বৃহস্পতিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা

কালোবাজারিবিরোধী অভিযানে নামছে কাস্টমস বন্ড

১৭ টাস্কফোর্স গঠন, টার্গেট রাজস্ব ফাঁকির ৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা উদ্ধার

রুহুল আমিন রাসেল

এবার কালোবাজারিবিরোধী বিশেষ অভিযানে নামছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। সংস্থাটি এই অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে ১৭টি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। এর সঙ্গে বন্ডের অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ৪১৭টি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে রাজস্ব ফাঁকির ৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকা উদ্ধারে ওই টাস্কফোর্সসমূহ বিশেষ তৎপরতা চালাবে। এ তথ্য দিয়েছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্র। এ প্রসঙ্গে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার শওকত হোসেন বলেন, ‘বন্ড কমিশনারেটকে একটি কার্যকর ও গতিশীল প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরের উদ্যোগ নিচ্ছি। বন্ডে অনিয়ম ও কালোবাজারির বিরুদ্ধে অভিযান এবং রাজস্ব ফাঁকির বকেয়া অর্থ উদ্ধারের জোর তৎপরতা চালানো হবে। এর মাধ্যমে সরকারের চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের রাজস্ব আয়ের টার্গেট পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব।’ এ লক্ষ্যে কর্মকৌশল গ্রহণের কথাও জানান এই অভিজ্ঞ কাস্টমস কর্মকর্তা। ঢাকা কাস্টমস বন্ড  কমিশনারেট সূত্র জানায়, বন্ড চোরাচালানবিরোধী অভিযান ছাড়াও ওই কর্মকৌশলের মধ্যে রয়েছে বন্ড কমিশনারেটের লোকবল বাড়ানো এবং আইনি দুর্বলতা দূরীকরণ। কারণ অধিকাংশ অভিযানেই জনবল সংকটে ভোগে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। তথ্যমতে, সারা দেশে ঢাকা ও চট্টগ্রাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের অধীনে প্রায় ১০ হাজারের বেশি বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে শুল্কমুক্ত সুবিধায় পুনঃ রপ্তানির শর্তে পণ্য আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। তাদের মধ্যে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর চোরাচালানে জড়িত থাকার প্রমাণ বিভিন্ন সময় পেয়েছে কাস্টমস বন্ডসহ অন্যান্য সংস্থাসমূহ। যদিও সরকার রপ্তানিমুখী শিল্পের স্বার্থে পণ্য উৎপাদনে ব্যবহারের জন্য বন্ড সুবিধার নামে শুল্কমুক্ত কাঁচামাল আমদানির সুবিধা দিয়েছে, কিন্তু এ ক্ষেত্রে শর্ত হচ্ছে আমদানি করা কাঁচামালের সবটা ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মিথ্যা ঘোষণার মাধ্যমে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণে পণ্য এনে উৎপাদনে ব্যবহার না করে কালোবজারে বিক্রি করছেন। এভাবে অবৈধ ব্যবসা করে চোরাকারবারিতে জড়িত ব্যবসায়ীরা মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এতে সব নিয়মকানুন মেনে যেসব ব্যবসায়ী উৎপাদন করছেন, তারা অসম প্রতিযোগিতায় পথে বসছেন। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের বিভিন্ন সময়ের তদন্তে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান ও রাজস্ব ফাঁকির পরিমাণ চিহ্নিত করা হয়েছে। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট সূত্র জানায়, বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে ৪১৭টি প্রতিষ্ঠান ৬ হাজার ৩৪৫ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছে। এর মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠান ৩১২টি। ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের বিভিন্ন সময়ের তদন্তে রাজস্ব ফাঁকির বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। পাঁচ বছর ধরে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট থেকে বারবার তাগাদা দিলেও পাওনা রাজস্বের সামান্যই পরিশোধ করেছে কিছু প্রতিষ্ঠান। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার মামলা করে বছরের পর বছর আইনি মারপ্যাঁচে রাজস্ব আদায় প্রক্রিয়া স্থগিত করে রেখেছে। এসব মামলা কবে নিষ্পত্তি হবে তা নিয়েও রয়েছে অনিশ্চয়তা। এমন প্রেক্ষাপটে এবার চোরাচালানবিরোধী বিশেষ অভিযানে নামছে ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট। সম্প্রতি ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কমিশনার হিসেবে শওকত হোসেন দায়িত্ব গ্রহণের পর বকেয়া আদায়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কাজ শুরু করেছেন। এ লক্ষ্যে বন্ড দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা এবং বকেয়া আদায়ে ওই টাস্কফোর্সসমূহ বিশেষ পদক্ষেপ নেবে। আবার বকেয়া আদায়ের পাশাপাশি নিয়মিত রাজস্ব আদায়েও জোর দিয়েছেন কাস্টমসের এই কর্মকর্তা।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর