শুক্রবার, ১৪ আগস্ট, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সরকারের সহায়তার পরও সংকটে ব্রিটিশ কারি ইন্ডাস্ট্রি

আ স ম মাসুম, যুক্তরাজ্য

ব্রিটেনে অফিশিয়াল অর্থনৈতিক মন্দার ঘোষণা এসেছে ১১ আগস্ট। অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকস সংক্ষেপে ওএনএস তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, করোনা শুরুর পর এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে হসপিটালিটি সেক্টরে ব্রিটিশ অর্থনীতির জিডিপি সংকুচিত হয়েছে প্রায় ২০ দশমিক ৪ শতাংশ।  হসপিটালিটি সেক্টরকে উজ্জীবিত করতে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ হাতে নিয়েছে। দিয়েছে বিজনেস গ্রান্ট, ফারলো স্কিম, বাউন্স ব্যাক লোন, ছয় মাসের জন্য ভ্যাট ১৫ শতাংশ কমিয়ে ৫ শতাংশে আনা, সর্বশেষ ইট আউট হেল্প আউট স্কিমে সপ্তাহে তিন দিন কাস্টমারপ্রতি ১০ পাউন্ড ছাড় উল্লেখযোগ্য। এত কিছুর পরও রেস্টুরেন্টের মালিকদের সঙ্গে কথা বললে সেই একই দীর্ঘশ্বাস। এর আগের সংকট ছিল স্টাফ সংকটসহ নানামুখী আর এখন সব ছাপিয়ে মরণব্যাধি করোনার কারণে কাস্টমার সংকট। ব্রিটেনের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী ও ১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশি, ইন্ডিয়ান টেইকওয়ে ও রেস্টুরেন্টের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন বাংলাদেশ ক্যাটারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এ মুনিম বলেন, ‘সরকার যে চেষ্টা করছে সেটি অতুলনীয়। কিন্তু মূল জায়গা, মানে মানুষের মধ্যে এখনো যে ভয় কাজ করছে তা দূর না হলে রেস্টুরেন্ট সেক্টরে ভয়ঙ্কর ধস নামবে!’ কথা হয় গ্যাটউইক এয়ারপোর্টের পাশের ছোট শহর বাজেস হিলের মাসাল হাট রেস্টুরেন্টের মালিক আরাফাত জামানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রথম যখন লকডাউন হয় তখন আমরা প্রায় দিশাহারা অবস্থায় পড়ে যাই। তখন স্টাফ কমানো ছাড়া উপায় ছিল না। তারপর গ্রান্ট আর বাউন্স ব্যাক লোন নিয়ে কিছুটা সামাল দিয়েছি। টেইকওয়ে খোলা রেখে কোনোভাবে টিকে থেকেছি। লকডাউন তুলে দেওয়ার পর এখন অবস্থা আরও খারাপ। সরকারের ইট আউট স্কিমের কারণে সোম, মঙ্গল আর বুধবারে শুধু কিছুটা ব্যবসা হচ্ছে। আমাদের মূল যে ব্যবসা শুক্র ও শনিবারে, সেটি একেবারেই নেই। এভাবে কত দিন টিকে থাকতে পারব কে জানে।’ একই ধরনের অভিজ্ঞতার কথা বললেন লন্ডনের বাটারসি পার্কের ভারানাসি শেফ রেস্টুরেন্টের মালিক জুয়েল রাজ। তিনি বলেন, ‘সাপ্লায়াররা সবকিছুর দাম বাড়িয়েছেন। রেস্টুরেন্টের কাঁচামালের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে টেইকওয়েতে অ্যাপসগুলোর চার্জ মিলিয়ে দিন শেষে আমাদের হাতে কিছুই নেই। আমরা তো মেনুতে দাম বাড়াতে পারি না।’ কথা হয় বাংলাদেশি কারি রেস্টুরেন্টের একজন নিয়মিত কাস্টমার রোলান্ড হকিন্সের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে বের হওয়াই তো কঠিন। এ সময় ইট আউটের স্কিমের জন্য অন্তত সপ্তাহে এক দিন বের হচ্ছি। এটি আমাদের অর্থনৈতিকভাবে সহায়তা করছে।’ বিসিএর সভাপতি এম এ মুনিম। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে বিসিএ সাংগঠনিকভাবে হসপিটালিটি সেক্টরের ভ্যাট ৫ শতাংশে নিয়ে আসার জন্য নানা ধরনের কার্যক্রম করেছে। বাংলাদেশি আরও অনেক সংগঠন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে হয়তো এটি নিয়ে লবিং করেছেন। আমাদের সঙ্গে টার্কিশ অ্যাসোসিয়েশনও যৌথভাবে এটি নিয়ে সরকারের সঙ্গে লবিং করেছে। এটি যাতে ছয় মাস নয়, সারা বছরই বরাদ্দ থাকে সেটি নিয়েও সরকারের সঙ্গে লবিং করে যাচ্ছি।’ ব্রিটেনের কারি ইন্ডাস্ট্রির মূলধারার ত্রৈমাসিক কারি লাইফ ও কারি শেফ ম্যাগাজিনের চিফ এডিটর সৈয়দ নাহাস পাশা বলেন, ‘সরকার হসপিটালিটি সেক্টরকে বাঁচানোর জন্য যেসব স্কিম করেছে, সেগুলো যদি আমাদের রেস্টুরেন্ট মালিকরা ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে যে সংকটের ভিতর দিয়ে আমরা চলছি তা অতিক্রম করতে পারব।’ সৈয়দ নাহাস পাশাও এম এ মুনিমের মতো আশা প্রকাশ করেন, ভ্যাট ৫ শতাংশের বিষয়টি যেন হসপিটালিটি সেক্টরের জন্য সব সময়ই বহাল থাকে।

 

সর্বশেষ খবর