করোনায় বিধ্বস্ত নিউইয়র্ক সিটির প্রবাসীরা ধীরে ধীরে জেগে উঠছেন। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরার অহর্নিশ প্রয়াসের অংশ হিসেবে রবিবার ৯ আগস্ট বিবাহোত্তর প্রীতিভোজ অনুষ্ঠিত হলো। মধ্য মার্চে সব কিছু লকডাউনে যাওয়ার পর সম্ভবত এই প্রথম ঘটা করে প্রবাসীরা একটি চমৎকার পার্টিতে মিলিত হলেন। শিশুরাও ছিল উৎফুল্ল। তবে মাস্কের যন্ত্রণায় স্বাভাবিক হতে পারেননি অনেকেই। নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে ‘ইটসজি’ নামক নতুন একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টের ব্যাকইয়ার্ডে খোলা জায়গায় চেয়ার-টেবিল বসিয়ে সিলেট ও চাঁদপুরের প্রবাসীরা জড়ো হন নূরে জান্নাত সায়মা ও মিনহাজ মিতুলের বিবাহোত্তর প্রীতিভোজে। টানা পাঁচ মাস পর সবাই নতুন পোশাকে উচ্ছল এক আমেজ তৈরি করেছিলেন। প্রিয়-পরিচিতজনরা পুনরায় একত্র হতে পেরে বিষণœতার ছাপ দূরে সরিয়ে রাখতেও ছিলেন সচেষ্ট। তবে আলোচনার কেন্দ্রে ছিল কুশলাদি বিনিময়। করোনায় যারা মারা গেছেন তাদের জন্যও গভীর শোক উচ্চারিত হয় আনন্দঘন এ আয়োজনে। উল্লেখ্য, জুন-জুলাইয়ে ডজনখানেক বিয়ের কর্মসূচি ছিল। সংশ্লিষ্টরা বিলাসবহুল হোটেলের বলরুম ভাড়াও করেছিলেন। কেউ কেউ দাওয়াতপত্র আগেই বিতরণ করেন। কিন্তু সবকিছু প- হয়ে গেছে করোনাভীতিতে। এমনকি হলরুম বুকিংয়ের জন্য আগাম যে অর্থ দেওয়া হয়েছিল সেগুলোও ফেরত পাননি কেউ। হোটেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, ভবিষ্যতে সময় ভালো হলে অন্য কোনো অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সে অর্থের সমন্বয় ঘটানো হবে। নিউইয়র্ক অঞ্চলে করোনার সংক্রমণ আশাব্যঞ্জকভাবে কমায় ঝুলে থাকা বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো সেপ্টেম্বরের মধ্যেই সম্পন্ন করার কথা ভাবছেন অভিভাবকরা। প্রসঙ্গত, নিউইয়র্ক আপস্টেটে বিবাহোত্তর প্রীতিভোজে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে দুই পক্ষের ১০০ জন করে অতিথির অনুমোদনের জন্য স্টেট গভর্নরের প্রতি আহ্বান জানিয়ে একটি মামলা হয়েছিল নিউইয়র্ক ফেডারেল কোর্টে। এ মামলার রায়ে নর্দার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের জজ গ্লেন সুডাব্বি শুক্রবার রায়ে ৫০ জন করে মোট ১০০ জনের অনুমতি দিয়েছেন। সে সময় বলা হয়, নিউইয়র্ক সিটির বাইরের যে কোনো রেস্টুরেন্টে অথবা অডিটরিয়ামে ৬ ফুট অন্তর অবস্থানের শর্তে অনুষ্ঠানের অনুমতি থাকলে গলফ ক্লাবে বিবাহোত্তর সংবর্ধনায় কেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো যাবে না? ফেডারেল কোর্টের এ রায়ের পরিপূরক অতিথির সমাগম ঘটেছিল সায়মা আর মিতুলের বিয়ে-পার্টিতে।
সায়মা-মিতুলের বিয়ের অনুষ্ঠানে আগতরা পরম করুণাময়ের কাছে শোকরানা আদায় করেছেন করোনা মহামারীর ছোবল থেকে মুক্ত রাখার জন্য। পাশাপাশি নতুন এ পরিবেশে সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে পরস্পরের সহযোগিতায় আমেরিকান স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার সংকল্পও ব্যক্ত করেন। আর এভাবেই স্থবিরতাকে দূরে ঠেলে নব উদ্যমে জেগে ওঠার পথে রয়েছেন নিউইয়র্ক অঞ্চলের প্রবাসীরা। প্রসঙ্গত, নিউইয়র্ক সিটিতে করোনায় মৃত্যুবরণকারী ২৩ হাজার ৫৮০ জনের মধ্যে আড়াই শতাধিকের মতো বাংলাদেশিও রয়েছেন। আক্রান্ত ২ লাখ ৩৩ হাজারের মধ্যে পাঁচ সহস্রাধিক প্রবাসী ছিলেন।