায় রয়েছি। এ পরীক্ষার্থী আরও বলেন, ইতিমধ্যে চার মাস পিছিয়ে গেল পরীক্ষা। ক্রমে পড়াশোনার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড, ঢাকার সচিব অধ্যাপক তপন কুমার সরকার গতকাল বলেন, এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার জন্য সব প্রস্তুতি নেওয়ার পর করোনা হানা দিয়েছে। এ পরীক্ষার আয়োজন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞ, তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার আগে এটি নেওয়ার সুযোগ নেই। পরীক্ষার্থী ছাত্র-ছাত্রীরা এখন পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে। তাই করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর স্বল্প সময়ের মধ্যে এ পরীক্ষা শেষ করা হবে। শিক্ষা বোর্ড সচিব আরও বলেন, করোনার কারণে সারা বিশ্বেই সংকটাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের ধৈর্য ধরে পড়াশোনা অব্যাহত রাখতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর