শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নিয়ন্ত্রণের কেউ নেই!

টিউশন ফি দিতে না পারায় অনলাইন ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ

আকতারুজ্জামান

বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ন্ত্রণের যেন কেউ নেই। দেশে ৪ শতাধিক ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের অধিকাংশই চলছে সরকারের নিবন্ধন ছাড়া। নিবন্ধন না থাকায় সরকারের কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করছে না তারা। যেসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষা বোর্ড থেকে নিবন্ধন নিয়েছে সেগুলোও চলছে লাগামহীন ঘোড়ার মতো। নিবন্ধন নিলেও তারা সরকারের সব নিয়ম মানছে না।

করোনাভাইরাসের কারণে সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে ১৭ মার্চ থেকে। তবে বেশকিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করছে। কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে টিউশন ফি দিতে না পারায় অনলাইন ক্লাস থেকে শিক্ষার্থীদের বের করে দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে রাজধানীর কয়েকটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের বিরুদ্ধে। কিছু ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল টিউশন ফি যথাসময়ে পরিশোধ করতে না পারায় নিচ্ছে জরিমানাও। অথচ ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এক নির্দেশনায় বলেছে, করোনাকালে টিউশন ফির জন্য কোনো চাপ দেওয়া যাবে না অভিভাবকদের। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার পর বকেয়াসহ মাসিক বেতন আদায় করতে হবে।

রাজধানীতে ব্যাঙের ছাতার মতোই এখন গজিয়ে উঠছে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলও! অনেক স্কুলে কর্মরত শিক্ষকদের নামমাত্র বেতন দেওয়া হচ্ছে। অথচ শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা হয় গলা কাটা ফি। এ ছাড়া মাঝেমধ্যেই বাড়ানো হচ্ছে ভর্তি ফি, মাসিক বেতনসহ অদ্ভুত সব চার্জ। স্কুলগুলো খেয়াল খুশিমত চলছে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড ঢাকার স্কুল পরিদর্শক মোহাম্মদ আবুল মনছুর ভূঁঞা গতকাল এ প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকা বোর্ডের আওতায় মাত্র ১১৫টি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল নিবন্ধিত রয়েছে। নিবন্ধিত থাকলেও সেগুলো বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা, ২০১৭ মানছে না। অনেক স্কুল নিবন্ধন না নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে। শিগগিরই শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে এসব স্কুলের উদ্দেশে একটি আদেশ জারি করা হবে। এ স্কুলগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করা হবে। স্কুলগুলোর আয়-ব্যয়ের কপিও শিক্ষা বোর্ডকে দিতে হবে। ব্রিটিশ কিংবা এডেক্সেলের সিলেবাস অনুসরণ করে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা পড়াশোনা করে ব্রিটিশ কাউন্সিলের মাধ্যমে পরীক্ষা দিলেও কতজন কী পরীক্ষা দিল, অ্যাডমিশন ও টিউশন ফি বাবদ কত টাকা আদায় করা হলো সেসব বিষয়েও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কোনো তথ্য নেই! সম্প্রতি ইংরেজি মাধ্যমের বিদ্যালয়গুলোকে নিবন্ধন করার নির্দেশনা জারি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এটি বাস্তবায়ন করতে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর, শিক্ষা বোর্ডগুলো ও মাউশির নয় আঞ্চলিক উপপরিচালককেও অনুলিপি পাঠিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে নিবন্ধিত ও নিবন্ধনবিহীন কতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে তার তথ্যও জানাতে বলা হয়েছে মন্ত্রণালয়কে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় বলা হয়, বিদেশি কারিকুলামে পরিচালিত বেসরকারি বিদ্যালয় নিবন্ধন বিধিমালা অনুসারে নিবন্ধন ফি জমা দিয়ে বিদ্যালয়গুলোকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের (শিক্ষা বোর্ড) কাছ থেকে নিবন্ধন সনদ নেওয়া বাধ্যতামূলক। বেসরকারি বিদ্যালয়ে সহপাঠ কার্যক্রম পরিচালনা, কোনো বিশেষ সুবিধা এবং উন্নতমানের যন্ত্রপাতি বা প্রযুক্তি সুবিধা ব্যবহারের জন্য ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে ফি আদায় করা যাবে, তবে এ ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদিত পূর্ণাঙ্গ ব্যয় বিবরণী অভিভাবকদের লিখিতভাবে অবহিত করতে হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্যারেন্টস ফোরাম নামে অভিভাবকদের এক সংগঠন সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলনে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার স্বার্থে একটি স্বায়ত্তশাসিত নিয়ন্ত্রক সংস্থা গঠনের দাবি জানিয়েছে। একই সঙ্গে স্কুলগুলো পরিচালনার জন্য সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য একটি নীতিমালা প্রণয়ন, কমপক্ষে দুজন নির্বাচিত অভিভাবক নিয়ে স্কুলের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করারও দাবি জানায় তারা। অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি জিয়াউল কবির দুলু বলেন, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোকে আইন মানতে বাধ্য করতে হবে। নিবন্ধনের ব্যবস্থা আরও আগে কার্যকর করা উচিত ছিল। আইন না মানার কারণে তারা বেপরোয়া আচরণ করছে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে। যেসব স্কুল আইন মানবে না তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, ইংলিশ মিডিয়ামের পাশাপাশি বাংলা মিডিয়ামের স্কুলগুলোর আয়-ব্যয়ের তথ্যও অভিভাবকদের জানাতে সরকারের ব্যবস্থা নিতে হবে।

সর্বশেষ খবর