শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ত্রিরত্নর সহযোগী কর্মকর্তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন

ফরিদপুরের সাধারণ মানুষের প্রশ্ন

কামরুজ্জামান সোহেল, ফরিদপুর

ফরিদপুর শহরের কেন্দ্রস্থল আলীপুরে গতকাল দুপুরে এই প্রতিবেদককে দেখতে পেয়ে বললেন, ‘পত্র-পত্রিকায় দুর্নীতিবাজদের’ নাম আসছে। সে তালিকায় শুধু রাজনীতিবিদদের নাম। ফুয়াদ-বরকত-রুবেলদের যারা রাজা-বাদশাহ বানানোর নেপথ্যে ছিলেন বিভিন্ন দফতরের সেই কর্মকর্তারা তো দেখি আরামেই আছেন। এমন হবে কেন? শহরের কয়েকটি এলাকার জনমানস যাচাই করতে গিয়ে দেখা যায়, ফুয়াদ-বরকত-রুবেলকে ‘ত্রিরত্ন’ আখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষ বলছে, এদের দোস্ত সহযোগী ওই বদের বদ কর্মকর্তারা এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে কেন? সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ঝড় উঠেছে বিভিন্ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যারা ত্রিরত্ন ও তাদের সহচরদের অবৈধ কাজে সুবিধা দিয়ে নিজেরাও লাভবান হয়েছেন। তাদেরও আইনের আওতায় আনার দাবি জোরদার। জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার বিভিন্ন সরকারি অফিসের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা বর্তমানে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখে তাদের অবৈধ কাজে সহযোগিতা করে নিজেরা লাভবান হচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী, শিক্ষা অধিদফতরের কর্মকর্তা, সড়ক বিভাগের কর্মকর্তা, গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা, ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তা, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা, প্রাইমারি ট্রেনিং ইনস্টিটিউট-পিটিআইর প্রধান, খাদ্য অধিদফতরের কর্মকর্তা, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা। এর মধ্যে কেউ কেউ ফরিদপুর থেকে বদলি হয়ে চলে গেছেন, অনেকেই আবার বদলির জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অভিযোগ রয়েছে, সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন ফরিদপুরে এলে এসব কর্মকর্তা দাফতরিক কাজ ফেলে ‘আফসানা মঞ্জিলে’ বেশির ভাগ সময়ই অবস্থান করতেন। অভিযোগ রয়েছে, বিভিন্ন প্রোগ্রামে এসব কর্মকর্তা মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতেন। শুধু তাই নয়, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা তার অফিসের মধ্যে থাকা পুকুর থেকে বড় বড় মাছ ধরে পাঠাতেন প্রভাবশালী ব্যক্তির কাছে। এ বিষয়ে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় সুবিধা তাদের দিইনি। এসব সুবিধা দেওয়ার প্রশ্নও ওঠে না।’ আর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিফতরের এক কর্মকর্তা (সম্প্রতি বদলি হয়ে ঢাকায়) সরকারি টাকায় বিদেশি বিভিন্ন ফলের গাছ কিনে দিয়েছেন। শুধু ফরিদপুরের পদ্মার চরে প্রভাবশালী এক নেতাকে বিদেশি কয়েক হাজার নারকেল গাছের চারা উপঢৌকন দিয়েছেন। এ ছাড়া কয়েকজনকে নানাভাবে অবৈধ সুবিধা দিয়ে নিজে চাকরির পদোন্নতি বাগিয়ে নিয়েছেন বলে এলাকায় চাউর রয়েছে। এ বিষয়ে তৎকালীন কর্মকর্তা কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘আমার কাছ থেকে অবৈধ কোনো সুবিধা তারা নিতে পারেননি। তবে বাগান করার জন্য বিভিন্ন সময় তারা পরামর্শ চেয়েছেন, তাদের সে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’ ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষ মোশাররফ আলীর বিরুদ্ধেও নানা অভিযোগ উঠেছে। তিনি অধ্যক্ষ হওয়ার পর এ চক্রের সঙ্গে হাত মিলিয়ে রাজেন্দ্র কলেজকে বিতর্কিত করেছেন। শতবর্ষ উদ্যাপনের নামে কোটি কোটি টাকা উঠিয়ে তা ইচ্ছামতো খরচ করেছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক প্রোগ্রামে কলেজবাস দিয়ে লোক আনা-নেওয়ার কাজে সহযোগিতা করেছেন। তা ছাড়া বিস্তর অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মোশাররফ আলী বলেন, ‘সে সময় তারা যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই সবকিছু হয়েছে। ইচ্ছা না থাকলেও আমি সে সময় অনেক কিছুতেই বাধা দিতে পারিনি।’ ফরিদপুর পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পদে সে সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তার অনেকেই ফুয়াদ-বরকত-রুবেল গংয়ের অবৈধ কাজে সহযোগিতা করে তাদের আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার সুযোগ দিয়েছেন- এমন অভিযোগ জেলা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর। ফরিদপুরের মানুষের দাবি- ‘গডফাদারদের’ বিচারের আওতায় আনতে হবে।

 তাহলে ফের শান্তির সুবাতাস বইবে।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার আলিমুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, বরকত-রুবেলের স্বীকারোক্তিতে যাদের নাম এসেছে তার অনেককেই গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। অন্যায়-দুর্নীতির সঙ্গে যারাই জড়িত তাদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

সর্বশেষ খবর