বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

কমছে শনাক্তের হার, বাড়ছে সুস্থতা

দেশে ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ২৯৯৫, মৃত্যু ৪২, ভ্যাকসিন কেনার সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে

নিজস্ব প্রতিবেদক

কমছে শনাক্তের হার, বাড়ছে সুস্থতা

নমুনা পরীক্ষার ভিত্তিতে দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী শনাক্তের হার কমতে শুরু করেছে। গত দুই দিনই শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৫০ শতাংশের নিচে। গত দুই মাস ধরেই দৈনিক নমুনা পরীক্ষায় করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছিল ২১ থেকে ২৫ শতাংশ। ৫৬তবে সংক্রমণ হার কমতে শুরু করলেও সেটা হচ্ছে খুবই ধীর গতিতে। এখনো সংক্রমণ হারে বিশ্বের শীর্ষ করোনা আক্রান্ত ২০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান পঞ্চম। এদিকে শনাক্ত বিবেচনায় দেশে সুস্থতার হার বাড়ছে দ্রুতগতিতে। এক মাস আগে গত ১২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, সুস্থতার হার ৫০ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আর ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ হার ২৪ দশমিক ১১ শতাংশ। গতকাল সুস্থতার হার বেড়ে হয় ৫৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। আর ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের হার ছিল ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ। অন্যদিকে শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুর হার বাড়ছে।

গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে আরও ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনা সংক্রমণে। এতে দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর পাঁচ মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৫১৩ জন। আর ২৪ ঘণ্টায় ১৪ হাজার ৭৫১টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ২ হাজার ৯৯৫ জনের দেহে। এ নিয়ে দেশে করোনা রোগী শনাক্ত হলো ২ লাখ ৬৬ হাজার ৪৯৮ জন। আইইডিসিআরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ১১৭ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৮৯ জন। বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ, এ পর্যন্ত গড় শনাক্তের হার ২০ দশমিক ৪৬ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৫৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৩২ শতাংশ।

স্বাস্থ্য অধিদফতরের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত এক দিনে যারা মারা গেছেন তাদের ৩৩ জন পুরুষ এবং ৯ জন নারী। ৩৯ জন হাসপাতালে এবং তিনজন বাড়িতে মারা গেছেন। তাদের মধ্যে ২৪ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। ১১ জনের বয়স ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে, চারজনের বয়স ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে, দুজনের বয়স ৩১ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে, একজনের বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে ছিল। ৪২ জনের মধ্যে ২৭ জন ঢাকা বিভাগের, তিনজন চট্টগ্রাম বিভাগের, তিনজন খুলনা বিভাগের, একজন বরিশাল বিভাগের, চারজন সিলেট বিভাগের, দুজন রংপুর বিভাগের এবং দুজন ময়মনসিংহ বিভাগের ছিলেন। দেশে এ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে ২ হাজার ৭৮২ জন পুরুষ এবং ৭৩১ জন নারী।

বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে গত ৮ মার্চ। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিনের মাথায় ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয় বুলেটিনে, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো আরও খবর- গাজীপুর : ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ২৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৪ হাজার ৪২৫ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৯৫২ জন। মারা গেছেন ৫৭ জন।

শরীয়তপুর : ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৩০০ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ২৩ জন। মারা গেছেন ১২ জন।

শেরপুর : কদিন আগেই করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন শেরপুরের পুলিশ সুপার কাজী আশরাফুল আজীম। গতকালের তথ্যানুযায়ী, পুলিশ সুপারের স্ত্রী, পুত্র, শেরপুর জেলা জজের পেশকার ও শেরপুর সদর উপজেলার একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাসহ নতুন করে আরও ১৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৩৫৪ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ৩০৩ জন। মারা গেছেন ছয়জন।

দিনাজপুর : ২৪ ঘণ্টায় ১৭১ জনের নমুনার ফলাফলে নার্সসহ ৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২৩৭ জন। মোট সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৫৩৩ জন। মারা গেছেন ৪৩ জন।

কুমিল্লা : ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৭৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৬ হাজার ৫৮ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৪ হাজার ৫৯৯ জন। মারা গেছেন ১৫৩ জন। কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় একজন ও উপসর্গ নিয়ে চারজন মারা গেছেন।

বাগেরহাট : ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে চারজনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্ত মোট রোগীর সংখ্যা ৭২৭ জন। এ পর্যন্ত সুস্থ হয়েছেন ৫৭০ জন। মারা গেছেন ১৮ জন। নাটোর : সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলামের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। সিভিল সার্জন কাজী মিজানুর রহমান বলেন, নাটোরে এ পর্যন্ত ৬২৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৭৬ জন সুস্থ হয়েছেন।

করোনা ভ্যাকসিন কেনার সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে : করোনাভাইরাস নিয়ে তটস্থ সারা বিশ্ব। এরই মধ্যে এর ভ্যাকসিন পাওয়ার দৌড়ে বিভিন্ন দেশ এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশের ভ্যাকসিন কেনার বিষয়ে আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।

গতকাল অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক এ কথা জানান। অনলাইনে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকের শেষ দিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আগামী সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী সঙ্গে আমাদের মিটিং সেট করা হয়েছে। সেই মিটিংয়ে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, চীনকে বাংলাদেশে তাদের ভ্যাকসিন ট্রায়াল করতে দেওয়া হবে কি না। এ বিষয়ে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে চীন বাংলাদেশে কত মানুষের ওপর ট্রায়াল করবে, এক্ষেত্রে চীন আমাদের কত টাকা দেবে, ট্রায়াল হলে চীন কি শর্তে ভ্যাকসিন দেবে- সেসব নিয়ে সিদ্ধান্তের পর চীনকে ট্রায়াল করতে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় যে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করছে তা বিভিন্ন দেশে সরবরাহ করার জন্য তারা চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে এবং অ্যাডভান্স নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের মডার্নাসহ অন্য ভ্যাকসিন উদ্ভাবক কোম্পানিগুলোর সঙ্গেও বিভিন্ন দেশ চুক্তি করছে এবং অ্যাডভান্স দিচ্ছে। যারা আগে থেকে অ্যাডভান্স করে রাখছে, তাদের আগে টিকা সরবরাহ করবে কোম্পানিগুলো। আমরাও এসব কোম্পানির সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। কোম্পানিগুলোর সঙ্গে চুক্তি করা কিংবা অ্যাডভান্স দেওয়ার বিষয়েও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠেয় বৈঠকে সিদ্ধান্ত হবে।  স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা টিকা উদ্ভাবক কোম্পানিগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। সংস্থাটির লক্ষ্য হলো শুরুতে বিভিন্ন দেশের ৩ শতাংশ মানুষকে টিকা সরবরাহ করা এবং আগামী মার্চে তারা ২০ শতাংশ মানুষের জন্য টিকা সরবরাহের উদ্দেশ্যে কাজ করছে।

বৈঠকে অর্থমন্ত্রী বলেন, টিকা সংগ্রহের জন্য একটি সোর্সের ওপর নির্ভর করলে এটা পাওয়া কঠিন হবে। সে জন্য যদি একাধিক সোর্স থেকে এ ভ্যাকসিন আমরা সংগ্রহ করতে পারি। আমি এরই মধ্যে দেখেছি যেসব দেশ ভ্যাকসিন তৈরি করবে তাদের সঙ্গে অনেক দেশ চুক্তিবদ্ধ হয়েছে, অগ্রিম টাকাও দিয়েছে। আমাদেরও এ ধরনের ব্যবস্থায় যেতে হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর