বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

বন্যার পানি নামছে অনেক এলাকায়, সংকট বিশুদ্ধ পানির

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভাঙনে দিশাহারা মানুষ

টাঙ্গাইলে নদী ভাঙন থামছেই না। ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন বাসিন্দারা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

মাসব্যাপী বন্যার পর নদ-নদীর পানি কমতে শুরু করলে কমেনি মানুষের দুর্ভোগ। উল্টো পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে  বেড়েছে নদীভাঙনের তীব্রতা। দিশাহারা হয়ে পড়েছে নদী পাড়ের মানুষ। রাতারাতি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বাড়িঘর, ভিটেমাটি, আবাদি জমি। অনেক এলাকায় ভাঙনের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, মানুষ বাড়িঘর, মালামাল সরানোর সময়টুকু পাচ্ছে না। এদিকে বন্যা দুর্গত এলাকার নলকূপগুলো এখনো ব্যবহারের উপযোগী না হওয়ায় বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বন্যার দূষিত পানির সঙ্গে দীর্ঘদিন বসবাসের কারণে চর্মরোগ দেখা দিয়েছে ঘরে ঘরে। সেই সঙ্গে আমাশয়, পাতলা পায়খানার মতো পানিবাহিত রোগে ভুগছেন বন্যা দুর্গত এলাকার অসংখ্য মানুষ। টানা কয়েকদিন নদ-নদীর পানি কমতে থাকায় দেশের অধিকাংশ স্থানে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। দুই দিন আগেও আটটি নদ-নদীর পানি ১১টি স্টেশনে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। গতকাল ছয়টি নদীর পানি সাতটি স্টেশনে বিপৎসীমার ওপরে ছিল। বন্যা আক্রান্ত জেলার সংখ্যা চারটিতে নেমে এসেছে। কিন্তু, বন্যা পরিস্থিতির উন্নতির মধ্যেই আবার বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। এতে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে দুর্গত এলাকার মানুষের মধ্যে। গতকাল সকালেও ১০১টি পর্যবেক্ষণাধীন পানি সমতল স্টেশনের ২৭টিতে পানি বৃদ্ধি পায়। বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের গতকাল সকালের তথ্যমতে, যমুনা নদীর পানি কমতে শুরু করলেও ফের বাড়তে শুরু করেছে ব্রহ্মপুত্রের পানি যা ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মার পানি কমছে। কুশিয়ারা ছাড়া আপার মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদীগুলোর পানিও কমছে। এতে আজকের মধ্যে মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, নাটোর, ফরিদপুর ও ঢাকা সিটি করপোরেশন সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে নদীতে বেড়েছে স্রোত। সেই সঙ্গে বেড়েছে ভাঙন। অনেক স্থানে নদী শাসনের সিসি ব্লক সরে গিয়ে ভাঙন শুরু হয়েছে। কোথাও বন্যায় ভেঙে গেছে শহররক্ষা বাঁধ। আবার কোথাও ভাঙন রোধে দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয়রা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসলেও তা হয়নি। ফলে সর্বগ্রাসী নদীভাঙন গিলে খাচ্ছে মানুষের সর্বস্ব। অনেকে রাতারাতি আমির থেকে হচ্ছেন পথের ফকির।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য-  টাঙ্গাইল : এ জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া বিভিন্ন নদ-নদীর পানি কমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই যমুনা ও ধলেশ্বরী নদীতে শুরু হয়েছে ব্যাপক ভাঙন। বন্যা শেষ হতে না হতেই এমন ভাঙনে দিশাহারা হয়ে পড়ছে নদীপাড়ের মানুষ। ভাঙনের তীব্রতা এতটা বেশি যে দুর্গতরা তাদের বাড়ি-ঘর সরানোর সময়টুকু পাচ্ছেন না। ভাঙনে এরই মধ্যে সদর উপজেলার কাকুয়া, হুগড়া, মাহমুদ নগর ও কাতুলী ইউনিয়েনর বিস্তীর্ণ এলাকা নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন কবলিতরা বলছেন, কিছু বুঝে ওঠার আগেই নদীর পেটে চলে যাচ্ছে ঘরবাড়ি। গত এক মাসে দুই শতাধিক বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এতে সর্বস্বান্ত হয়েছে নদী পাড়ের অসংখ্য মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, এমন বিপদে থাকলেও কোনো জনপ্রতিনিধি, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান তাদের খোঁজ নেয়নি। ভাঙন রোধেও কোনো ব্যবস্থাও করা হয়নি। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের তাৎক্ষণিক সাহায্য করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে যাদের বাড়ি করার জায়গা নেই তাদের বাড়ি করার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জেলা পানি উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণ করেছি। বাঁধ হলে আর ভাঙবে না।

যশোর : যশোরের শার্শা উপজেলার দক্ষিণাঞ্চল ভারতীয় ইছামতী নদীর উজানের পানিতে তলিয়ে গেছে। আউশ আমনসহ সবজি পানির নিচে ডুবে রয়েছে। অনেকের বাড়িতে পানি উঠতে শুরু করেছে। স্থানীয়রা জানান, গত কদিন ধরে ভারতের ইছামতী নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি রুদ্রপুর খাল দিয়ে প্রবেশ করে শার্শার দক্ষিণাঞ্চলের মাঠঘাট ভাসিয়ে দিয়েছে। এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। দক্ষিণের কায়বা, গোগা, বাগআঁচড়া, উলশী ও পুটখালী ইউনিয়নের বিল অঞ্চল তলিয়ে নষ্ট হয়েছে জমির ফসল। রুদ্রপুর গ্রামের মনির হোসেন জানান, প্রতিদিন আধা ফুট করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বিলে। ইছামতীর পানি খাল দিয়ে ঢুকে পড়ছে শার্শায়। খালমুখে সুইজ গেট থাকলেও তা ত্রুটিপূর্ণ। পানি আটকানোর ক্ষমতা নেই। কায়বা ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আনিছুর রহমান জানান, কায়বার ঠেঙামারী, আওয়ালী, গোমর, পান্তাপাড়া, ডেয়ো ও মহিষা বিলের আশপাশের প্রায় ৪০০ হেক্টর জমি এ বছর পানিতে তলিয়ে গেছে।

রংপুর : জেলার গঙ্গাচড়ায় তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত শেখ হাসিনা সংযোগ সড়কে ভাঙন দেখা দিয়েছে। উপজেলার শঙ্করদহ এলাকায় একটি বাঁধ ভেঙে যাওয়ার কারণে বর্তমানে তিস্তার আরও দুটি চ্যানেল বের হয়েছে। সাত কিলোমিটার একটি বেড়ি বাঁধ না থাকায় ভাঙনে লোকজন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে। ভাঙন রোধে বেড়ি বাঁধ নির্মাণের দাবিতে স্থানীয় লোকজন গতকাল দুপুরে মহিপুর-কাকিনা সড়কে মানববন্ধন করেছে। এ সময় বক্তারা বলেন, গত ৩ বছরে শঙ্করদহ, পূর্ব ইচলি, পশ্চিম ইচলি, বাগের হাট, বিনবিনাসহ বিভিন্ন এলাকায় শত শত পরিবার, আবাদি জমি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসা তিস্তায় বিলীন হয়েছে। সীমাহীন দুর্ভোগের শিকার হাজার হাজার মানুষ। এর মধ্যে গতকাল পানির তোড়ে এসকেএস বাজারের কাছে মহিপুর-কাকিনা সড়কের ব্রিজসংলগ্ন ২০ মিটার এলাকাজুড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে ব্রিজের ব্লক পিচিং ধসে গেছে। এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন যে কোনো সময় ২০১৮ সালের ন্যায় মহিপুর-কাকিনা সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর