এবার ঈদুল আজহায় সীমিত আকারে মহাসড়কে যান চলাচল হলেও সড়ক দুর্ঘটনার হার কমেনি। ঈদে দেশের সড়ক-মহাসড়কে মোট ২০১টি দুর্ঘটনায় ২৪২ জন নিহত এবং ৩৩১ জন আহত হয়েছে। আর সড়ক, রেল ও নৌ-পথে ২৩৮টি দুর্ঘটনায় ৩১৭ জন নিহত ও ৩৭০ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল দুপুরে নগরীর সেগুনবাগিচার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানানো হয়। সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিবেদন-২০২০ প্রকাশকালে এ তথ্য তুলে ধরেন। যাত্রী কল্যাণ সমিতির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল প্রতি বছরের মতো এবারও এই প্রতিবেদনটি তৈরি করে। এতে বলা হয় বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর গণপরিহন সীমিত আকারে চালু থাকায় ঈদযাত্রায় ব্যক্তিগত পরিবহন ও ছোট যানবাহনের যাতায়াত বেড়েছে। এ কারণেই ব্যক্তিগত পরিবহনে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি বেড়েছে। বিগত ২৬ জুলাই থেকে ৭ আগস্ট পর্যন্ত ১৩ দিনে ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪২ জন নিহত ৩৩১ জন আহত হয়েছে। উল্লিখিত সময়ে রেলপথে ৪টি ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। একই সময়ে নৌ-পথে ৩৩টি ছোট-বড় বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনায় ৭৪ জন নিহত ও ৩৯ জন আহত এবং ১৭ জন নিখোঁজের খবর পাওয়া গেছে। এ সময়ে ৮৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১০৬ জন নিহত এবং ৬৫ জন আহত হয়। মোট সংঘটিত ২০১টি সড়ক দুর্ঘটনার ৮৮টি ঘটেছে মোটরসাইকেলের সঙ্গে অন্যান্য যানবাহনের সংঘর্ষে। যা মোট দুর্ঘটনার ৪৩.৭৮ শতাংশ। অন্যদিকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে ৫২.২৩ শতাংশ।

আগামী ঈদে এ দুটি ঘটনা এড়ানো সম্ভব হলে সড়ক দুর্ঘটনার প্রায় ৯৬.০১ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে বলে সংগঠনটি মনে করছে। এই সময় সড়কে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন ১০২ জন চালক, ৬৩ জন পথচারী, ৩৮ জন নারী, ৩০ জন শিশু, ১৩ জন পরিবহন শ্রমিক, ১১ জন শিক্ষার্থী, ৫ জন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, ৭ জন শিক্ষক, ৭ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, ২ জন সাংবাদিক এবং ১ জন প্রকৌশলী। সংঘটিত দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা যায়, মোট যানবাহনের ৩২.৫৮ শতাংশ মোটরসাইকেল, ১৯.৩৫ শতাংশ বাস, ১৯.৩৫ শতাংশ ট্রাক-পিকআপ-কাভার্ডভ্যান-লরি, ১০ শতাংশ ব্যাটারি রিকশা-ইজিবাইক-ভ্যান-সাইকেল, ৮.০৬ শতাংশ অটোরিকশা, ৭.৭৪ শতাংশ কার-মাইক্রো-জিপ ও ২.৯০ শতাংশ নসিমন-করিমন-ট্রাক্টর-লেগুনা-মাহিন্দ্রা এসব দুর্ঘটনায় জড়িত ছিল। সংঘটিত দুর্ঘটনার ২৪.৩৭ শতাংশ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ৫২.২৩ শতাংশ পথচারীকে গাড়ি চাপা দেওয়ার ঘটনা, ১৫.৯২ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ার ঘটনায় ও ৭.৪৬ শতাংশ অন্যান্য অজ্ঞাত কারণে দুর্ঘটনা সংঘটিত হয়েছে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, মাত্র ১৫ থেকে ২০ শতাংশ যাত্রীর যাতায়াত হলেও সেই তুলনায় এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যক্তিগত যানবাহনের চালকদের প্রশিক্ষণ, নিয়ন্ত্রয়ক সংস্থা বিআরটিএসহ ট্রাফিক বিভাগের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, ছোট যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও গণপরিবহনকে বিকশিত করা জরুরি।