শুক্রবার, ৭ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

কোয়ারেন্টাইন আবাসন নিয়ে দুশ্চিন্তায় চিকিৎসকরা

মন্ত্রণালয় টাকা দেবে জায়গা দেবে না

জয়শ্রী ভাদুড়ী

কভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের সেবাদানকারী চিকিৎসকদের হোটেলে কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থার পরিবর্তে দৈনিক নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেবে মন্ত্রণালয়। ফলে কোয়ারেন্টাইন সময়ে বসবাসের ব্যবস্থা করতে হবে নিজ দায়িত্বে। করোনা রোগীদের সরাসরি সেবার দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা এ সিদ্ধান্তে পড়েছেন দুশ্চিন্তায়। এ সিদ্ধান্ত অমানবিক ও অপমানজনক বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা। করোনা প্রাদুর্ভাবের পর গত ১২ এপ্রিল রাজধানীর ছয় হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের স্বাস্থ্য সেবাদানকারী চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য ১৯টি হোটেল নির্ধারণ করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কিন্তু গত ২৯ জুলাই স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত জারি করা পরিপত্র অনুযায়ী করোনা রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের আবাসিক হোটেলের বিল পরিশোধ না করার সিদ্ধান্ত নেয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে চিকিৎসকদের জন্য বরাদ্দ হোটেলের সুবিধাও বাতিল করে তারা। পরিপত্র অনুযায়ী রাজধানী ঢাকার মধ্যে দায়িত্ব পালনকারী একজন চিকিৎসক দৈনিক দুই হাজার টাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার ৮০০ টাকা, একজন নার্স ঢাকার মধ্যে এক হাজার ২০০ ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে এক হাজার টাকা এবং একজন স্বাস্থ্যকর্মী ঢাকার মধ্যে ৮০০ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৬৫০ টাকা ভাতা পাবেন। কিন্তু চিকিৎসকরা বলছেন, তারা কেউ এই টাকা চাননি বরং পরিবারের সুরক্ষাটাই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে আগের নিয়ম অনুযায়ী সাত দিন ডিউটি করার পর ১৪ দিন আইসোলেটেড থাকার নিয়ম ছিল। কিন্তু এখনকার নিয়মে ১৫ দিন একটানা ডিউটি করার কথা বলা হয়েছে, এটা রীতিমতো আত্মহত্যার শামিল, বলছেন তারা। করোনা রোগীদের নির্ধারিত হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার কারণে চিকিৎসকরা সাধারণ মানুষের চেয়ে তিনগুণ বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। তাই ডিউটি করার পর চিকিৎসকদের জন্য কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল যেন পরিবারের কেউ তার থেকে সংক্রমিত না হন। মুগদা জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত এক চিকিৎসক বলেন, এর আগে চিকিৎসকরা নিজ দায়িত্বে ভাড়া বাসায় থাকতে গিয়ে নানা ধরনের বিড়ম্বনার শিকার হয়েছেন। আবার সেখানেই আমাদের নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা কখনই পাঁচ তারকা হোটেলে থাকতে চাইনি। মানসম্মত বাসস্থান আর যোগ্য সম্মানটুকু চেয়েছি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রে আবাসিক হোটেলে না থেকেও অনেক চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী হোটেলের বিল তুলে নিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটা পুরো চিকিৎসক সমাজকে হেয় করা মন্তব্য করে সাধারণ চিকিৎসকরা বলছেন, চিকিৎসকরা কীভাবে বিল তুলবেন, বিলের দায়িত্ব তো চিকিৎসকদের নয়। চিকিৎসকদের সে ক্ষমতাই নেই, এর পুরোটা দেখভাল করে মন্ত্রণালয়। এই পরিপত্রকে প্রত্যাখ্যান করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। বিএমএ সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও মহাসচিব ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের অনেক ভুলের কারণে এর মধ্যেই প্রায় তিন হাজার চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন, ৭০ জন মারা গেছেন। এরপরও চিকিৎসকদের করোনাকালীন কর্মঘণ্টা ও কোয়ারেন্টাইনে থাকার অবৈজ্ঞানিক পরিপত্রটি আমরা প্রত্যাখ্যান করছি ও প্রত্যাহারের অনুরোধ করছি।’ ডা. ইহতেশামুল হক চৌধুরী বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তে চিকিৎসকদের সঙ্গে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে যাচ্ছে তাদের পরিবারও। আমরা এর মধ্যেই অনেক সহকর্মীকে হারিয়েছি। এ ধরনের ভুল সিদ্ধান্তে করোনা আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয়।’ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিপত্রের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব)। সংগঠনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ ও মহাসচিব ডা. মো. আবদুস সালাম যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, ভুল সিদ্ধান্ত, সমন্বয়হীনতা ও নিম্নমানের সুরক্ষা সামগ্রী দেওয়ায় এর মধ্যেই অনেক চিকিৎসক মারা গেছেন। এখন এই প্রজ্ঞাপনে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের পাশাপাশি তাদের পরিবারের সদস্যরাও ঝুঁকিতে পড়ল। এই প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর