রবিবার, ৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

থমকে আছে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান

আজ জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস

জিন্নাতুন নূর

করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে বাংলাদেশের সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম থমকে আছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন, মহামারী সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধান কার্যক্রমকে আরও জটিল করে তুলবে। তারা আশঙ্কা করছেন এ কারণে দেশের জ¦ালানি অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘদিনের জন্য পিছিয়ে যাবে। উৎপাদন বণ্টন চুক্তি (পিএসসি) অনুমোদনের পর চলতি বছরের মার্চে, মুজিববর্ষ উপলক্ষে সরকারের সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র আহ্বান করার কথা ছিল। কিন্তু করোনার প্রভাবে নতুন পিএসসি আহ্বান না করার অনুরোধ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলো। এ ছাড়াও বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের অব্যাহত দরপতনে আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলো এ কাজে উৎসাহিত হবে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। সব মিলিয়ে সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধান কার্যক্রমে শিগগিরই কোনো সুখবর আসছে না। আর এই অবস্থায় আজ ৯ আগস্ট দেশব্যাপী পালিত হচ্ছে জাতীয় জ্বালানি নিরাপত্তা দিবস।

অন্যদিকে সুখবর নেই দেশের গ্যাস খনিগুলোরও। এরই মধ্যে খনিগুলোতে গ্যাসের উৎপাদন কমতে শুরু করেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশীয় গ্যাসের উৎপাদন মাসে কমেছে ৩৫০ মিলিয়ন ঘনমিটারের (এমএসসিএম) ওপরে। এই অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি জ্বালানি সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান কার্যক্রম আরও জোরদার করা প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। এ লক্ষ্যে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে পিএসসি আহ্বানের প্রক্রিয়া শুরু করার কথা রয়েছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা)। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে তা কতটা অগ্রসর হবে সে প্রশ্ন থেকেই যায়। বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, মহামারীর আগে দরপত্র আহ্বান করে ভালো সাড়া পাওয়া যাবে এমন ধারণা করা হলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ইতিবাচক কিছু না পাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। এমনকি পরিস্থিতির উন্নতি এবং বিশ্ব অর্থনীতি ভালো হওয়ার পর বছর শেষে দরপত্র আহ্বান করা হলে কোনো বিনিয়োগকারী পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাগরে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য আমাদের টেন্ডার হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সাগরে মাল্টি ক্লাইন্ট সার্ভের কাজ পিছিয়ে গেছে। ফলে এই কাজে আরও কিছুটা সময় লাগতে পারে।

জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আনিছুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমাদের পরিকল্পনা ছিল মুজিববর্ষ উপলক্ষে চলতি বছরের মার্চ মাসে সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য দরপত্র আহ্বান করার। কিন্তু বৈশ্বিক মহামারীর কারণে প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়। আপাতত আমরা এ সংশ্লিষ্ট কাজ এগিয়ে নেওয়ার  কথা ভাবছি না। মহামারীর জন্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ বন্ধ আছে। আবার আমরা যে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করি এর মধ্যে কিছু ভার্চুয়াল আবার কিছু সরাসরি ডকুমেন্ট পাঠাতে হয়। পরিস্থিতি ভালো হলে এ-সংক্রান্ত কাজের জন্য যেসব প্রতিষ্ঠান আগে বাংলাদেশে এসেছে বা দেশের বাইরে আছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বদরুল ইমাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশ সরকার বহুদিন ধরেই সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধানের চেষ্টা করছে। ২০১৬ সালে একটি মাল্টি ক্লাইন্ট সার্ভে করার কথা ছিল কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তা আর করা হয়নি। আর এটি না করলে বাংলাদেশ ব্লক বিডিংয়ে পিছিয়ে থাকবে। তিনি বলেন, এটি না হওয়া সাগরে জ্বালানি অনুসন্ধান কার্যক্রমের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। করোনা মহামারী শুরুর আগে এই সার্ভে করার কথা শুনেছি। কিন্তু সেটিও করোনা পরিস্থিতির কারণে আবার পিছিয়ে পড়েছে। অর্থাৎ আপাতত দেশের জ্বালানি অনুসন্ধান কার্যক্রম দীর্ঘদিনের জন্য পিছিয়ে থাকবে বলে আশঙ্কা করছি।

জ্বালানি বিভাগের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে, বঙ্গোপসাগরে ২০১৭ সালের যে ব্লক মানচিত্র তৈরি করেছিল পেট্রোবাংলা সেখানে দেখা যায় সব মিলিয়ে ব্লক রয়েছে ২৬টি। এর মধ্যে অগভীর সমুদ্রে রয়েছে ১১টি আর গভীর সমুদ্রে রয়েছে ১৫টি ব্লক। এর মধ্যে মাত্র চারটি ব্লকে আন্তর্জাতিক তেল-গ্যাস অনুসন্ধান উত্তোলনকারী কোম্পানি কাজ করছে। অন্য ২২টি ব্লক একেবারে পড়ে রয়েছে।  সমুদ্রাঞ্চলে তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে চারটি ব্লকের অগ্রগতি সম্পর্কে জ্বালানি বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ওএনজিসি ভিদেশ লি. অগভীর সমুদ্রের ব্লক এসএস-০৪ এবং এসএস-০৯ এ মোট ৫০৮১ লাইন কিলোমিটার ২-ডি সাইসমিক সার্ভে ও ডাটা ইন্টারপ্রেটেশনের কাজ সম্পন্ন করেছে। ব্লক এসএস-০৪ ও ১টি অনুসন্ধান কূপ (কাঞ্চন-১) খনন কার্যক্রম ইতিমধ্যে শুরু করার পরিকল্পনা থাকলেও বিদ্যমান বৈশ্বিক মহামারীর কারণে কূপের খনন কাজ শুরু হতে সময় লাগছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত কূপের খনন কাজও শুরু করা সম্ভব নয়। এ ছাড়া আগামী বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি এর মধ্যে এসএস-০৪ আরও একটি অনুসন্ধান কূপ এবং ব্লক এসএস-০৯ এ ১টি অনুসন্ধান কূপ খননের জন্য প্রস্তুতিমূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জিওটেকনিক্যাল সার্ভের মালামাল আমদানির কাজ শুরু হলেও করোনায় ক্রু আসতে না পারায় ভেসেল মুভ করতে পারছে না।

সর্বশেষ খবর