শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

গঙ্গামতীর বনসাই বন

আলম শাইন

গঙ্গামতীর বনসাই বন

১৭৮৪ সালে আরাকান থেকে বিতাড়িত রাখাইন সম্প্রদায় কুয়াকাটা সৈকত সংলগ্ন এলাকায় আশ্রয় নিয়ে সুপেয় পানির সন্ধানে একটি কুয়া বা কূপ খনন করে। সেই থেকে এলাকার নামকরণ হয় ‘কুয়াকাটা’। ধীরে ধীরে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে এটি ‘কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত’ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করে। দেশে এটিই একমাত্র সৈকত, যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত দেখা যায়। তবে দৃশ্য দুটি উপভোগ করতে হলে সৈকতের ভিন্ন ভিন্ন স্থানে দাঁড়াতে হয়। সূর্যোদয়ের সেই স্থানটি হচ্ছে গঙ্গামতী লেকের মোহনা অথবা গঙ্গামতী জঙ্গল প্রান্তর। আর সূর্যাস্ত নজরে পড়ে সৈকতের যে কোনো স্থানে দাঁড়ালেই।

গঙ্গামতীর জঙ্গলের একাধিক নাম। কারও কাছে ‘গঙ্গামতী জঙ্গল’ কারও কাছে ‘গজমতী জঙ্গল’। স্থানীয়দের কাছে ‘ফাতরা বন’ নামে পরিচিত। কুয়াকাটার মূল সমুদসৈকত থেকে তিন-চার কিলোমিটার দূরে জঙ্গলটি। পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার লতাচাপলী ইউনিয়নে এর অবস্থান। কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকত থেকে গঙ্গামতীর জঙ্গলে যাতায়াতের একমাত্র বাহন হচ্ছে মোটরবাইক। ফেনিল            জলমিশ্রিত বালুকাবেলার সৈকত ধরে উত্তরে মিনিট বিশেক গেলেই গঙ্গামতী লেক। আর লেক পাড় থেকেই জঙ্গলের শুরু। মৌসুমে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক মোটরবাইকে চড়ে নয়নাভিরাম জঙ্গল আর লেক দেখার জন্য যাতায়াত করেন। চলতিপথে সুখানুভূতি লাভ করেন সমুদ্র থেকে ধেয়ে আসা নোনাহাওয়ার পরশে। আশপাশের সবুজ সমাহারে স্বর্গীয় আনন্দের পাশাপাশি শারীরিক ক্লান্তিও দূর করে দেয়। গঙ্গামতির জঙ্গলে পা রাখলেই মনে হয় যেন কোনো বনসাই বনে দাঁড়িয়ে আছেন পর্যটক। এক মানুষ সমান উচ্চতার একই প্রজাতির ‘ফাতরা গাছ’ বনের কিনারে দাঁড়িয়ে আছে। সেটি দেখে মনে হয় কোনো বনসাই শিল্পীর নিপুণ ছোঁয়ায় গাছগুলো নজরকাড়া রূপ ধারণ করেছে। আসলে তা নয়, গাছগুলোরও আকৃতি প্রকৃতিপ্রদত্ত। টবে লাগানো বনসাইয়ের মতো শিকড়-বাকড় বেরিয়ে থাকলেও যতœআত্তিতে মানুষের হাতের ছোঁয়া লাগেনি মোটেও। যতœআত্তি ছাড়াই গাছগুলো যুগের পর যুগ সমুদ্রমুখী হয়ে বালুকাবেলায় দাঁড়িয়ে আছে। এই অদ্ভুত আকৃতির গাছগুলো দেখেই পর্যটক মোহিত হন, ভালোবেসে গাছগুলোকে স্পর্শ করেন, গাছের পাশে বিভিন্ন আঙ্গিকে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে স্মৃতির আলনায় ভাঁজ করে রাখেন। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, এক গাছ থেকে অন্য গাছের দূরত্ব বেশ খানিকটা। ফলে বনটা বেশ ফাঁকা দেখায়, জঙ্গল মনে হয় না। বনের ভিতরের গাছ-গাছালি কিছুটা ঘন; তবে দুর্ভেদ্য নয়। গঙ্গামতী জঙ্গলের বাড়তি আকর্ষণ হচ্ছে বনমোরগ। তবে যখন তখন নজরে পড়ে না। চুপচাপ আড়ালে আবডালে দাঁড়িয়ে থাকলেই কেবল নজরে পড়ে। সেক্ষেত্রে খানিকটা ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হয়। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে তবেই বনমোরগ খাদ্যের সন্ধানে বের হয়, তখন দেখার সুযোগ হয়। লেখক : কথাসাহিত্যিক, কলামিস্ট ও বন্যপ্রাণী বিশারদ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর