বুধবার, ১২ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

বিস্ফোরণ ইস্যুতে সরকার পতন লেবাননে

প্রতিদিন ডেস্ক

বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছাড়ল লেবানন সরকার। প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব সোমবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া টেলিভিশন ভাষণে তার সরকারের পদত্যাগ ঘোষণা করেন। টেলিভিশনে ভাষণে দিয়াব বলেন, রাজধানীর বন্দর এলাকার গুদামে গত সাত বছর ধরে পড়ে থাকা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিস্ফোরকের বিস্ফোরণ ‘সর্বত্র দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়ারই ফল’। বৈরুতের বন্দর এলাকায় বিস্ফোরকের ওই গুদামে গত ৪ আগস্ট ভয়াবহ বিস্ফোরণে বহু মানুষ হতাহত হয়।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বিস্ফোরণে ১৬৩ জন নিহত এবং ছয় হাজারের বেশি মানুষ আহত হওয়ার খবর জানানো হয়েছে। বিবিসির হিসাব মতে, সোমবার নিহতের সংখ্যা বেড়ে ২২০ হয়েছে। এখনো আরও ১১০ জন নিখোঁজ রয়েছে। এ পর্যন্ত পাঁচ বাংলাদেশির মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত কয়েক দিন ধরে লেবাননে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ তীব্র হয়। প্রধানমন্ত্রী দিয়াব বলেন, ‘আজ আমরা জনগণের ইচ্ছাকে?অনুসরণ করছি। জনগণ সাত বছর ধরে লুকিয়ে রাখা এই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচার চায়। তারা সত্যিকারের পরির্তন চায়। এই বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে....আমি আজ এই সরকারের পদত্যাগ ঘোষণা করছি।’ বৈরুতের বিস্ফোরণের পর দিয়াব সরকারের মন্ত্রীরা একে একে পদত্যাগ করতে থাকায় লেবাননের মন্ত্রিসভা চাপে পড়ে গিয়েছিল। রবিবার তথ্য ও পরিবেশমন্ত্রীসহ কয়েকজন আইনপ্রণেতার পদত্যাগের পর সোমবার পদত্যাগ করেছিলেন আইনমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের প্রস্তুতির খবরও শোনা যাচ্ছিল। তার মধ্যেই সরকারের ক্ষমতা ছাড়ার ঘোষণা এলো। এ ঘোষণার পর প্রেসিডেন্ট মিশেল আউন নতুন একটি মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত দিয়াব সরকারকে ‘তত্ত্বাবধায়ক’ হিসেবে থাকার অনুরোধ করেছেন বলে জানিয়েছে বিবিসি। জানুয়ারিতে ইরান সমর্থিত প্রভাবশালী হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী ও এর মিত্রদের সমর্থন নিয়ে লেবাননের মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল। তখন কয়েক মাসের অচলাবস্থার পর হাসান দিয়াব প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন।

সোমবারের ঘোষণায় দিয়াব বলেন, তার সরকার দেশকে বাঁচাতে একটি ‘রোডম্যাপ তৈরির আপ্রাণ চেষ্টা করেছে।’ কিন্তু লেবাননে দুর্নীতি সব কিছুকেই ছাপিয়ে গেছে। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী দিয়াব বিস্ফোরণের ঘটনায় দায়ীদের বিচার করার লেবাননিদের দাবিকেও সমর্থন জানিয়েছেন। সাধারণ লেবাননিদের অনেকেই দেশে দীর্ঘদিন ধরে ধসে পড়া অর্থনীতি, দুর্নীতি, অকার্যকর শাসনব্যবস্থার যে সংকট চলে আসছে তারই সর্বশেষ পরিণতি হিসেবে দেখছেন বিস্ফোরণের ঘটনাটিকে। তাই গোটা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের দাবিতে পথে নেমেছেন তারা। সোমবারও রাস্তায় রাস্তায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের সংঘর্ষও হয়েছে। বৈরুতের এক বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেছেন, ‘গোটা শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন হওয়া দরকার। নতুন সরকার গঠন হলেও কোনো তফাৎ হবে না। আমাদের দ্রুত নির্বাচন দরকার।’

সর্বশেষ খবর