শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

মানব পাচার চক্রে লিবিয়ার নাগরিক

নিজস্ব প্রতিবেদক

পৃথক অভিযানে লিবিয়ায় মানব পাচার চক্রের লিবিয়ার নাগরিকসহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব ও গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। র‌্যাবের অভিযানে লিবিয়ার এক নাগরিক এবং তার সহযোগী সুফি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যানসহ ছয়জন গ্রেফতার হয়েছে। গত দুই দিনে রাজধানীর হাতিরঝিল ও পল্টন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৩-এর অপারেশন অফিসার (এএসপি) ফারজানা হক। এদিকে বুধবার রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীর কাজলা থেকে লিবিয়ায় মানব পাচারকারী চক্রের হোতা মনিরসহ দুজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন সেলিম ওরফে সেলিম শিকদার ও মনির হাওলাদার ওরফে মনির হোসেন। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে তাদের আদালতে পাঠানো হয়। শুনানি শেষে সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে বিচারক।

এদের বিরুদ্ধে ৬ জুন মতিঝিল থানায় একটি মামলা হয়। এ মামলায় অন্তত ২৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। লিবিয়ার মিজদাহ শহরে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ জনকে নির্বিচারে গুলি করে হত্যার ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় ২৬টির বেশি মামলা হয়। এসব মামলায় ইতিমধ্যে ৭১ জন গ্রেফতার হয়েছে। র‌্যাবের অভিযানে গ্রেফতার হয়েছেন লিবিয়ার নাগরিক সামির আহমেদ ওরফে ওমর ফিরোজ (৪৫)। তাকে হাতিরঝিল এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। অন্যদের পল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরা হলেন সুফি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবদুল গোফরান (৬০) ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিজানুর রহমান (৩৪), ম্যানেজার নজরুল ইসলাম (৪২), হিসাবরক্ষক মহিন  উদ্দিন (৩১) ও ম্যান পাওয়ার এজেন্ট সোহেল (২৪)। প্রাথমিক তদন্তে এদের সম্পর্কে র‌্যাব জানতে পেরেছে, লিবিয়ার নাগরিক সামির আহমেদ ট্যুরিস্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তিনি অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছিলেন। গ্রেফতার হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি বিলাসবহুল একটি হোটেলে থাকা-খাওয়া বাবদ ৬০ লাখ টাকা পরিশোধ করেছেন। এসব টাকা তিনি প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে তথ্য রয়েছে র‌্যাবের কাছে। গোয়েন্দা পুলিশ জানায়, সেলিম ও মনির শরীয়তপুর, মাদারীপুর, ফেনী, টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার সহজ-সরল লোকদের টার্গেট করে ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়ায় নিতে তাদের পাসপোর্ট ও ছবি সংগ্রহ করতেন। মনির সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন। তীক্ষè বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যেই লিবিয়ার মিলিশিয়া, সেনাবাহিনী ও স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে অবৈধ সখ্য গড়ে তোলেন মনির। তাদের সহযোগিতায় প্রত্যক্ষভাবে বেনগাজির মাঝুরি, ত্রিপোলির সুলেমান এবং জোয়ারার গেইমিং ক্যাম্প পরিচালনা করেন তিনি। মনির প্রথমবার ২০১০ সালে তার আত্মীয় শাহজালালের মাধ্যমে, দ্বিতীয়বার ২০১৫ সালে এবং তৃতীয়বার ২০১৮ সালে দালাল শরিফ ও কবিরের মাধ্যমে লিবিয়ায় যান। মনির লিবিয়ায় প্রথমে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে শ্রমিকের চাকরি করলেও পরবর্তী সময়ে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে জনপ্রতি ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে দালাল শরিফ ও কবিরের পরিচালিত স্বাধীন ট্রাভেলসের মাধ্যমে অবৈধভাবে শতাধিক লোককে বাংলাদেশ থেকে লিবিয়ায় নিয়ে যান। বাংলাদেশ থেকে দুবাই হয়ে বেনগাজিতে নেওয়া হয় তাদের। এরপর বন্দীশালায় আটক রেখে আত্মীয়স্বজনের কাছে চুক্তির টাকাসহ অতিরিক্ত দাবি করেন। ডিবি পুলিশের গুলশান বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান জানান, মনিরের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে লিবিয়ায় একাধিক ক্যাম্পে তার নিজস্ব লোকজনের হেফাজতে আরও বেশ কিছু বাংলাদেশি প্রতারিত হয়ে বন্দী অবস্থায় আছেন।

ইতিমধ্যে অন্য মামলায় গ্রেফতার হওয়া বাদশাহর মাধ্যমে যোগাযোগ করে কমপক্ষে ১৭ জন বাংলাদেশিকে মুক্ত করা হয়েছে। তারা তাদের পাসপোর্ট ও পকেটমানি পেয়েছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর