মঙ্গলবার, ১১ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

মধ্য আগস্টে ফের বাড়বে বন্যার পানি

দুর্গত এলাকায় দুর্ভোগের শেষ নেই

প্রতিদিন ডেস্ক

মধ্য আগস্টে ফের বাড়বে বন্যার পানি

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে কেরানীগঞ্জের উত্তর বাহেরচর এলাকা। বাড়িঘরসহ টিউবওয়েল ডুবে যাওয়ায় প্রতিদিন ভেলা নিয়ে খাওয়ার পানি সংগ্রহ করেন ইয়াসমিন। গতকাল তোলা ছবি -জয়ীতা রায়

নদ-নদীতে বন্যার পানি চলতি আগস্টের মাঝামাঝি থেকে আবারও বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছেন বন্যা ও আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা। সূত্রমতে বিশেষ করে কুড়িগ্রামের চিলমারী, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সিরাজগঞ্জের সদর, কাজিপুর, জামালপুরের বাহাদুরাবাদ, টাঙ্গাইলের এলাসিন ও মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টের পানি ১৬ আগস্টের পর বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে।

এদিকে আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে হতে চলতি মাসের মাঝামাঝি একেবারে স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। তবে মাসের শেষ দিকে আবারও মৌসুমি বায়ুর কারণে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। ভারি বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের কর্মকর্তারা জানান, মধ্য আগস্ট থেকে আবার পানি বাড়তে পারে। ফলে মাসের শেষে আবার একটি স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদন অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যাকবলিত এলাকায় মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই।

বগুড়া : সারিয়াকান্দি পৌর এলাকায় জলাবদ্ধতার ফলে দুর্ভোগের শেষ নেই। পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে শ্যালো মেশিন দিয়ে পানি নিষ্কাশন করেও জলাবদ্ধতা দূর করা সম্ভব হচ্ছে না। জলাবদ্ধতার ফলে কয়েক হাজার মানুষ দুর্ভোগে রয়েছে। সারিয়াকান্দি পৌরসভার জলাবদ্ধ এলাকাগুলো হলো হিন্দুকান্দি পুলিশ লাইনস রাস্তার পশ্চিম পূর্বপাশ, কুঠিবাড়ী শাহাপাড়া, দক্ষিণ হিন্দুকান্দি, বাড়ইপাড়া। সারিয়াকান্দি পৌর মেয়র আলমগীর শাহী সুমন জানান, উপজেলা পরিষদ, সারিয়াকান্দি ডিগ্রি কলেজের পেছন, হাসপাতাল কোয়ার্টার, শালুখা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হিন্দুকান্দি ঈদগাহ মাঠ যমুনা ও বাংগালি নদীর পানির স্তরের নিচে থাকায় ড্রেনেজব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশন সম্ভব হচ্ছে না।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে বন্যার পানি নেমে গেছে প্রায় পাঁচ দিন হলো। কিন্তু বানভাসিদের কষ্ট কমেনি। অধিকাংশ বানভাসি এরই মধ্যে উঁচু বাঁধ, স্কুল/কলেজসহ বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফেরা শুরু করেছে। কিছু বানভাসির বাড়িঘর দীর্ঘ সময় পানিতে নিমজ্জিত থাকায় ঘরের বেড়া ও দরজা-জানালা নষ্ট হয়ে গেছে। ঘরবাড়ি মেরামত করে সেখানে উঠতে হবে। কিন্তু অনেকের হাতে টাকাপয়সা না থাকায় তা মেরামত করা সম্ভব হচ্ছে না। জেলা প্রশাসনের ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিসসূত্র জানান, তিন দফা বন্যায় জেলার নয় উপজেলার ৬২ হাজার ৮০০ পরিবারের ঘরবাড়ি ও অন্যান্য সরঞ্জাম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিশেষ করে নদীতীরে বসবাসরত উঁচু বাঁধে থাকা ঘরবাড়ি ভেঙে যাওয়া পরিবারসহ চরাঞ্চলের বানভাসিদের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। লালমনিরহাট : উজানের ঢল ও অতিবৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় উত্তরাঞ্চলের লালমনিরহাট জেলার তিস্তা-ধরলা নদীবেষ্টিত ৬৩ চরের কৃষকের স্বপ্ন ভাসছে পানিতে। নেই ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ। সব মিলে হতাশায় রয়েছেন পাঁচ উপজেলার লাখো কৃষক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যায় কৃষিতে ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে ৪৭৪ হেক্টর। এর মধ্যে আমন বীজতলা ১১৩, আউশ ৫১, মরিচসহ অন্যান্য ফসল ৩১০ হেক্টর। প্রায় ৩ কোটি টাকার ফসল নষ্ট হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ।

নওগাঁ : বড় বড় ঢেউয়ের আঘাতে প্রতিদিনই ভাঙছে নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী হাঁসাইগাড়ী বিলের নান্দনিক আস্তান মোল্লা সড়ক। সড়কটি বন্যার পানির ঢেউয়ের আঘাতে প্রতি বছরই ভাঙনের শিকার হয়ে আসছে। এ বছরের বন্যায় এরই মধ্যে সড়কের একাংশ ভেঙে বিলে বিলীন হয়ে গেছে। বাকি অংশে স্থানীয়রা নিজস্ব উদ্যোগে বাঁশের খুঁটি ও কচুরিপানা দিয়ে সড়কটি রক্ষার চেষ্টা করছেন।

সর্বশেষ খবর