বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

ঢাকায় জরিপে ৯ শতাংশ মানুষের করোনা

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ২৯৯৬ মৃত্যু ৩৩, বন্ধ হলো স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিং

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকার সোয়া তিন হাজার পরিবারের ১২ হাজার মানুষের ওপর জরিপ চালিয়ে ৯ শতাংশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) এবং আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর,বি)। ইউএসএআইডি এবং বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের সহযোগিতায় গত ১৮ এপ্রিল থেকে ৫ জুলাই এ খানা জরিপ চালানো হয়। স্থানীয় পর্যায়ে কভিড-১৯ কতটা বিস্তার লাভ করেছে, তা জানতে এই জরিপ চালানো হয়। গত সোমবার জরিপের সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে আইইডিসিআর। তবে বস্তিবাসীর মধ্যে এই সংক্রমণের হার ৬ শতাংশ। আইইডিসিআর জানিয়েছে, যাদের মধ্যে উপসর্গ ছিল, তাদের ৩০ শতাংশ; ‘উপসর্গযুক্ত’ পরিবারের যে উপসর্গহীন ব্যক্তিদের পরীক্ষা করা হয়েছে, তাদের ১৪ শতাংশ এবং ‘উপসর্গহীন’ পরিবারের উপসর্গহীন ব্যক্তিদের ৮ শতাংশের আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে ঢাকায় এ জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৯ শতাংশের মধ্যে কভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানানো হয়েছে সমীক্ষার ফলাফলে। সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, উপসর্গযুক্ত ব্যক্তিদের ৫৩ শতাংশের মধ্যে জ্বর, ৩৬ শতাংশের মধ্যে সর্দি-কাশি, ১৭ শতাংশের মধ্যে গলাব্যথা এবং ৫ শতাংশের মধ্যে শ্বাসকষ্টের লক্ষ্মণ দেখা গেছে পরীক্ষার দিন। পরীক্ষায় যাদের করোনাভাইরাস পজিটিভ এসেছে, তাদের ১৩ শতাংশের বয়স ৪০ বছরের বেশি; ১২ শতাংশের বয়স ১৫ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে এবং ৮ শতাংশের বয়স ১০ বছরের কম। যাদের সংক্রমণ ধরা পড়েছে, তাদের মধ্যে ১৫ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। এক মাসের ফলোআপে তাদের মধ্যে কেবল একজনের মৃত্যুর তথ্য এসেছে। পুরো জরিপে যেখানে ৯ শতাংশের মধ্যে কভিড-১৯ ধরা পড়েছে, সেখানে বস্তিবাসীর মধ্যে সংক্রমণের হার ৬ শতাংশ বলে জানানো হয়েছে জরিপের ফলাফলে। আইইডিসিআর জানিয়েছে, এই জরিপের আওতায় আনা পরিবারগুলোর প্রাথমিক স্ক্রিনিংয়ের ভিত্তিতে উপসর্গযুক্ত এবং উপসর্গহীন- এই দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। জরিপের দিন বা আগের সাত দিনের মধ্যে কোনো পরিবারের কোনো সদস্যের মধ্যে যদি কভিড-১৯ এর চারটি উপসর্গের অন্তত একটি দেখা গিয়ে থাকে, তাহলে সেই পরিবারকে ‘উপসর্গযুক্ত’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। যেসব পরিবারে কারও মধ্যে ওই সময়ে কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি, তাদের রাখা হয়েছে ‘উপসর্গহীন’ ক্যাটাগরিতে।

দুই সিটি করপোরেশনের মোট ৩ হাজার ২৭৭ পরিবারের ওপর এ জরিপ চালানো হয়। এসব পরিবারের মোট ২১১ জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে ১৯৯ জনের নমুনা নিয়ে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়। আর ‘উপসর্গযুক্ত’ পরিবারগুলোর ৪৩৫ জন উপসর্গহীন ব্যক্তিকে এ জরিপের জন্য বেছে নেওয়া হয়। তাদের মধ্যে ২০১ জনের আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয়েছে। ‘উপসর্গহীন’ পরিবারগুলো থেকে জরিপে বেছে নেওয়া হয় ৮২৭ জন উপসর্গহীন ব্যক্তিকে। তাদের মধ্যে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করা হয় ৫৩৮ জনের। এর বাইরে ঢাকার ছয়টি বস্তি এলাকার ৭২০টি পরিবারকে এই জরিপের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। জরিপে থাকা পরিবারগুলোর মধ্যে ৫ শতাংশ ছিল ‘উপসর্গযুক্ত; অর্থাৎ এসব পরিবারের কারও না কারও মধ্যে উপসর্গ ছিল। আর জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মোট সংখ্যার ২ শতাংশের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ ছিল।

বন্ধ হলো কভিড-১৯ নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিং : করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আজ থেকে আর অনলাইনে ব্রিফিং করবে না স্বাস্থ্য অধিদফতর। গতকাল শেষবারের মতো নিয়মিত ব্রিফিংয়ে যুক্ত হয়ে অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা এ কথা জানান। সেইসঙ্গে জানান, দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে দুই হাজার ৯৯৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এই সময়ে মারা গেছেন আরও ৩৩ জন। এ নিয়ে দেশে শনাক্ত করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৬৩ হাজার ৫০৩ জনে। আর সরকারি হিসাবে মোট মারা গেছেন তিন হাজার ৪৭১ জন। তবে অনলাইন ব্রিফিং বন্ধ হলেও সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে করোনা সংক্রমণ তথ্য প্রকাশ করা হবে বলে জানান অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। এদিকে নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোয় গত দুই দিনই দেশে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা দুই হাজার ৯০০ ছাড়িয়েছে। ব্রিফিংয়ের তথ্যানুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৮২০টি নমুনা পরীক্ষায় করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে দুই হাজার ৯৯৬ জনের শরীরে। শনাক্তের হার ২০ দশমিক ২২ শতাংশ, যা দেশে প্রথম করোনা রোগী পাওয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত গড় শনাক্ত হারের (২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ) চেয়ে কম। আগের দিন ১২ হাজার ৮৪৯টি নমুনা পরীক্ষায় রোগী শনাক্ত হয় দুই হাজার ৯০৭ জন। শনাক্তের হার ছিল ২২ দশমিক ৬২ শতাংশ। তার আগের দিন ১০ হাজার ৭৫৯টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয় দুই হাজার ৪৮৭ জন করোনা রোগী। শনাক্তের হার ২৩ শতাংশ। নমুনা পরীক্ষা বাড়ালেই বাড়ছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা, তবে কমছে শনাক্তের হার। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা সংক্রমণে মৃত মানুষের তালিকায় যোগ হয় আরও ৩৩ জনের নাম। মৃতের সংখ্যায় বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে ২৯তম। অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন তাদের ২৮ জন পুরুষ এবং পাঁচজন নারী। ৩০ জন হাসপাতালে এবং তিনজন বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ষাটোর্ধ্ব ২০ জন, ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে পাঁচজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে পাঁচজন ও ১১ থেকে ২০ বছরের মধ্যে একজন ছিল। ১৫ জন ঢাকা বিভাগের, পাঁচজন রাজশাহী বিভাগের, পাঁচজন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন খুলনা বিভাগের, একজন ময়মনসিংহ বিভাগের এবং চারজন রংপুর বিভাগের ছিলেন।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, গত এক দিনে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও এক হাজার ৫৩৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫১ হাজার ৯৭২ জনে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ আর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও তথ্য-

দিনাজপুর : গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় সদরের কসবা পুলহাটের মোকাররম হোসেন নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে চিরিরবন্দরের আলোকডিহি ইউপি চেয়ারম্যান মোছা. মাহমুদা ইসলাম শেফালীসহ ৪২ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে জেলায় মোট শনাক্ত দুই হাজার ১৮৪ জন, মোট মারা গেছেন ৪৩ জন।  গাজীপুর : ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় গাজীপুরে মোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চার হাজার ৪০২ জনে। এ পর্যন্ত জেলায় সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৯৪৮ জন। মারা গেছেন ৫৭ জন। বাগেরহাট : ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভির রহমানসহ দুজনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। এ নিয়ে বাগেরহাট জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭২৩ জনের। মারা গেছেন ১৮ জন। সুস্থ হয়েছেন ৫৫০ জন। শুধু ফকিরহাট উপজেলাতেই করোনা শনাক্ত হয়েছে ১৬৭ জনের, মারা গেছেন ১০ জন।

কুমিল্লা : এক দিনে নতুন করে ৪৫ জনের করোনা শনাক্ত হওয়ায় কুমিল্লা জেলায় শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৯৮৩ জনে। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৪৭৮ জন। মোট মারা গেছেন ১৫১ জন।

 

সর্বশেষ খবর