শনিবার, ৮ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি কমেনি ভোগান্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। দ্রুত কমছে নদ-নদীর পানি। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, তিন দিনের মধ্যে বন্যামুক্ত হয়েছে ছয়টি জেলা। পাঁচটি নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে এসেছে। আগামী এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে দেশের বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসবে। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও ভোগান্তি কমেনি দীর্ঘমেয়াদি বন্যায় সহায়-সম্বল হারানো বানভাসি মানুষের।

এদিকে অধিকাংশ নদ-নদীর পানি কমলেও এখনো বিপৎসীমার ওপরে রয়েছে ১২টি নদীর পানি। ফলে বন্যাদুর্গত অনেক এলাকা থেকে বন্যার পানি এখনো নামেনি। অনেক এলাকার পানি নেমে গেলে স্যাঁতসেঁতে কর্দমাক্ত পরিবেশের কারণে ঘরে ফিরতে পারছেন না বানভাসিরা। নেই রান্নার জায়গা। আবার বন্যার স্রোত অনেকের ঘর ভেঙে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। নদী ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছে অনেক পরিবার। এ ছাড়া বন্যাদুর্গত এলাকায় খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। কাজ না থাকায় চরম অর্থাভাবে আছেন দুর্গত এলাকার মানুষ। মাসব্যাপী বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে দিশাহারা কৃষক। পুকুর ও ঘেরের মাছ ভেসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হাজারো মাছ চাষি। অনেক এলাকায় বন্যার পানিতে ডুবে মারা গেছে খামারের হাজার হাজার মুরগি। সব মিলে বন্যা  পরিস্থিতির উন্নতি হলেও এখনো দুর্ভোগ কাটেনি বানভাসিদের। সামনের দিনগুলো কীভাবে কাটবে তা নিয়ে উদ্বিঘœ করোনার মধ্যে বন্যা দুর্যোগে পড়া মানুষগুলো। এদিকে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্যমতে, ৪ আগস্ট বন্যায় আক্রান্ত জেলা ছিল ১৮টি। গতকাল বন্যা আক্রান্ত জেলা ১২টিতে নেমে আসে। তিন দিন আগে ১৭টি নদ-নদীর পানি ২৭টি স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল সকালে ১২টি নদ-নদীর পানি ১৬টি স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। তিন দিনে ১১টি স্টেশনে পানি বিপৎসীমার নিচে নেমেছে। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকালের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, ঢাকার আশপাশের নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা সিটি করপোরেশন সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এ ছাড়া ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। মনু নদী ছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উজানে মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানি কমছে, যা আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, নাটোর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, চাঁদপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য-

কুড়িগ্রাম : নদ-নদীর পানি দ্রুত কমে কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। বানভাসিদের অধিকাংশই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরতে শুরু করেছেন। কিন্তু তিন দফা দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় তাদের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতি হয়েছে বাড়িঘর, ফসলি জমি ও মাছ চাষের। দেড় মাস ধরে উঁচু বাঁধ, স্কুল-কলেজসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে থাকা বানভাসিরা ঘরে ফিরে স্বস্তি প্রকাশ করছেন অনেকে। অনেকের বাড়িঘরে কাদা থাকায় এখনই ফিরতে চাচ্ছেন না। পানিবন্দী ৯ উপজেলার ৫৬টি ইউনিয়নের পাঁচ শতাধিক গ্রামের সাড়ে ৩ লক্ষাধিক মানুষ দীর্ঘ এ বন্যার সঙ্গে টানা দেড় মাস যুদ্ধ করে বেঁচে থাকলেও বন্যার ক্ষতি তারা কীভাবে পুষিয়ে উঠবেন তা নিয়ে উদ্বিঘ্ন। সদর উপজেলার ধরলা বাঁধের পাড় এলাকার মিনু বেগম জানান, বন্যায় অনেক কষ্টে দেড় মাস পার করলাম। পানি সরে যাওয়ায় বাড়িতে এসেছি। কিন্তু ঘরবাড়ি কাদায় ভর্তি। এ ছাড়া আমার স্বামীর কোনো কাজ ছিল না। হাতে টাকা-পয়সা নেই। কীভাবে চলব তা জানি না। সিরাজগঞ্জ : দফায় দফায় বন্যায় সিরাজগঞ্জ জেলার পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকে নদী ভাঙনের শিকার হয় ঘরবাড়ি হারিয়ে খোলা আকাশের নিচে ঝুপড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত বসসতভিটা আঁকড়ে ধরে রয়েছেন। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটছে এসব মানুষের। বিশেষ করে চরাঞ্চলের ৩০টি ইউনিয়নের মানুষের দুর্ভোগ চরমে। চরাঞ্চলের পানিবন্দী মানুষের হাত-পায়ে ঘাসহ ডায়রিয়া ও আমাশয় দেখা দিচ্ছে। বর্তমানে পানি কমলেও দুর্ভোগ কমেনি। নিম্নাঞ্চলের কেউ বসতভিটায় ফিরে যেতে পারেনি। যারা বসতভিটায় ফিরেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত বসতভিটা মেরামত নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছে। অর্থের অভাবে ঘরবাড়ি মেরামত করতে পারছে না। বন্যায় সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্পের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সুতা, বিম, ত্যানা, নলি ও মোটরসহ সব পানিতে তলিয়ে নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক তাঁত মালিকরা দিশাহারা হয়ে পড়েছেন। সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আবদুর রহিম জানান, বন্যায় সাতটি উপজেলার ৫ লাখ ৪ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ১৪ হাজার হেক্টরের বেশি ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ৩৪২ কিলোমিটার রাস্তার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সহস্রাধিক ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ এবং ৫ হাজারের অধিক বসতবাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

সর্বশেষ খবর